পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/২৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ক সময়ে কাঞ্জির বিচার এ দেশে যেরূপ উপহাস্য হইয়াছিল, এক্ষণে জুরীর বিচার সেইরূপ হইয়াছে। যাহাদিগের উপকার হইবে বলিয়া এই বিলাতী বিচার বাঙ্গালায় আনীত হইয়াছে, তাহারা সে উপকাব স্বীকার করে না, বরং মধ্যে মধ্যে সেই বিচার লইয়া উপহাস কবে । কেন জুরীর বিচারে লোকের শ্রদ্ধা নাই তাহা একবার আলোচনা করা যাউক । বহুকাল হইল এক সময়ে জুরীর বিচার ইংলণ্ডদেশে লোকের মনোরঞ্জন করিয়াছিল। তৎকালে ভূম্যধিকার লার্ড ও সাধারণ কমনারদিগের মধ্যে পরস্পর বড় বিদ্বেষভাব ছিল। কাজেই একের বিচার অপরে করিলে সুবিচার হইত না । তুংকালে বিচাৰকাৰ্য্য কেবল লার্ডদিগের হস্তে ছিল, অতএব সাধারণের প্রতি সৰ্ব্বদাই অত্যাচাব হইত। এই অবস্থায় রাজাজ্ঞা হইল যে, আসামীরা স্বশ্রেণীস্থ লোকের দ্বারা বিচারিত হইবে, অর্থাৎ কোন জমিদার লার্ড সাহেব অপরাধ করিলে অন্য লার্ড সাহেবেরা তাহার বিচার করিবেন এরং কোন সাধারণ লোক অপরাধী হইলে সাধারণ লোকে তাহার বিচার করিবে । এই রাজাজ্ঞায় সাধারণ লোকের বড় সন্তোষ হইল ; তাহারা বিদ্বেষী বিচারকগণের হস্ত হইতে রক্ষা পাইল । এক্ষণে তাহাদের বিচার তাহারা আপনারা করিবে । জুরীর বিচারে কাজেই সাধারণের মনোরঞ্জন হইল। মনোবঞ্জন হউক, কিন্তু তাতাতে অবিচার রহিত হইল না, পুরুষানুক্রমে যে ব্যক্তি আসামীর সহিত একত্রে অত্যাচার সহ করিয়া আসিয়াছে সে ব্যক্তি বিচারক হইলে স্বগণের স্বপক্ষ হইবে ইহার আর আশ্চৰ্য্য কি ? স্বপক্ষতা হেতু নূতন বিধি অনুসারে অপরাধীরা অব্যাহতি পাইতে লাগিল। পূৰ্ব্বে বিপক্ষবিচারক দ্বারা আসামীরা বিনা অপরাধে দণ্ড পাইত, এক্ষণে স্বপক্ষবিচারকদ্বারা অপরাধীরা নির্বিবয়ে খালাস পাইতে লাগিল। অবিচার রছিল, কিন্তু অত্যাচার গেল। অপরাধীরা খালাস পাইতে লাগিল, কিন্তু নিরপরাধীরা আর দণ্ড পাইল না। তাৎকালিক অবস্থায় এই যথেষ্ট হইয়াছিল। এই বিচার