পাতা:বঙ্কিম রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).pdf/৭০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ब७दक ब्रष्नाबव्ी নও প্রাণনাথ! আমায় তুমি যা বলিয়া ভূলাও, আমি ভুলিব না। আমি তোমার; আবার তোমায় ছাড়িব না।” তখন জেব-উন্নিসা সহসা পালঙক হইতে নামিয়া, মবারকের পায়ের উপর পড়িল ; বলিল, “আমায় ক্ষমা কর! আমি ঐশবয্যের গৌরবে। পাগল হইয়াছিলাম। আমি আজ শপথ করিয়া ঐশবষয্য ত্যাগ করিলাম—তুমি যদি আমায় ক্ষমা কর, আমি আর দিল্লী ফিরিয়া যাইব না। বল তুমি জীবিত ?” মবারক দীঘ নিশবাস ত্যাগ করিয়া বলিল, “আমি জীবিত। একজন রাজপত আমাকে কবর হইতে তুলিয়া চিকিৎসা করিয়া প্ৰাণদান দিয়াছিল, তাহারই সঙ্গে আমি এখানে আসিয়াছি।” জেব-উন্নিসা পা ছাড়িল না। তাহার চক্ষর জলে মবারকের পা ভিজিয়া গেল। মবারক তাহার হাত ধরিয়া উঠাইতে গেল। কিন্তু জেব-উন্নিসা উঠিল না; বলিল, “আমায় দয়া কর, আমায় ক্ষমা কর । ” মবারক বলিল, “তোমায় ক্ষমা করিয়াছি। না করিলে, তোমার কাছে আসিতাম না।” জেব-উন্নিসা বলিল, “যদি আসিয়াছ, যদি ক্ষমা করিয়াছ, তবে আমায় গ্রহণ করা। গ্ৰহণ করিয়া, ইচ্ছা হয় আমাকে সাপের মখে সমপণ কর, না ইচ্ছা হয়, যাহা বল, তাহাই করিব। আমায় আর ত্যাগ করিও না। আমি তোমার নিকট শপথ করিতেছি যে, আর দিল্লী যাইতে চাহিব না ; আলমগীর বাদশাহের রঙমহলে আর প্রবেশ করিব না। আমি শাহজাদা বিবাহ করিতে চাহি না । তোমার সঙেগ যাইব ।” মবারক সব ভুলিয়া গেল।--সপদংশনজবালা ভুলিয়া গেল—আপনার মরিবার ইচ্ছা ভুলিয়া গেল—দরিয়াকে ভুলিয়া গেল। জেব-উল্লিসার প্রীতিশান্য অসহ্য বাক্য ভুলিয়া গেল। কেবল জেব-উন্নিসার অতুল রািপরাশি তাহার নয়নে লাগিয়া রহিল ; জেব-উন্নিসার প্ৰেমপরিপািণ কাতরোক্তি তাঁহার কণমধ্যে ভ্ৰমিতে লাগিল ; শাহজাদীর দপ চণিত দেখিয়া তাহার। মন গলিয়া গেল। তখন মবারক জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি কি এখন এই গরিবকে স্বামী বলিয়া গ্রহণ করিতে সক্ষমত ?” জেব-উন্নিসা যন্ত করে, সজল নয়নে বলিল, “এত ভাগ্য কি আমার হইবে ?” বাদশাহজাদী আর বাদশাহজাদী নহে, মনিষী মাত্র। মবারক বলিল, “তবে নিভয়ে, নিঃসঙ্কোচে, আমার সঙ্গে আইস।” আলো জবালিবার সামগ্রী তাঁহার সঙ্গে ছিল। মবারক আলো জবালিয়া ফানসের ভিতর রাখিয়া বাহিরে আসিয়া দাঁড়াইলেন। তাঁহার কথামত জেব-উন্নিসা বেশভূষা করিলেন। তাহা সমাপন হইলে, মবারক তাঁহার হাত ধরিয়া লইয়া কক্ষের বাহিরে গেলেন । তথা প্ৰহারিণীগণ নিযন্ত ছিল। তাহারা মবারকের ইঙ্গিতে দাই জনে মবারক ও জেব-উন্নিসার সঙ্গে চলিল। মবারক যাইতে যাইতে জেব-উন্নিসাকে বঝাইলেন যে, রাজাবরোধ মধ্যে পরিষের আসিবার উপায় নাই। বিশেষ মসলমানের ত কথাই নাই। এই জন্য তিনি রাত্ৰিতে আসিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাও মহারাণীর বিশেষ অনগ্রহেই পাবিয়াছেন, এবং তাই এই প্ৰহারিণীদিগের সাহায্য পাইয়াছেন। সিংহদ্বারা পৰ্য্যন্ত তাঁহাদের হাঁটিয়া যাইতে হইবে। বাহিরে মবারকের ঘোড়া এবং জেব-উন্নিসার জন্য দোলা প্রস্তুত আছে। প্রহরিণীদিগের সাহায্যে সিংহদ্বারের বাহির হইয়া, তাঁহারা উভয়ে সব সম্ভব যানে আরোহণ করিলেন। উদয়পরেও দই চারি জন্য মসলমান সওদাগরী ইত্যাদি উপলক্ষে বাস করিত। তাহারা রাণার অননুমতি লইয়া নগরপ্রান্তে একটি ক্ষদ্র মসজীদ, নিম্পমাণ করিয়াছিল। মবারক জেব-উন্নিসাকে সেই মসজীদে লইয়া গেলেন। সেখানে একজন মোল্লা ও উকীল ও গোওয়া ভুক্তি ছিল। তাহদের সাহায্যে মবারক ও জেব-উন্নিসার সারা মত পরিণয় সম্পাদিত তখন মবারক বলিলেন, “এখন তোমাকে যেখান হইতে লইয়া আসিয়াছি, সেইখানে রাখিয়া আসিতে হইবে। কেন না, এখনও তুমি মহারাণার বন্দী। কিন্তু ভরসা করি, তুমি শীঘ্র মাক্তি পাইবে।” এই বলিয়া মবারক জেন-উন্নিসাকে পনববার তাঁহার শয্যাগহে রাখিয়া গেলেন। COO