পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/৩৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা। ] নৌকাডুরি। • GLO এমন কি, হেমনলিনীর মনে ঈষৎ-একটু ঈর্ষার সঞ্চার হইল—সে ঈর্ষা নিজেকে লইয়া, কি রমেশকে লইয়া, তাহ বলা শক্ত। রমেশের প্রতি অন্নদাবাবুর শ্রদ্ধা ছিল বটে, কিন্তু এমন তর মুগ্ধতাবের স্নেহ ছিল না। রমেশ যে তাহার অস্তঃকরণকে তেমন গভীরতর স্থানে স্পর্শ করিতে পারিয়াছিল, তাহা নহে । অন্নদা। নলিনাক্ষবাবু যে আমাদের পাশের বাড়ীটি লইয়াছেন, ইহাতে আমি বড় খুসি হইয়াছি। - হেমনলিনী । কিন্তু আমরা যদি তাহাকে বড় বেশি বিরক্ত করিতে আরম্ভ করি, তাহা • হইলে ত তিনি টিকিতে পারিবেন না । তিনি নির্জন মনে করিয়াই এই গলির মধ্যে ৰিশ্ৰাম করিতে আসিয়াছেন । অন্নদা । দেখ হেম, নলিনাক্ষবাবুদের মত লোক নিজেরা যাহা চান, তাহাই যে নিৰ্ব্বিঘ্নে ভোগ করিতে পাইবেন, বিধাতা তথ্যহাদের ললাটে এমনটা লেখেন নাই । তাহার কাছ হইতে আমরা বাছ চাই, তাহা তাহার এড়াইবার জো নাই । আমরা -তুহিকে বিরক্ত যদি করি, তবে সে তাহাকে সহিতেই হইবে। এরকম লোক বাড়ীর কত্রীর মত আগে সকলের আহার শেষ হইলে তবে নিজের আহারে বসিতে পারেন— ৰেলা হইয়। যাইতেছে বলিয়, অতিথিকে ফিরাইতে পারেন না । যখন-তখন যাহাঁকে-তাহাকে गद्देबी एवं'िবাবুকে এরূপ কেহ মাতিয়া উঠিতে দেখে নাই—বরঞ্চ তিনি সাধারণত খ্যাত লোকদিগকেও যথেষ্ট খ্যাতি দিতে কৃপণতা করেন। এইজন্ত র্তাহার এই ভক্তির সহজ উচ্ছাস হেমনলিনীকে স্পর্শ করিল। তখন হেমনলিনী নলিনাক্ষকে সাধারণ মনুষ্যশ্রেণী হইতে তফাত করিয়া আপনার অঙ্কুরিত ঈর্ষাকে দলন করিয়া ফেলিল ও ক্রমশই কথাপ্রসঙ্গে অল্পদাবাবুর উৎসাহ বিনা ৰিরোধে তাহার হৃদয়কে অধিকার করিতে লাগিল । অন্নদীবাবু কহিলেন, “মা, চল একবার ও বাড়ীটা দেখিয়া আসি । কাল নলিনবাবু ওখানে আসিবেন, দেখি, সমস্ত পরিষ্কার করা হইয়াছে কি না ।” হেমনলিনী চুপ করিয়া রহিল। একটু পরে কহিল, “এখন অন্ধকার হইয়া গেছে, এখন কি ভাল দেখা যাইবে ?” হেমের অনিচ্ছ দেখিয়া অন্নদাবাৰু কহিলেন, “আচ্ছা থাকৃ, কাল সকালে গিয়া দেখিয়া আসিব ।" . - ইহার পরে ক্ষণকাল কোনো কথা হইল না । হঠাৎ ছেম উঠিয়া কছিল, “চল বাবা, বাড়ীটা দেখিয়া আসি গে।” এই বলিয়া, যেখানে বেদন, সেইখানেই ছেম অত্যন্ত স্পৰ্দ্ধার সহিত আঘাত করিতে প্রস্তুত হইল । • * ক্রমশ ।