পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

કરાના ] জটাধারীর রোজজামচ (fêr@ যে সময় গ্রামে গোলযোগ হইতেছে, বাবুদের ফটকে ঢং ঢং করিয়া বারটা বাজিল ও তারপর পাহারাদার ঘন ঘন ঘড়িতে মুদগর প্রহারে যেন নিষ্ঠুর নিশার বক্ষে কতকগুলি আঘাতু করিল, তাহার গোলে গোল মিশাইল। বোধ হইল যেন ডাকাতগণ আরো নিকটে আসিতেছে। সেই ঘড়ি বাঙ্গাইবার সময় অমরেন্দ্রনাথ ঐনগর ও শাস্তিপুর-মধ্যবর্তী নদীকূলে অশ্বপৃষ্ঠে উপনীত হইয়াছেন। নদীর জল অনেক মরিয়া গিয়াছে, তথাপি গভীর, পারাপার এখনও নৌকাতেই হইয়া থাকে। কিন্তু নৌকা, নাবিক সংগ্ৰহ করিবার সময় নাই, তিনি অপর কূলে দূরে দেখিতেছেন মসলিশ্রেণী দৌড়াদৌড়ি করিতেছে “মার” “কাট” “ধর ধর” শব্দ সঙ্গে কোমলকণ্ঠ নিঃস্থত শব্দ ও ক্ৰন্দনরোল উঠিয়াছে, অবলাগণ ঘন ঘন আশ্রয় চাহিতেছে কিন্তু কোথায় আশ্রয় পাইবে ? দুই পদ অগ্রসর হয় এমন সাধ্য, এমন সাহস কার আছে ? অমরেন্দ্রনাথ আরও ব্যগ্র হইলেন। র্তাহার পর মনে হইল, যেন তাহার কাদম্বিনী কোন নৃশংস দুবৃত্তের হস্তে পতিত হইয়াছেন, যেন তাহারই কাতরোক্তি শুনিতেছেন, বিলম্ব করিবার সময় নাই, অশ্বের রজ্জ্ব ছাড়িয়া দিলেন, অশ্ব জলতরঙ্গে কাপ দিল। তীববেগে নদী পার হইয়া ঘোটকটী প্রথমে হুেষারব করিল, পরে ঘন ঘন গাত্র কাপাইয়া জলকণা সমূহ ঝাড়িয়া ফেলিল; আবার কর্ণদ্বয় পতঙ্গাকৃত করিয়া বেগে দৌড়িল। শান্তিপুর গ্রামে প্রবেশ করিবার সময় গোপাল চৌকিদার আপনাপনি বলিতেছে, “হায় ! কি হইল, আমি থাকিতে এই গ্রামে এই ঘরে এমন অত্যাচার ! লোকে চিরকাল নিমকহারাম বলবে ? কি বলিব ঘুমাইয়া ছিলাম, হস্ত পদ বান্ধিয়া খাটিয়া ঢাকা দিয়া দসু্যরা চলিয়া গিয়াছে, দেখি একবার দড়ি ছিড়িতে পারি কি না । পারি না। অতিদৃঢ় বন্ধন জোর দিতে বাগ পাইতেছি না, কেহ কি এসময় এ বন্ধন মুক্ত করে না ?”• অমরেন্দ্ৰ নাথ কাতরোক্তি শুনিবামাত্র গোপালের নিকট উপস্থিত হইয়া একটী ছুরিকাতে তাহার বন্ধনগুলি কাটিয়া দিলেন, ঘোড়াটি সেই খানেই রাখিতে কহিলেন, ও স্বয়ং পদব্রজে সিংহ বাবুদের গৃহাভিমুখে গেলেন। প্রথমতঃ বাটীর পশ্চিম পার্শ্বে উপনীত হইলেন ; এখানে ডাকাতের ঘাটি বসিয়াছে, এক একটি মশাল উত্তোলন করিয়া তাহার চারি পার্শ্বে চারটি করিয়া চোয়াড় চতুর্মুখ একস্থানে সংলগ্ন করিয়া পা ছড়াইয়া বসিয়া রহিয়াছে, চতুষ্পার্শ্বে সমভাবে নিরীক্ষণ করিতেছে। কয়েক জন ভোতা তরোয়াল বা তরবালাকৃতি তালশাখা হস্তে লম্ফ দিয়া ডাকাত খেল খেলিতেছে, হুঙ্কার ছাড়িতেছে। কিন্তু ছাদে চিলা গুহের পার্শ্বে কারনিসে অমরেন্দ্রনাথ কি দেখিলেন । নীচে মশালের আলো প্রায় সে উচ্চ স্থান স্পর্শ করে নাই, কেবল আভাস মাত্র লাগিয়াছে, তাছাত্তে দেখিতেছেন, যেন মেঘমালার ছায়াবাজির পুতুল শূন্তে আকাশপথে হেলিতেছে।