পাতা:বঙ্গদর্শন-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ፃፃ তেছ?” করালী কহিলেন, “জানালায় এক বিকৃতাকার মনুষ্য দেখিয়াছি—তাহকেই।” মধুমতী কহিলেন, “আমি তাহকে চিনি—ঘরে চল, বলিতেছি।” মধুমতী, করাণীর পশ্চাৎ২ তাহার শব্যামৃহে আসিলেন। তথায়, করাণী পালঙ্গের উপর, চরণ লম্বিত করিয়া বসিলেন। মধুমতী তাহার চরণ তলে বসিয়া, তাহার চরণ গ্রহণ করিয়া, নীরব হইয়া রহিলেন । করালী বিস্মিত হইলেন—বলিলেন “ কে সে ?” দেখিলেন, মধুমতী কাদিতেছে। মধুমতী বলিলেন, “তুমি আমার জীবন দান করিয়াছ—আমি তোমার নিকট যে ঋণে ঋণী মমুষ্যে তাহা শোধ করিতে পারে না। তাহার শোধ দূরে থাক, আমি তাহার পরিবর্তে গুরুতর অপরাধ করিয়াছি—তাহার প্রায়শ্চিত্ত নাই । তোমার কাছে আমার এই ভিক্ষণ—যে জীবন তুমি রক্ষা করিয়াছিলে—তাহ! আবার নষ্ট কর —চিকিৎসা শাস্ত্রে কি তাহার উপায় नाहे ?” করালী অবাক্ হইলেন,—বলিলেন, “এসকল কথা কেন ? কে সে ব্যক্তি?” মধুমতী শুষ্ক কষ্ঠে, রোদনে মুখবৎ নিঃস্বাসে পুৰ্ব্ব স্থতি পুনরুদয়ের কথা বলিলেন। চিকিৎসাশাস্থে পটু কমলী সে বৃত্তাস্ত বুঝিলেন এবং বিশ্বাস করিলেন। তার পর মধুমতী বলিতে লাগিলেন, “তখন আমার সকল স্মরণ হইল। তখন মনে পড়িল, যে আমি যে তোমার নিকট বলিয়ছিলাম, আমি বিধবা, সে মিথ্যা কথা। আমি সধবা। আমি লালগোপাল দত্তের স্ত্রী। তিনি আজিও জীবিত আছেন। এখন ধাহাকে দেখিয়াছিলে, | তিনিই আমার সেই পুৰ্ব্ব স্বামী।” এই বলিয়া মধুমতী কিয়ৎকাল স্তম্ভিতা হইয়া রহিলেন। কারালীও নীরব হইয়া রছিলেন। মধুমতী পুনরপি বলিতে লাগিলেন, “ যে গীত শুনিয়া আমার সব মনে পড়িল, তাহা তিনি অহরহঃ গাইতেন। আমি তাহা অহরহঃ শুনিতে ভাল বাসিতাম—সে গীত আমার হাড়ে২ অঙ্কিত ছিল। পরদিন তিনি আসিয়া সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন।” এই বলিয়া মধুমতী নিরস্ত হইলেন। কারালী কিছু বলিলেন না। অনেকক্ষণ নীরবে বসিয়া বসিয়া উঠিয়া গেলেন। পৃথক শয়ন গৃহে গিয়া দ্বার রুদ্ধ করিলেন। করালীও দ্বার রুদ্ধ করিয়া শয়ন করিলেন। পর দিন উভয়ে উভয়ের সহিত সাক্ষাৎ করিলেন না । ইচ্ছাপূৰ্ব্বকই সাক্ষাৎ করিলেন না। বিশেষ করালী অত্যন্ত ধৰ্ম্মভীত; তিনি বুধিয়াছিলেন, যে অন্ত স্বামী বৰ্ত্তমানে তাহার সহিত আদরিণীর বিবাহ ধৰ্ম্মতঃ বিবাহ নহে। এবং আদরিণী তাহার ধৰ্ম্মপত্নী নহে । সে স্থানে তাহার সহিত সহবাস ঘোর পাপাচার। এদিকে মধুমতীর সহবাস পরিত্যাগ অপেক্ষাৎ প্রাণ পরিত্যাগ সহজ । তিনি কৰ্ত্তব্যবিমূঢ় হইয়া সমস্ত দিন দ্বার রুদ্ধ করিয়া কাদিতে লাগিলেন । এদিকে সন্ধ্যা অতীত হইয়া চারি পাঁচ