ত্ৰয়োদশ পরিচ্ছেদ মােরলা চলিয়া গেলে, গঙ্গারাম চাবি দিকে আরও অন্ধকার দেখিতে লাগিলেন। যাহার জন্য তিনি এই বিপদ সাগরে ঝাঁপ দিতেছেন, সে ত তাঁহার অন্যরাগিণী নয়। তিনি চক্ষ বজিযা সমদ্রমধ্যে ঝাঁপ দিতেছেন, সমদ্রতলে রত্ন মিলিবে কি ? না, ডুবিয়া মরাই সার হইবে ? আধার । চারিদিকে অাঁধাের । এখন কে তাঁকে উদ্ধার করিবে ? সহসা গঙ্গারামের শরীর রোমাণি9ত হইল। দেখিলেন, দবারদেশে প্রভাতনক্ষত্রোক্তজবলরাপিণী ত্ৰিশািলধারিণী ভৈরবীমত্তি । অঙ্গপ্রভায় গাহস্থিত প্ৰদীপের জ্যোতি মিলান হইয়া গেল। সাক্ষাৎ ভবানী ভূতলে অবতীর্ণ মনে করিয়া, গঙগারামও মরালার ন্যায় প্রণত হইয়া জোড়হাত করিয়া দড়িাইল । বলিল, “মা, দাসের প্রতি কি আজ্ঞা ?” জয়ন্তী বলিল, “বাছা । তোমার কাছে কিছ, ভিক্ষার জন্য আসিয়াছি।” ভৈরবীর কথা শনিয়া গঙ্গারাম বলিল, “মা । আপনি যাহা চাহিবেন, তাহাই দিব । আজ্ঞা করবেন।” জয়ন্তী। আমাকে এক গাড়ি গোলা-বারােদ দাও । আর একজন ভাল গোলন্দাজ দাও । গঙগারাম ইতস্ততঃ করিতে লাগিল—কে এ সি জিজ্ঞাসা করিল, ”মা! আপনি গোলাবাবদ লইয়া কি কবিবেন ?” জয়ন্তী ! দেবতার কাজ । গঙ্গারামের মনে বড় সন্দেহ হইল। এ যদি কোন দেবী হইবে, তবে গোলা-গলি ইহার প্রয়োজন হইবে কেন ? যদি মানষিী হয়, তবে ইহাকে গোলা-গলি দিব কেন ? কাহার চর তা কি জানি ? এই ভাবিয়া গঙ্গারাম জিজ্ঞাসা করিল, “মা! তুমি কে ?” জয়ন্তী। আমি যে হই, রমা ও মরালা ঘটিত সংবাদ আমি সব জানি। তা ছাড়া তোমার ভূষণাগমন-সংবাদ ও সেখানকার কথাবাত্তার সংবাদ আমি জানি। আমি যাহা চাহিতেছি, তাহা এই মহত্তে আমাকে দাও, নচেৎ এই ত্ৰিশ লাঘাতে তোমাকে বধ করিব। এই বলিয়া সেই তেজস্বিনী ভৈরবী উক্তজবল ত্ৰিশলি উত্থিত করিয়া আন্দোলিত করিল। গঙ্গারাম একেবারে নিবিন্যা গেল। ‘আসন দিতেছি।” বলিয়া ভৈরবীকে সঙ্গে করিয়া অস্ত্রাগারে গেল। জয়ন্তী যাহা যাহা চাহিল, সকলই দিল, এবং পিয়ারীলাল নামে একজন গোলন্দাজকে সঙ্গে দিল। জয়ন্তীকে বিদায় দিয়া গঙগারাম দাগ দেবার বন্ধ রাখিতে আজ্ঞা দিলেন। যেন তাঁহার বিনানন্মতিতে কেহ যাইতে আসিতে না পারে। জয়ন্তী ও শ্ৰী গোলা-বারােদ লইয়া, গড়ের বাহির হইয়া যেখানে রাজবাড়ীর ঘাট সেইখানে উপস্থিত হইল। দেখিল, এক উন্নতিবপ সািন্দরকান্তি পােরষি তথা বসিয়া আছেন। দাই জন ভৈরবীর মধ্যে একজন ভৈরবী বারদ, গোলার গাড়ি ও গোলন্দাজকে সঙেগ লইয়া কিছর দরে গিয়া দাঁড়াইল, আর একজন সেই কান্তিমান পরিষের নিকট গিয়া তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, ”তুমি কে ?” সে বলিল, “আমি যে হই না। তুমি কে ?” জয়ন্তী বলিল, “যদি তুমি বীরপরিষ হও, এই গোলাগলি আনিয়া দিতেছি—এই পরী রক্ষা কর । ” সে পবিষে বিস্মিত হইল, দেবতােদ্রমে জয়ন্তীকে প্ৰণাম করিল। কিছশক্ষণ ভাবিয়া, দীঘনিশবাস ত্যাগ করিল। বলিল, “তাতেই বা কি ?” জয়ন্তী। তুমি কি চাও ? পরষ। যা চাই, পরী বক্ষা করিলে তা পাইব ? জয়ন্তী। পাইবে । এই বলিয়া জয়ন্তী সহসা আদশ্য হইল। R ܠ ܬ
