পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5 5 о অভিপ্রায় বহন করিয়া ত যাইতেছেন না ?” . প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ৎ দিতে দিতে ভরতের প্রাণ ওষ্ঠাগত হইতেছিল। ভরত কৈকয়ীকে “মাতৃরূপে মমামিত্রে বলিয়া সম্বোধন করিয়াছিলেন—বাস্তবিকই কৈকরী মাতারূপে র্তাহার মহাশত্রুস্বরূপ হইয়া দাড়াইয়াছিলেন—বিশ্বময় এই যে সন্দেহচক্ষুর বিষবাণ ভরতের উপর পতিত হইতে ছিল, তাহার মূল কৈকয়ী । কিন্তু ঘটনাবলী যতই জটিল ভাব ধারণ করুক না কেন, ভরতের অপূৰ্ব্ব ভ্রাতৃস্নেহ সমস্ত জটিলতাকে সহজ করিয়া তুলিয়াছিল । রামকে আমরা নানা অবস্থায় সুখী হইতে দেখিয়াছি। .যখন চিত্রকুটের পুষ্পোস্তাননিভ এবং কচিৎ ক্ষয়িতপ্রস্তর প্রশস্ত অধিত্যকীয় বিলম্বিত শৈলশৃঙ্গ এবং বিচিত্র পুষ্পসম্ভারের প্রতি লক্ষ্য করিয়া রাম সীতাকে বলিয়াছিলেন, “এই স্থানে তোমার সঙ্গে বিচরণ করিয়া আমি অসোধ্যার রাজপদ অকিঞ্চিৎকর মনে করিতেছি,” তখন দম্পতির নিৰ্ম্মল আনন্দময় চিত্র আমাদের চক্ষে বড়ই সুন্দর ও তৃপ্তিপ্রদ মনে হষ্টয়াছে । রামচন্দ্রের আকাশ কখন মেঘাচ্ছন্ন, কখন প্রসন্ন । কিন্তু ভরতের চিরবিযঃ চিত্রটি মৰ্ম্মান্তিক করুণার যোগ্য। রামকে যখন ভরত ফিরাইয়া লইতে আসেন, তখন তাহার জটিল, কৃশ ও বিবর্ণ মুপ্তি দেখিয়া রামচন্দ্র চমকিয়া উঠিয়াছিলেন, কষ্ট্রে প্তাহাকে চিনিতে পারিয়াছিলেন । ভরতের চিত্র প্রদর্শন করিবার অস্তিপ্রায়ে কবিগুরু যখন সৰ্ব্বপ্রথম যবনিক। উত্তোলন করেন, তখনই তোহার মৃত্ত্বি বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ; আষাঢ় ॥ " বিষণ্ণতাপুর্ণ। এইমাত্র দুঃস্বপ্ন দেখিয়া তিনি । প্রাতঃকালে উঠিয়াছেন, নর্তকীগণ র্তাহার প্রমোদের জন্ত সম্মুখে নৃত্য করিতেছে, সখীগণ ব্যগ্রভাবে কুশল জিজ্ঞাসা করিতেছেন, ভরতের চিত্ত ভারাক্রাস্ত, মুখখানি ঐহীন। অযোধ্যার বিষম বিপদের পূর্বাভাস যেন তাহার মন অধিকার করিয়। রহিয়াছে, তিনি কোনরূপেই সুস্থ হইতে পারিতেছেন না । . এই সময়ে তাহাকে লইয়। যাইবার জন্ত অযোধ্যা হইতে দূত আসিল । ব্যগ্ৰকণ্ঠে ভরত দূতগণকে অযোধ্যার প্রত্যেকের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন,দূতগণ দ্ব্যর্থব্যঞ্জক উত্তরে বলিল—“কুশলাস্তে মহাবাহো যেষাং কুশলমিচ্ছসি।” কিন্তু গতরাত্রের দুঃস্বপ্ন ও দুতগণের ব্যগ্রত তাহার নিকট একটা সমস্তার মত মনে হইল । এই দুই ঘটনা তিনি একটি দুশ্চিস্তার সুত্রে গাথিয়া একান্ত বিমর্ষ হইলেন—“বভুব হস্ত হৃদয়ে চিন্তা সুমহষ্ঠী তদা । ত্বরয় চাপি দূতানাং স্বপ্রস্তাপি চ দশনাং ।” বহু দেশ, নদনদী ও কাস্তার অতিক্রম করিয় ভরত দুর হইতে অযোধ্যার চিরশু্যামল তরুরাজি দেখিতে পাইলেন এবং আতঙ্কিতকণ্ঠে সারথিকে জিজ্ঞাসা করিলেন —“এ যে অযোধ্যার মত বোধ হয় না, নগরীর সেই চিরশ্ৰুত তুমুল শব্দ শুনিতেছি না কেন ? বেদপাঠনিরত” ব্ৰাহ্মণগণের কণ্ঠধ্বনি ও কাৰ্য্যস্রোতে প্রবাহিত নরনারীর বিপুল হলহলাশবা একান্তরূপে নিস্তব্ধ । যে প্রমোগোস্তানসমূহে রমণী ও পুরুষগণ একত্র বিচরণ করিত, তাহ আজ পরিভাক্ত। রাজপস্থা চন্দন ও জলনিযেকে পবিত্র ইম