পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

કરીન્દ ] প্রাচীন ভারতবর্ষ Sát ভারতবর্ষের নগর অসংখ্য বলিয়া বর্ণিত। যে সকল নগর নদীতীরে বা সাগরোপকুলে অবস্থিত, সে সকল প্রায় কাষ্ঠনিৰ্ম্মিত ; যে সকল পাহাড় বা উচ্চস্থলে অবস্থিত, সে সকল ইষ্টক ও মৃত্তিক নিৰ্ম্মিত। মেগাস্থিনিসের সময়ে ভারতবর্ষের সর্বপ্রধান নগর পাটলীপুত্র প্রাচ্যরাজ্যে গঙ্গা ও হিরণ্যবাহ (অর্থাৎ শোণ) এই দুইয়ের সঙ্গমস্থলে অবস্থিত ছিল । ইহার বসতি দৈর্ঘ্যে আট মাইল ও প্রস্থে দেড় মাইল ছিল। সমুদয় নগর বেড়িয়া একটা গড় খাত ছিল, চারিশত হাত পরিসর ও ত্রিশ হাত গভীর। ইহার পরে চৌষট্টি তোরণবিশিষ্ট এবং পাঁচ শত সত্তর বুরুজ (Tower) সজ্জিত প্রাচীর । মেগাস্থিনিসের মতে ভারতবর্ষবাসীরা সাত শ্রেণীতে বিভক্ত ; তন্মধ্যে পদমৰ্য্যাদায় সৰ্ব্বপ্রধান তত্ত্ববিদগণ ( Philosophers )। তাহারা যাগযজ্ঞে লোকের সাহায্য করেন, এবং প্রতি বৎসরের প্রারম্ভে রাজাদিগের কর্তৃক মহাসভায় আহত হন । র্তাহাদিগের মধ্যে যদি কেহ কোন হিতকর প্রস্তাব লিখিয়া থাকেন, অথবা শস্য, পশুপালন বা সাধারণের উপকার সাধন সম্বন্ধে কোন উপায় আবিষ্কার করিয়া থাকেন, তাহা তিনি এই সভায় সৰ্ব্বসাধারণ সমক্ষে প্রকাশ করেন। যদি কেহ তিনবার মিথ্যা বিববণ প্রকাশ করিয়াছেন বলিয়া সাব্যস্ত হন, তাহাকে যাবজ্জীবন মৌনী হইয়া থাকিতে হইবে, এইরূপ দণ্ড দেওয়া হয় ; আর যিনি প্রামাণিক কথা বলেন, তিনি করভার হইতে অব্যাহতি পান । মেগাস্থিনিস বলেন যে তত্ত্ববিদগণ দুইদলে বিভক্ত, ব্রাহ্মণ ও শ্রমণ । ব্রাহ্মণেরাই সৰ্ব্বাপেক্ষা মান্ত, কারণ তাহাদিগের মতের অধিকতর সঙ্গতি আছে। গর্ভ হইতেই তাহাদিগের প্রতি বিদ্বজ্জনের যত্ন আরম্ভ হয় ; এবং বয়োবৃদ্ধিসহকারে তাহারা উত্তরোত্তর সদগুণসম্পন্ন শিক্ষকের হস্তে পড়ে। তাহারা নগরের বাহিরে পরিমিত আয়তনের উপবনে বাস করে। তাহারা কুশাসনে বা মৃগচৰ্ম্মে শয়ন করে। তাহারা মাংসাহার ও ইন্দ্রিয়মুখ হইতে বিরত থাকে এবং সারগর্ভ উপদেশ শুনিয়া ও জ্ঞান দান দিয়া সময় অতিবাহিত করে। এইরূপে সাইত্রিশ বৎসর বয়স কাটাইয়া, প্রত্যেক ব্যক্তি স্বগৃহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করে ও জীবনের অবশিষ্টাংশ মুখস্বচ্ছন্দে যাপন করে। তখন তাহারা চিৰুণ কাপাসবন্ত্র পরিধান করে এবং অঙ্গলে ও কর্ণেও স্বর্ণাভরণ ধারণ করে ; মাংস খায়, কিন্তু সমসহায় জীবের নহে ; এবং অধিকসংখ্যক সন্তানের আশায় যত ইচ্ছা তত বিবাহ করে। পাঠকগণ দেখিবেন যে মেগাস্থিনিস হিন্দু বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের লোকই দেখিয়াছিলেন ; কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণদিগকেই অধিকতর শ্রদ্ধাস্পদ বলিয়া জানিতেন । ব্রাহ্মণদিগের সম্বন্ধেও তিনি ভ্রমে পতিত হইয়াছিলেন। তিনি ব্রহ্মচৰ্য্য ও বানপ্রন্থ এই দুই আশ্রমের ভেদ বুঝিতে পারেন নাই। যে ব্যক্তি সাঁইত্রিশ বৎসর