পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এমার্সন । জীবনের এক অতি ঘোর দুর্দিনে, শোক ও নিরাশার নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে এমাসনের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় । সে কাহিনী কহিতে গেলে, কিয়ৎপরিমাণে আত্মকথা কহিতে হয় ; অবস্থাধীনে ای که تنها অপরাধ মার্জনা করিবেন । যৌবনের প্রারস্তে, আর-দশজনের দ্যায় আমারও জ্ঞানের সমক্ষে জটিল বিশ্বসমস্ত উপস্থিত হইয়াছিল। সে সময়ে, লৌকিক দ্যায় অনুসরণ করিয়া, বিশ্বমূলে আমি যুগপৎ দুইটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করি—এক জড়তত্ত্ব, অপর চেতনতত্ত্ব । জড় ও চৈতন্ত, পরমাণু ও ঈশ্বর, উভয়ই অনাদি, উভয়ই অনস্থ, জড়-চেতনার সমাবেশে বিচিত্র জগৎ উৎপন্ন হইয়াছে, এই স্থল সিদ্ধান্তে উপনীত হই । ‘নাসতো সজ্জায়তে”—অসৎ হইতে সতের উৎপত্তি হইতে পারে না, এ ধারণ বহুদিন হইতেই বুদ্ধিতে বদ্ধমূল হইয়া - গিয়াছিল । প্রচলিত খৃষ্টীয় স্বষ্টিতত্ত্বকে এইজন্য বহুদিনই একেবারে অসিদ্ধ বলিয়া বর্জন করিয়াছিলাম। স্বদেশের স্মৃষ্টিতত্ত্বাদিসম্বন্ধে তথন কোন ও ফানই ছিল না । সুতরাং আত্মচেষ্টা দ্বারাই স্থষ্টিসমস্তাভেদের উপায় উদ্ভাবনে প্রবৃত্ত হই । এই প্রয়াস হইতেই আমার দ্বৈতসিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা । স্থলদৃষ্টিতে তখন জগতে দুই পরস্পর বিরোধী অথচ পরস্পরপেক্ষী বস্তু দেখিয়া ছিলাম--এক জড়, অপর চৈতন্ত । দুই প্রত্যক্ষের বিষয়, প্রত্যক্ষকে অগ্রাহ করি কিরূপে ? জড়কে যতদিন জড় বলিয়াই জানিবে, ততদিন চৈতন্য হইতে তাহার উৎপত্তি কল্পনাও করিতে পারিবে না । আমিও কল্পনা করিতে পারি নাই । সুতরাং জড় হইতে জড়, চৈতন্ত হইতে চৈতন্ত উৎপন্ন হইয়াছে, এই সিদ্ধান্ত অনিবাৰ্য্য হইয়া পড়িল । o বিশেষত, কেন বলিতে পারি না, অদ্বৈতবাদের প্রতি একটা বিকট বিদ্বেষ বহুদিন হইতেই প্রাণে বদ্ধমূল হইয়া গিরছিল। এবং অদ্বৈতবাদের বিভীষিকা হইতে আত্মরক্ষা করিবার জন্তই, যৌবনের প্রারম্ভে জিজ্ঞাসার উদয় হইবণমাত্র, ঘোর দ্বৈতবাদের এই দুর্ভেদ্য দুর্গ রচনা করিতে প্রবৃত্ত হই । কিন্তু আমাদের কল্পনারচিত সিদ্ধান্ত কখনই শুদ্ধ তর্কযুক্তির সাহায্যে বেশিদিন স্থির থাকিতে পারে না । প্রত্যক্ষ সত্যই একমাত্র স্থির ও সনাতন সত্য ৷ সাক্ষাৎ অভিজ্ঞতার উপরে যে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠালাভ করে, অভিজ্ঞতার প্রকৃত মৰ্ম্ম অবিসংবাদিতরূপে যে সিদ্ধাস্ত অভিব্যক্ত করিতে পারে, তাহাই অটুট, আচু্যত থাকে । তাহার বিকাশ হয়, কিন্তু বিনাশ সম্ভবে না । o জীবনের অভিজ্ঞতাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অলক্ষিতে আমার দ্বৈতসিদ্ধান্তের ভিত্তিভূমি ক্রমে শিথিল হইয়া যাইতে লাগিল । যৌবনে আত্মশক্তির উপরে অটল বিশ্বাস