পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় চতুর্থ খণ্ড.djvu/৪৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88૭ • বঙ্গদর্শন । [ ৪র্থ বর্ষ, পৌষ । , কি কখনো হয়!”—এরূপ উত্তরুকে ঠিক যুক্তি বলা চলে न-किरू যুক্তির অপেক্ষা ইহা অনেকগুণে প্রবল । হেম আর থাকিতে পারিল না—সে বায়নদীয় চলিয়া গেল । অন্নদাবাৰু অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া পড়িলেন। তিনি এরূপ বাধার কথা কল্পনাও করেন নাই। বরঞ্চ তাহার ধারণা ছিল, নলিনাক্ষের সহিত বিবাহের প্রস্তাবে হেম মনে মনে খুসিই হইবে । হতবুদ্ধি বৃদ্ধ বিষঃমুখে কেরোসিনের আলোর দিকে চাহিয়া স্ত্রীপ্রকৃতির অচিস্তনীয় রহস্য ও হেমনলিনীর জননীর অভাব মনে মনে চিন্তা করিতে লাগিলেন । হেম অনেকক্ষণ বারান্দার অন্ধকারে বসিয়৷ রহিল । তাহীর পরে ঘরের দিকে চাহিয়া তাহার পিতার নিতান্ত হতাশমুখের ভাব চোখে পড়িতেই তাহার মনে বাজিল । তাড়াতাড়ি তাহার পিতার চৌকির পশ্চাতে দাড়াইয়1র্তাহার মাথায় অঙ্গুলিসঞ্চালন করিতে করিতে কহিল—“বাবা চল, অনেকক্ষণ খাবার দিয়াছে, খাবার ঠাণ্ড হইয়া গেল।” অন্নদাবাবু যন্ত্রচালিতবৎ উঠিয়া খাবারের জায়গায় গেলেন–কিন্তু ভাল করিয়া থাইতেই পারিলেন না। হেমনলিনীসম্বন্ধে সমস্ত দুর্যোগ কাটিয়া গেল মনে করিয়া তিনি বড়ই আশান্বিত হইয়া উঠিয়াছিলেন, কিন্তু হেমনলিনীর দিক্ হইতেই যে এত-বড় बाघाँठ আসিব, ইহাতে তিনি অত্যস্ত দমিয়া গেছেন। আবার তিনি ব্যাকুল দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়,যনে ভাবিলেন, “হেম তবে এখনো রমেশকে ভুলিতে পারে নাই।” অশুদিন আহারের পরেই অনাবাৰু শুইতে যাইতেন, আজ বারাঙ্গীয় ক্যাম্বিসের কেদারার উপরে বসিয়া বাড়ীর বাগানের সম্মুখবর্তী ক্যান্টনমেণ্টের নির্জন রাস্তার দিকে চাহিয়া ভাবিতে লাগিলেন । হেমনলিনী আসিয়া স্নিগ্ধস্বরে কহিল, “বাবা, এখানে বড় ঠাণ্ডা, গুইতে চল ।” অল্পদ কছিলেন, “তুমি শুইতে বাও, আমি একটু পরেই যাইতেছি।” হেমনলিনী চুপ করিয়া তাহায় পাশে দাড়াইয়া রহিল। আবার খানিক বাদেই কহিল, “বাব, তোমার ঠাণ্ডা লাগিতেছে, না হয় বসিবার ঘরেই চল ।” g তখন অন্নদাবাবু চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কিছু না বলিয়া শুইতে গেলেন। পাছে তাহার কৰ্ত্তব্যের ক্ষতি হয় বলিয়া হেমনলিনী রমেশের কথা মনে মনে আন্দোলন করিরা নিজেকে পীড়িত হইতে দেয় না । এজন্ত এপর্য্যন্ত সে নিজের সঙ্গে অনেক লড়াই করিয়া আসিতেছে । কিন্তু বাহির হইতে যখন টান পড়ে, তখন ক্ষতস্থানের সমস্ত বেদন জাগিয়া উঠে। হেমনলিনীর ভবিষ্যৎ জীবনটা ষে কিভাবে চলিবে, তাছা এপর্য্যস্ত সে পৰিষ্কার কিছুই ভাবিয়া পাইতেছিল না—এই কারণেই একটা সুদৃঢ় কোনো অবলম্বন খুজিয়া অবশেবে নলিনাক্ষকে গুরু মানিয়া তাহার উপদেশ অনুসারে চলিতে . প্রস্তুত হইয়াছিল। কিন্তু যখনি বিবাহের প্রস্তাবে তাহাকে তাহার হৃদয়ের গভীরতম দেশের আশ্রয়স্বত্র হইতে টানিয়া আনিতে 彎 † ,কাছে, তখনি সে বুঝিতে পারে; সে বন্ধন কি কঠিন ! তাহাকে কেহ ছিন্ন করিতে