বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/২৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७२ ক্ষশকাল রমেশের মুখের দিকে তাকাইয়া কহিলেন—“সে কি কথা রমেশ ! নিমন্ত্রণ ষে হইয়া গেছে ।” রমেশ কহিল, “এই রবিবারের পরের রবিবারে দিন পিছাইয়া দিয়া আজই পত্র বিলি করিয়া দেওয়া যাইতে পারে ।” অন্নদা । রমেশ, তুমি আমাকে অবাক করিলে ! এ কি মকদ্দমা যে, তোমার স্ববিধাস্থত তুমি দিন পিছাইয়া মুলতুবি করিতে থাকিবে ? তোমার প্রয়োজনটা কি, শুনি ! রমেশ । সে অত্যন্ত বিশেষ প্রয়োজন, বিলম্ব করিলে চলিবে না ! অন্নদাবাবু বাতাহত কদলীবৃক্ষের মত কেদারার উপর হেলান্‌ দিয়া পড়িলেন— কহিলেন—“বিলম্ব করিলে চলিবে না ! বেশ কথা, অতি উত্তম কথা ! এখন তোমার যাহা ইচ্ছা হয় কর । নিমন্ত্রণ ফিরাইয়া লইবার ব্যবস্থা তোমার বুদ্ধিতে যাহা আসে, তাহাই হোক । লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করিবে, আমি বলিব, ‘আমি ও সব কিছুই জানি ল,—র্তাহার কি আবগুক, সে তিনিই জানেন, আর কবে তাহার সুবিধা হইবে, সে তিনিই বলিতে পারেন ?” . রমেশ উত্তর না করিয়া নতমুখে বসিয়া রছিল । অল্পদাবাবু কহিলেন, “হেমনলিনীকে সব কথা বলা হইয়াছে ?” রমেশ । না, তিনি এখনো জানেন না । অন্নদা । তাহার ত জানা অবিহুক । তোমার ত একলার বিবাহ নয় ! রমেশ । আপনাকে আগে জানাইরা তাহাকে জানাইব স্থির করিয়াছি। 向山 . [ গুর স্বর, জাখিম । অল্পদাবাৰু ডাকিয়া উঠিলেন—“হেম, হেম ?” হেমনলিনী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া কহিল, “কি বাবা - - অন্নদী । রমেশ বলিতেছেন, উ হার কি একটা বিশেষ কাজ পড়িয়াছে, এখন উ-হার বিবাহ করিবার অবকাশ হইবে না ! হেমনলিনী একবার বিবর্ণমুখে রমেশের মুখের দিকে চাহিল । রমেশ অপরাধীর মত নিরুত্তরে বসিয়া রহিল । হেমনলিনীর কাছে এ খবরটা যে এমন করিয়া দেওয়া হইবে, রমেশ তাহ প্রত্যাশা করে নাই । সে যে কি করিয়া আস্তে আস্তে কথাটা পাড়িবে, তাহা নানা রকম করিয়া ভাবিয়া রাখিয়াছিল। ভালবাসার মৃদ্ধ দক্ষিণহাওয়াকে রমেশ দূত করিবে স্থির করিয়াছিল, হঠাৎ বজ্রমন্দ্রিত কালবৈশাখী তাহার মুখের কথা ছিনাইয়া লইয়া গেল । অপ্রিয়বাৰ্ত্ত। অকস্মাং এইরূপ নিতান্ত রূঢ়ভাবে হেমনলিনীকে যে কিরূপ মৰ্ম্মান্তিকরূপে আঘাত করিল, রমেশ তাহা নিজের ব্যথিত আন্তঃকরণের মধ্যেই সম্পূর্ণ অনুভব করিতে পারিল । কিন্তু যে তাঁর একবার নিক্ষিপ্ত হয়, তাহা আর ফেরে না,—রমেশ যেন স্পষ্ট দেখিতে পাইল, এই নিষ্ঠুর তীর হেমনলিনীর হৃদুয়ের ঠিক মাঝখানে গিয়া বিধিয়া রছিল । এখন কথাটা কোনমতে আর নরম করিয়া লইবার উপায় নাই। সবই সত্য— বিবাহ এখন স্থগিত রাখিতে হইবে, রমেশের বিশেষ প্রয়োজন আছে, কি প্রয়োজন, তাহাও সে বলিতে ইচ্ছা করে না । ইহার উপরে এখন আর নুতন ব্যাখ্যা কি হইতে পারে !