বঙ্গদর্শন। নৌকাডুবি। 8b" রমেশ প্রত্যুষেই এলাহাবাদ হইতে গাজিপুরে “ফিরিয়া আসিল । তখন রাস্তার অধিক লোক ছিল না, এবং শীতের জড়িমায় রাস্তার ধারের গাছগুলা যেন পল্লবাবরণের মধ্যে আড়ষ্ট হুইয়া দাড়াইয়া ছিল । পাড়ার বস্তিগুলির উপরে তখনো একখান করিয়া শাদী কুয়াশা ডিম্ব গুলির উপরে নিস্তব্ধ-আসীন রাজহংসের মত স্থির হইয়া ছিল । সেই নির্জন পথে গাড়ির মধ্যে একটা মস্ত মোটা ওভারকোটের নীচে রমেশের বক্ষস্থল চঞ্চল হৃৎপিণ্ডের আঘাতে কেবলি তরঙ্গিত হইতেझिनै । 攀 বাংলার বাহিরে গাড়ি দাড় করাইয়া রমেশ নামিল। ভাবিল, গাড়ির শব্দ নিশ্চয়ই কমলা শুনিয়াছে ;—শদ শুনিয়া, সে হয় ত বীরন্দায় বাহির হইয়া, আসিয়াছে। স্বহস্তে কমলার গলায় পরাইয়া দিবার জন্ত এলাহtৰাঙ্গ হইতে রমেশ একটি দামী নেকলেস কিনিয়ু আনিয়াছে—তাহারই বাক্সট রমেশ তাহার ওভাকোটের বৃহৎ পকেট হইছে, বাহির করিয়া লইল । বাংলার সম্মুখে আসিয়া রমেশ দেখিল, বিষ৭-বেহার বারান্দায় গুইরা অকাতরে নিদ্রা দিতেছে—ঘরের দ্বারগুলি বন্ধ। বিমর্বমুখে রমেশ একটু থমকিয় দাড়াইল । একটু উচ্চস্বরে ডাকিল --“বিষণ!” ভাবিল, এই ডাকে ঘরের ভিতরকার নিদ্রাও ভাঙিবে। কিন্তু এমন করিয়া নিদ্রা ভাঙাইৰার যে অপেক্ষা আছে, ইছাই তাহার মনে বাজিল ; রমেশ ত অদ্ধেকরাত্রি ঘুমাইতে পারে নাই ! দুই-তিন ডাকেও বিষণ উঠিল না—শেষকালে ঠেলিয় তাহাকে উঠাইতে হইল । বিষণ উঠিয়া-বসিয়া ক্ষণকাল হতবুদ্ধির মত তাকাইয়া রহিল । রমেশ জিজ্ঞাসা করিল— *বহুজি ঘরে আছেন ?” বিষণ প্রথমটা রমেশের কথা যেন বুঝিতেই পায়িল ন}—তাহার পরে হঠাৎ চকিত হইয়া উঠিয়া কহিল, “হা, তিনি ঘরেই আছেন "-এই বলিয়া সে পুনৰ্ব্বার গুইয়াপড়িয়া নিদ্রা দিবার উপক্ৰম করিল।” রমেশ দ্বার,ঠেলিতেই দ্বার খুলিয়া গেল। ভিতরে গিয়া ঘরে ঘরে ঘুরিয়া দেখিল, কেহ কোথাও নাই ! তথাপি একবার উচ্চৈঃস্বরে
