পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম সংখ্যা । ] বাছা বাছ মোগলপাঠানকে হারাইয়া দিল । মহামারীর স্বষ্টি করিয়া কাত্যায়নী মাতা মোরঙ্গদেশ উৎসল্প দিবেন শুনিয়া সহজেই তাহারা পরাজয় স্বীকার করিল । তখন বীরকুঙয় দেবীমাইয়ের নিকট প্রার্থনা করিল যে, তাহার দাসী তিরগ-বেটী তিরায়েনের সহিত তাহার বিবাহ দিয়া দেন। ভুতে এবং মানুষে কি করিয়া সংসারধৰ্ম্ম চলিতে পারে, এই আপত্তি তুলিয়া কাত্যায়নী প্রথমত বর দিতে অসন্মত হইয়াছিলেন, কিন্তু শেষে আর উপেক্ষা করিতে পারিলেন না । কেন না, তব, বোলে বীরকুঙর, গে মাই দে হামারা সঙ্গ লাগায়, হম ভুত বানায় লেব । তখন বিবাহ করিয়া বীরকুঙয় পত্নীকে লাঠির নৌকায় গঙ্গাপীর করিতে গেল । ইহাতে তিরগ-বেটী তিরায়েন জলে ডুবিয়া মরিল । সুতরাং বীরকুঙরের অভীষ্ট সিদ্ধ হইল । কেন না, সে সহধৰ্ম্মিণীকে ভূত বানাইয়া লইতে পারিয়াছিল । এই কাহিনীকে ভিত্তি করিয়া গোপজাতি প্রতিবৎসর কাৰ্ত্তিকী অমাবস্তার পরদিন যে পৰ্ব্বাঙ্গুষ্ঠান করে, তাহার নাম সোহরাই । সেদিন বেহার এবং ছোটনাগপুরের প্রত্যেক পল্লী পর্বোৎসবে মাতিয়া উঠে । প্রভাতে ঢাকঢোলের যে শব্দ গ্রামপ্রান্ত হইতে উখিত হয়, মধ্যাহ্রের পর তাহ সৰ্ব্বত্র প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠে । তখন সকলে একটি গৃহপালিত শূকরকে ভূত মধু্যকের প্রতিনিধি করিয়া বাধিয়া পুজার স্থানে শইরা আসে, এবং গোমহিষদের নিকট হইতে তাহাঁদের বৎসগুলি বিচ্ছিন্ন করিয়া তফাতে বারকুঙর । Rర్సీ রাখিয়া দেয়। পূজা শেষ হইলে গাভীদের ছাড়িয়া দেওয়া হয়। পরে রজ্জ বন্ধ বরাহটিকে টানিয়া বৎসদের কাছে এরূপ ভাবে লইয়া যাওয়া হয়, যাহাতে মাতার দল সহজেই তাহীদের অনিষ্টাশঙ্কা করিয়া উন্মত্তবৎ হইয় উঠে। তখন সেই সমবেত গাভীর দল একযোগে শূকরের প্রতি ধাবিত হয় এবং মুহুমুহু তাহাকে শৃঙ্গাঘাত করিতে থাকে। শূকর যন্ত্রণায় যত চীৎকার করে, বাদ্যোস্তমের ঘটা তত বাড়িয়া উঠে এবং সেই সঙ্গে গোপসন্তানগণের আনন্দধ্বনিতে চারিদিক্‌ কম্পিত হইতে থাকে। জন্তুমধ্যে বরাহের প্রাণ বোধ করি সকলের চেয়ে কঠিন, সহজে বাহির হয় না । অতএব এই ভৎস দৃশু স্বৰ্য্যাস্ত পৰ্য্যস্ত চলিতে থাকে । কয় বৎসর হইল, কোয়েলনদীর তীরে এই নিষ্ঠুর পর্বোৎসব দেখিয়াছিলাম। ক্ষীণস্রোত কল্লোলিনীর উত্তর তীরে মহুয়াকুঞ্জের ঘনচ্ছায়ায় বসিয়া বসিয়া জলক্রীড়ারত পক্ষীদের প্রতি অন্ত্যমনস্কভাবে চাহিয়া ছিলাম — দূরে পালামেীর ক্ষুদ্র সুনীল শৈলমাল;তাহার পশ্চাতে রোহিতাশ্ব-পৰ্ব্বতশ্রেণীর ঘনকৃষ্ণ ছায়াদৃশু। সহসা অপর পারে বাদ্যভাও বাজিয়া উঠিল, এবং সৈকতভূমিতে অসহায় রজ্জ বন্ধ শুকরের দিকে রোষপরায়ণ গাভীর দল বেগে ধাবিত হইল। আমার সেখানে অপেক্ষা করার সময় বা প্রবৃত্তি ছিল না । অপরাহ্লে পথে যাইতে যত গ্রাম অতিক্রম করিলাম, সৰ্ব্বত্র ঢাকঢোলের শব্দ এবং আৰ্ত্তপশুর চীৎকার কানে বাজিতেছিল। শ্ৰীশ্ৰীশচন্দ্র মজুমদার।