পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দ্বিতীয় সংখ্যা । ] চীন-কাহিনী । У e > মুণ্ডিত এবং শরীর গৈরিক আলখাল্লায় অমৃত । শীতাধিক্যবশত আলখাল্লার নীচে একটি করিয়া বনাতের পায়জামা । কণ্ঠদেশে কাঠমালা বিলম্বিত—কাহারও হস্তে পিত্তলের বলয় এবং কাহারও বা মস্তকে রেশমী বস্ত্রের উষীষ পরিশোভিত । লামাগণ সংস্কৃতভাষার সহিত মিশ্রিত এক প্রকার ভাষার সাহায্যে আমাদিগকে মন্দিরসঙ্গন্ধে কিছু কিছু বুঝাইয়া দিতে চেষ্ট করিলেন । বহুকষ্টে আমরা বুঝিলাম যে, আমরা যে মন্দিরে প্রবেশ করিয়াছি, হিন্দুস্থানের - “তারা”দেবী তাহার অধিষ্ঠাত্ৰী । পর পর মন্দিরগুলিতে “কমলা”, “বগল।”, “ভুবনেশ্বরী”, “ছিন্নমস্তা”, “ষোড়শা” হত্যাদি হিন্দুস্থানের দেবীমূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিতা । প্রথমেই তারামুত্তি । চীনশিল্পী ইহার অমর্য্যাদা করে নাই । ইহার সমস্ত বস্ত্রাভরণ সুদক্ষ শিল্পী অসাধারণ নৈপুণ্যে কাষ্ঠ হইতে খু দিয়া খুদিয়া বাহির করিয়াছে । দেবীর হস্তস্থিত পদ্মফুল সদ্যঃ প্রফুটিত প্রকৃত পদ্ম বলিয়া প্রথমে আমাদের ভ্রাস্তি উৎপাদন করিয়াছিল—পরে দেখিলাম, ইহা ও শিল্পীর অসাধারণ শিল্পনৈপুণ্যের পরিচায়ক । . বহুদিন পরে মুদুর বিদেশে স্বদেশীয় দেবীমূৰ্ত্তি-পন্দর্শনে যে মাতৃভূমিচু্যত সন্তানের চক্ষে তাহার জন্মভূমির বিশাল মহিম উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছিল, তাহ বলাই বাহুল্য । ভারতভুমি বৌদ্ধদিগকে ভারত হইতে fবতাড়িত করিবার সময়েও বুঝি জননীর প্রসাদ কিছু তাহদের সঙ্গে দিয়াছিলেন । প্রথম মুক্তি দর্শন করিয়া আমরা দ্বিতীয় মন্দিরে প্রবেশ করিলাম। এই মন্দিরে “বগলা”মূৰ্ত্তি প্রতিষ্ঠিত। দেবী কিছু রূপাস্তরিত । দেবী একাকিনী রুদ্রমূৰ্ত্তিতে দণ্ডায়মান ৷ আকৃষ্যমানজিহব গদাপ্রহণরভীত অমর দেবীর সঙ্গে আসিতে সাহস করে নাই । ইহারও অলঙ্কারাদি সমস্তই খোদিত । মুক্তির সম্মুখে ধূপধুনার ধুম সমুখিত –মন্দিরটি তাহার গন্ধে আমোদিত । মন্দিরবাসী লামা ধ্যানমগ্ন। লামাকে ধ্যানমগ্ন দেখিয়া আমরা তৃতীয় মন্দিরে প্রবেশ করিলাম । _ এই মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী “কমলা”দেবী । শাস্তিময়ী কমলাসন কমলার মুক্তি যেন কিছু উদ্ধত বলিয়া বোধ হইল । চতুৰ্ভুজ দেবীকে প্রণাম করিয়া আমরা চতুর্থ মন্দিরে গেলাম । মন্দিরের দ্বারদেশে কতকটা সংস্কৃতের মত অক্ষরে দেবীর নাম লিখিত । তিনটি অক্ষর “ভুব: - -- রী” পড়া গেল । অনুমানে বুঝিলাম, দেবীর নাম ভুবনেশ্বৰী । একজন ংস্কৃতজ্ঞ । চীনবাসী ও অামাদের কথা সমর্থন করিলেন । ভুবনমোহিনী ভুবনেশ্বরীমুক্তি ও চীনকারিকরের হস্তে কিছু রুক্ষতণপ্রাপ্ত । মৃত্তির সম্মুপে ৩জন লামা উপবিষ্ট ও একজন পূজার আয়োজনে নিয়োজত । মন্দিরে প্রবেশ করিয়া দেবীকে ৫ সেণ্ট ( ৪ পয়স ) প্রণামী দিয়া প্রণাম করিলাম । তদশনে প্রধান লাম। দেবীর শিরঃস্থিত মুকুট পর্শ করিয়া আমার মস্তক স্পর্শ করিলেন । । আমরা পঞ্চম মন্দিরে প্রবেশ করিলাম । এখানেও দ্বারের উপরে তিনটি অক্ষরে দেবীর, নাম লিখিত । অক্ষরগুলি পড়িতে পারিলাম না । জনৈক পাওকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, ইনি হিন্দুস্থানের “ষোড়শী”দেবী।