পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৫৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রজনী এই জগৎ, জ্যোতিময় কান্তর পদ্ধর দেবযোনির মাত্তিতে পরিপািণ ; তাহারা অবিরত অশবরপথ প্রভাসিত করিয়া বিচরণ করিতেছ; তাহাদিগের অঙ্গের সৌরভো আমার নাসারন্ধু পরিপািণ হইতেছে। কিন্তু যাহাঁই দেখি না—সকলের মধ্যস্থলে রজনীর সেই প্রস্তরময়ী মাত্তি দেখিতে পাইতাম। হায় রজনি ! পাথরে এত আগান ! ধীরে, রজনি, ধীরে! ধীরে, ধীরে, রজনি, ঐ অন্ধ নয়ন উন্মীলিত কর। দেখ, আমায় দেখ, আমি তোমায় দেখি! ঐ দেখিতেছি—তোমাব নয়নপদ্ম ক্লামে প্রস্ফটিত হইতেছে-ক্ৰমে, ক্ৰমে, ক্ৰমে, ধীরে, ধীরে, ধীরে, ধীরে নয়নরাজীব ফাটিতেছে! এ সংসারে কাহার না নয়ন আছে ? গো, মেষ, কুক্কর, মাজুজার, ইহাদিগেরও নয়ন আছে—তোমার নাই ? নাই নাই, তবে আমারও নাই! আমিও আর চক্ষ চাহিব না। সপতম পরিচ্ছেদ ঃ লবঙগলতার কথা আমি জানিতাম, শচীন্দ্র একটা কান্ড করিবে--ছেলে বয়সে অত ভাবিতে আছে ? দিদি ত একবার ফিরে চেয়েও দেখেন না—আমি বলিলে বিমাতা বলিয়া আমার কথা গ্রাহ্য করে না। ও সব ছেলেকে আটিয়া” উঠা ভার। এখন দায় দেখিতেছি আমার। ডাক্তার বৈদ্য কিছ করিতে পারিল না—-পরিবেও না । তারা রোগই নিণয় করতে জানে না। রোগ হলো মনে-হাত দেখিলে, চোখ দেখিলে, জিব দেখিলে তারা কি বঝিবে ? যদি তারা আমার মত আড়ালে ল্যুকাইয়া বসিয়া আড়ি পেতে ছেলের কান্ড দেখাত, তবে একদিন রোগের ঠিকানা করিলে করিতে পারিত। কথাটা কি ? “ধীরে, রজনী!” ছেলে ত একেলা থাকিলেই এই কথাই বলে । সন্ন্যাসী ঠাকুরের ঔষধে কি এই ফল ফলিল ? আমার মাথা খাইতে কেন আমি এমন কাজ করিলাম ? ভাল, রজনীকে একবার রোগীর কাছে বসাইয়া রাখিলে হয় না ? কই, আমি রজনীর বাড়ী গিয়াছিলাম, সে ত সেই অবধি আমার বাড়ী একবারও আসে নাই ! ডাকিয়া পাঠাইলে না। আসিয়া থাকিতে পরিবে না। এই ভাবিয়া আমি রজনীর গহে লোক পাঠাইলাম—বলিয়া পাঠাইলাম যে, আমার বিশেষ প্রয়োজন আছে, একবার আসিতে বলিও । মনে করিলাম, আগে একবার শচীন্দ্রের কাছে রজনীর কথা পাড়িয়া দেখি। তাহা হইলে বঝিতে পারিব, রজনীর সঙ্গে শচীন্দ্রের পীড়ার কোন সম্মবন্ধ আছে কি না ? অতএব প্রকৃত তত্ত্ব জানিবার জন্য। শচীন্দ্রের কাছে গিয়া বসিলাম । এ কথা ও কথার পর রজনীর প্রসঙ্গ ছলে পাড়িলাম। আর কেহ সেখানে ছিল না। রজনীর নাম শনিবা মাত্র বাছা অমনি, চমকিত হংসনীর ন্যায় গ্রীবা তুলিয়া আমার মািখপ্রতি চাহিয়া রহিল। আমি যত রজনীর কথা বলিতে লাগিলাম, শচীন্দ্র কিছই উত্তর করিল না, কিন্তু ব্যাকুলিত চক্ষে আমার প্রতি চাহিয়া রহিল। ছেলে বড় অস্থির হইয়া উঠিল—এটা পাড়ে, সেটা ভাঙ্গে, এরােপ আরম্ভ করিল। আমি পরিশেষে রজনীকে তিরস্কাপ করিতে লাগিলাম ; সে অত্যন্ত ধনলকধা, আমাদিগের পৰ্ব্ববর্তকৃত উপকার কিছমাত্র সমরণ করিল না। এই রােপ কথাবাত্তা শনিয়া শচীন্দ্র অপ্ৰসন্ন ভাবাপন্ন হইলেন, এমন আমার বোধ হইল, কিন্তু কথায় কিছর প্রকাশ পাইল না। নিশ্চয় বঝিলাম, এটি সন্ন্যাসীর কীৰ্ত্তি । তিনি এক্ষণে স্থানান্তরে গিয়াছিলেন, অলপদিনে আসিবার কথা ছিল। তাঁহার প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। কিন্তু তাহাও মনে ভাবিতে লাগিলাম যে, তিনিই বা কি করিবেন ? আমি নিকেবােধ দীরাকাঙক্ষাপরবশ সত্ৰীলোক—ধনের লোভে অগ্র পশ্চাৎ না ভাবিয়া আপনিই এই বিপত্তি উপস্থিত করিয়াছি! তখন মনে জানিতাম যে, রজনীকে নিশ্চয়ই পত্রিবধ করিব। তখন কে জানে যে, কাণা ফলওয়ালীও দলভ হইবে ? কে জানে যে, সন্ন্যাসীর মন্ত্রেীষধে হিতে বিপরীত হইবে ? সত্ৰীলোকের বন্ধি অতি ক্ষদ্র, তাহা জানিতাম না; আপনার বন্ধির অহঙ্কারে মজিলাম। আমার এমন বন্ধি হইবার আগে, আমি মরিলাম না কেন ? এখন ইচ্ছা হইতেছে মরি, কিন্তু শচীন্দ্ৰবাবর আরোগ্য না দেখিয়া মরিতে পারিতেছি না। কিছ দিন পরে কোথা হইতে সেই পািকব পরিচিত সন্ন্যাসী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তিনি বলিলেন, তিনি শচীন্দ্রের পীড়া শনিয়া দেখিতে আসিয়াছেন। কে তাঁহাকে শচীন্দ্রের পীড়ার সংবাদ দিল, তাহা কিছ বলিলেন না। 6 ONS