পাতা:বঙ্গদর্শন-ষষ্ঠ খণ্ড.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ડેરીના ] אי} রাজসিংহ go চঞ্চল। তার উপায় নাই—কেবল আমার সেই শেষ উপায় আছে। দিল্লীর পথে বিষভোজনে প্রাণত্যাগ—সে বিষয়ে আমি চিত্ত স্থির করিয়াছি । সুতরাং আমার আর উদ্বেগ নাই। একবার কেবল আমি পিতাকে অনুরোধ করিব—যদি মোগল সেনাপতি সাত দিনের অবসর দেন । * চঞ্চলকুমারী সময়মত পিতৃপদে নিবেদন করিলেন যে, “আমি জন্মের মত রূপনগর হইতে চলিলাম ? আমি আর কখন যে আপনাদিগের শ্রীচরণ দর্শন, করিতে পাইব, আর কখন যে বাল্যসখীগণের সঙ্গে আমোদ করিতে পাইব এমত সম্ভাবনা নাই । আমি আর সাতদিনের অবসর ভিক্ষা করি—সাতদিন মোগল সেনা এইখানে অবস্থিতি করুক। অাব সাত দিন আমি আপনাকে দেখিয়া শুনিয়া জন্মের মত বিদায় হইব ।” রাজা একটু কাদিলেন । বলিলেন, “দেখি সেনাপতিকে অনুরোধ করিব কিন্তু তিনি অপেক্ষা করিবেন কি না বলিতে পাবি না ।” রাজা অঙ্গীকাব মত মোগল সেনাপতির কাছে নিবেদন জানাইলেন। সেনাপতি ভাবিয়া দেখিলেন, বাদশাহ কোন সময় নিরূপিত করিয়া দেন নাই—বলিয়া দেন নাই যে এতদিনেব মধ্যে ফিবিযা আসিবে । কিন্তু সাত দিন বিলম্ব কবিতে তাহাব সাহস হইল না ; ভবিষ্যৎ বেগমের অনুরোধ একেবারে অগ্রাহ্য করিতেও পারিলেন না। আর তিন দিন অবস্থিত করিতে স্বীকৃত হইলেন । চঞ্চলকুমাবীব বড় একটা ভরসা জন্মিল না। নিশীথকালে নিদ্রাব ঘোবে চঞ্চলকুমারী স্বপ্ন দেখিলেন যে, রজতগিরিসল্লিভ মহাকায, বৃষভারূঢ়, স্নিগ্ধমূৰ্ত্তি, জটাজুটসমন্বিত, দেবাদিদেব মহাদেব তাহার সম্মুখে মূৰ্ত্তিমান। তিনি আজ্ঞা কবিতেছেন, “তুমি কালি হইতে ভক্তিভাবে আমাব পুজা কবিবে। সেই বৎসর মধ্যে তোমাৰ বিবাহ হইবে না। তাহার পব, উপযুক্ত সময়ে তোমার বিবাহ হইবে। যদি এক বৎসব ভক্তিভাবে পূজা কব, তবে অভীপিত স্বামী পাইবে, ভক্তির ক্রটি হইলে অনভিমত স্বামীর হস্তে পড়িবে।” এই বলিয়া মহাদেব অস্তৰ্হিত হইলেন । প্রভাতে উঠিয়, স্নান করিয়া চঞ্চলকুমাবী যত্নসঞ্চিত গঙ্গাজল লইয়া, মহাদেবের মন্দিরে প্রবেশ করিলেন। এবং প্রণাম কবত ভক্তিভাবে দেবাদিদেবের পূজা করিলেন। স্বপ্নের কথা কাহাকে বলিলেন না। যে তিনদিন রাজকুমারী রূপনগরে অবস্থিতি করিলেন, সে তিন দিন, তিনি ঐরূপে শিবপূজা করিলেন। কিন্তু উদয়পুর হইতে কোন সম্বাদ আসিল না— মিশ্ৰঠাকুর ফিরিলেন না। তখন চঞ্চলকুমারী উৰ্দ্ধমুখে, যুক্ত করে বলিল, “হে অনাথনাথ দেবাদিদেব ! অবলাকে কি প্রবঞ্চনা করিলে ?” :