চতুর্থ সংখ্যা । ] সীতা । ” “ ویدa ছেন ?” ইহা হইতেও তিনি অধিকতর কুকথা রামকে বলিয়াছিলেন –“শৈলুষ ইব মাং রাম পরেভ্যো দাতুমিচ্ছসি।”—স্ত্রীজনস্থলভ অনেক কমনীয় কথার সংঘটনও এস্থানে দৃষ্ট হয়—“তোমার সঙ্গে থাকিলে, তোমার শ্ৰীমুখ দেখিলে, আমার সকল জালা দুর হইবে, পথের কুশকণ্টক রাজগৃহের তুলাজিন অপেক্ষাও অামি কোমলতর মনে করিব ।” এইরূপ নানা বিনয় ও প্রেমস্থচক কথা বলিয়া সীতা স্বামীর কণ্ঠলগ্ন হইয়া কাদিতে লাগিলেন ; তাহার পদ্মদলের স্তায় দুটি চক্ষু জলভারে আচ্ছন্ন হইল ; তিনি স্বামীর সঙ্গে যাইতে না পারিলে প্রাণত্যাগ করিবেন, এই সঙ্কল্প জানাইয়া ব্রততীর দ্যায় রামের অঙ্গে হেলিয়া পড়িয়া বিমনা হইয়া অশ্রুপাত করিতে লাগিলেন । সাধবীর এই অশ্রুতপূৰ্ব্ব দৃঢ়তা দর্শনে রাম বাহুদ্বারা তাহাকে আলিঙ্গন করিয়া বলিলেন, “ন দেবি তব দুঃখেন স্বর্গমপ্যভিরোচয়ে ।” এবং তাহাকে সঙ্গে যাইতে অনুমতি দিয়া বলিলেন, “তোমার ধনরত্ব যাহা কিছু আছে, তাহ। বিতরণ করিয়া প্রস্তত হও ।” রমণীর অলঙ্কারপেটিক শত শত অদৃশু ও মৌন যক্ষে রক্ষা করিয়া থাকে, কিন্তু সীতা কেমন হৃষ্টমনে হারকেয়ুর সর্থীগণকে বিলাইয়া দিতেছেন, তাহ দেখিবার যোগ্য । বশিষ্ঠপুত্র সুষজ্ঞের পত্নীকে তিনি হেমস্বত্র, কাঞ্চী ও নানা মহীর্ঘ দ্রব্য প্রদান করিলেন। সর্থীগণকে স্বীয় পৰ্য্যন্ধ, হেমথচিত অংস্তরণ এবং নানা অলঙ্কার প্রদান করিয়া মুহুর্তের মধ্যে নিরাভরণ স্বনারী বনবাসের জন্য প্রস্তত হইলেন । যখন রাম পিতামাতা ও সুহৃদগণের সমক্ষে জটাবষ্কল পরিধান করিলেন, তখন সীতার পরিধানের জন্ত কৈকয়ী তাহার হস্তে চীরবাস প্রদান করিলে, সীতা সজলনেত্রে ভীতকণ্ঠে রামের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “চীরবাস কেমন করিয়া পরিতে হয়, আমি জানি না, আমাকে শিখাইয়া দাও।” সুমন্ত্র যেদিন রথ লইয়া গঙ্গাতীর হইতে অযোধ্যায় প্রত্যাবৰ্ত্তন করেন, সেদিন তিনি সীতাকে বলিয়াছিলেন—“অযোধ্যায় কোন সংবাদ কি আপনার দিবার আছে ?” সীতা তখন কিছু বলিতে পারেন নাই, দুটি চক্ষু হইতে র্তাহার অজস্র অশ্রুবিন্দু’পতিত হইয়াছিল। এই সকল অবস্থায় সীতার মূৰ্ত্তি লজ্জাবতী লতাটির দ্যায়, কিন্তু এই বিনয়নম্র মধুরভাষিণীর চরিত্রে যে প্রথুরতেজ ও দৃঢ়সঙ্কল্প বিদ্যমান, তাহার পূৰ্ব্বাভাস ইতিপূৰ্ব্বেই আমরা পাইয়াছি । তার পর রাজকুমারদ্বয় ও রাজবধু বনে যাইতেছেন । যিনি রাজনন্তঃপুরীর অবরোধে সযত্নে রক্ষিতা, যাহার গৃহশিখরে শুক ও ময়ুর মৃত্য করিত ও হেমপৰ্য্যঙ্কে স্বকোমলচৰ্ম্ম ছাদনশোভা আস্তরণ বিরাজিত থাকিত, নিদ্রিত হইলে যাহার রূপমাধুরী শুধু স্বর্ণদীপরাশি নির্নিমেষনেত্রে চাহিয়া দেখিত, আজি তিনি সকলের দৃষ্টিপথবৰ্ত্তিনী, পদব্ৰজে কণ্টকাকীর্ণ পথে চলিতেছেন, পদ্মপ্রস্বনের মত পাদযুগ্ম,--তাহাতে অলক্তকরাগ মলিন হয় নাই, সেই পদযুগ্ম লীলানুপুরশব্দে এখনও বনপ্রদেশ মুখরিত করিয়া চলিতেছে, চিত্রকুটের প্রান্তবৰ্ত্তিনী হইয়া সীতা শ্বাপদসঙ্কুল গহনে কৃষ্ণ রজনীতে ভীত হইলেন, রামের বাহআশ্রিত সীতার ভীত ও চকিত পদক্ষেপ
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/১৭২
অবয়ব