পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/১২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*२४é ] রাজসিংহ Ys?» নিৰ্ম্মল । দিল্লীর পথে তবে আমায় দেখিবে । চঞ্চল। সে কি নিৰ্ম্মল ? কি প্রকারে তুমি যাইবে ? নিৰ্ম্মল কিছু বলিল না। চঞ্চলের গলা ধরিয়া কাদিল । চঞ্চলকুমারী বেশভূষা সমাপন করিয়া মহাদেবের মন্দিরে গেলেন। নিত্য ব্ৰত শিবপূজা ভক্তিভাবে করিলেন। পূজান্তে বলিলেন, “দেব দেব মহাদেব ! মরিতে চলিলাম। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি বালিকার মরণে তোমার এত তুষ্টি কেন ? প্রভো ! আমি বঁচিলে কি তোমার সৃষ্টি চলিত না ? যদি এতই মনে ছিল, কেন আমাকে রাজার মেয়ে করিয়া সংসারে পাঠাইয়াছিলে ?” মহাদেবের বন্দনা করিয়া চঞ্চলকুমারী মাতৃচরণ বন্দনা করিতে গেলেন। মাতাকে প্রণাম করিয়া চঞ্চল কতই কাদিল । পিতার চরণে গিয়া প্ৰণাম করিল। পিতাকে প্রণাম করিয়া চঞ্চল কতই কঁাদিল । তার পর একে একে সখীজনের কাছে, চঞ্চল বিদায গ্রহণ কবিল । সকলে কাদিয়া গণ্ডগোল করিল। চঞ্চল কাহাকে অলঙ্কাব, কাঙ্গকে খেলেন, কাহাকে অর্থ দিয়া পুরস্কৃত করিলেন। কাহাকে বলিলেন, “কাদি ও না ; আমি আবার আসিব । কাহাকে বলিলেন, “কাদিও না ; দেখিতেছ না, আমি পৃথিবীশ্বরী হইতে যাইতেছি ?” কাহাকেও বলিলেন, “কাদিও না— কাদিলে যদি দুঃখ যাইত ; তবে আমি কঁাদিয়া রূপনগরের পাহাড় ভাসাইতাম ।” • সকলের কাছে বিদায় গ্রহণ করিয়া, চঞ্চলকুমারী শিবিকারোহণে চলিলেন । এক সহস্ৰ অশ্বারোহী সৈন্য শিবিকার অগ্ৰে স্থাপিত হইয়াছে ; এক সহস্ৰ পশ্চাতে । রজতমণ্ডিত, রত্নখচিত সে শিবিক, বিচিত্র সুবর্ণ খচিত বস্ত্রে আবৃত হইয়াছে , আশা সোটা লইয়া চোপদার বাক্‌জালে গ্রাম্যদর্শকবর্গকে কৌতুহলী করিতেছে । চঞ্চলকুমারী শিবিকায় আরোহণ করিলেন । তুর্গমধ্য হইতে শঙ্খ নিনাদিত হইল ; কুসুম ও লাঞ্জাবলিতে শিবিক পরিপূর্ণ হইল ; সেনাপতি চলিবার আজ্ঞা দিলেন ; তখন অকস্মাৎ মুক্তপথ ভড়াগের জলের স্তায় সেই অশ্বারোহীশ্রেণী প্রবাহিত হইল ; বলগা দংশিত করিয়া নাচিতে নাচিতে, অশ্বশ্রেণী চলিল—অশ্বারোহীদিগের অস্ত্রের ঝঞ্জনা ৰাজিল । অশ্বারোহীগণ প্রভাত বায়ু প্রফুল্ল হইয়া কেহ কেহ গান করিতেছিল। শিবিকার পশ্চাতেই যে, অশ্বারোহীগণ ছিল, তাহার মধ্যে অগ্রবর্তী একজন গায়িতেছিল—যাহা গায়িতেছিল, তাহার অনুবাদ যথা— বারে ভাৰি দূরে সে যে সতত নিকটে। প্রাণ গেলে তবু সে ষে রাখিৰে শঙ্কটে ।