পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রাজসিংহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও আবার কোন বেগম ? হিন্দ বোধ হইতেছে-সেলাম না করিয়া, আমাদের প্রণাম করিল।” মাণিকলাল দেখিয়া উচ্চহাস্য করিলেন। বলিলেন, “মহারাজ ! ও একটা বাঁদনী— ওটা বেগম হইল কি প্রকারে ? উহাকে ধরিয়া আনিতে হইবে।” এই বলিয়া মাণিকলাল, হকুম দিয়া, নিৰ্ম্মলকুমারীকে হাতীর উপর হইতে নামাইয়া আপনার নিকট আনাইল । নিৰ্ম্মমল কথা না কহিয়া হাসিতে আরম্ভ করিল। মাণিকলাল জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি ? তুমি বেগম হইলে কবে ?” নিম্পমাল, মািখ চোখ ঘরাইয়া বলিল, “মেয়নে হজরৎ ইমলি বেগম। তসলিম দে।” মাণিকলাল। তা না হয় দিতেছি—বেগম ত তুমি নও জানি; তোমার বাপ দাদাও কখনও বেগম হয় নাই—কিন্তু এ বেশ কেন ? নিৰ্ম্মমল। পহেলা মেরা হকুম তামিল করা—বাজে বাত আবহি রাখা। মাণিকলাল। সীতারাম ! বেগম সাহেবার ধমক দেখা ! নিৰ্ম্মমল। হামারি হকুম যেহি হৈ কি হজরৎ উদিপত্রী বেগম সাহেবা সামনেকা পঞ্জকলসদার হাওদাওয়ালে হাথিপির তশরিফ রাখতেী হোই। উনাকো হামারা হােজর মে হাজির করা। বলিতে বিলম্পব সহিল না-মাণিকলাল তখনই উদিপরীকে হাতী হইতে নামাইতে বলিল । উদিপরী অবগঠনে মািখ আবিত করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে নামিল। মাণিকলাল একখানা দোলা খালি করিয়া, সে দোল উদিপরেীর হাতীর কাছে পাঠাইয়া দিয়া, দোলায় চড়াইয়া উদিপরীকে লইয়া আসিল। তার পর মাণিকলাল, নিৰ্ম্মলকুমারীকে কাণে কাণে বলিল, “জী হামলী বেগম সাহেবা! আর একটা কথা—” নিৰ্ম্মল। চুপা রহ, বেতমিজ! মেরে নাম হজরৎ ইমলি বেগম। মাণিক । আচ্ছা, যে বেগমই হও না কেন, জেব-উন্নিসা বেগমকে চেন ? নিম্পমাল। জানতে নেহিন ? বহা হামারি বেটী লাগতী হৈ। দেখ, আগাড়ী সোনেক তিন কলস যো হাওদে পর জলষ দেতা হ্যায়, বসপির জেব-উন্নিসা বৈঠী হৈ। মাণিকলাল তাঁহাকেও হাতী হইতে নামাইয়া দোলায় তুলিয়া আসিলেন। সেই সময়ে আবার কোন মহিষী হাওদার জরির পরদা টানিয়া মািখ বাহির করিয়া, নিৰ্ম্মলকুমারীকে ডাকিল। মাণিকলাল নিম্পমালকে জিজ্ঞাসা করিল, “আবার তোমাকে কে ডাকিতেছে না ?” নিৰ্ম্মমল দেখিয়া বলিল, “হাঁ যোধপরী বেগম। কিন্তু উহাকে এখানে আনা হইবে না। আমাকে হাতীর উপর চড়াইয়া উহার কাছে লইয়া চল। শনিয়া আসি।” মাণিকলাল তাঁহাই করিল। নিৰ্ম্মমলকুমারী যোধপরীর হাতীর উপর উঠিয়া তাঁহার ইন্দ্রাসনতুল্য হাওদার ভিতর প্রবেশ করিল। যোধপরী বলিলেন, “আমাকে তোমাদের সঙ্গে লইয়া চল ।” নিম্পমালা। কেন মা ? যোধপরী। কেন, তা ত কতবার বলিয়াছি। আমি এ স্লেচ্ছপরীতে, এ মহাপাপের ভিতর আর থাকিতে পারি না। নিম্পমাল। তাহা হইবে না। তোমার যাওয়া হইবে না। আজ যদি মোগল সাম্রাজ্য টিকে, তবে তোমার ছেলে দিল্লীর বাদশাহ হইবে । আমরা সেই চেন্টা করিব। তাঁর রাজত্বে আমরা সখে থাকিব। যোধপরী। অমন কথা মখে আনিও না, বাছা! বাদশাহ শানিলে, আমার ছেলে এক দিনও বাঁচিবে না। বিষপ্রয়োগে তাহার প্রাণ যাইবে। নিৰ্ম্মল। এখনকার কথা বলিতেছি না। যাহা শাহজাদার হক, কালে তিনি পাইবেন। আপনি আমাকে আর কোন আজ্ঞা করিবেন না। আপনি যদি আমার সঙ্গে এখন যান, আপনার পত্রের অনিস্ট হইতে পারে। যোধপরী ভাবিয়া বলিল, “সে কথা সত্য। তোমার কথাই শানিলাম। আমি যাইব না। তুমি যাও।” নিৰ্ম্মলকুমারী তখন তাঁহাকে প্ৰণাম কািরয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন। Wり切"> 88