পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩২২ বঙ্গদর্শন [ ৩য় বর্ষ, কাৰ্ত্তিক । করিয়া সকলের করা, ইহাই সাহিত্য, ইহাই ললিতকলা । অঙ্গার-জিনিষটা জলে-স্থলেবাতাসে নানা পদার্থে সাধারণভাবে সাধারণের আছে—গাছপালা তাহীকে নিগুঢ়শক্তিবলে বিশেষ আকারে প্রথমত নিজের করিয়া লয়, এবং সেই উপায়েই তাহা সুদীর্ঘকাল বিশেষভাবে সৰ্ব্বসাধারণের ভোগের দ্রব্য হইয়া উঠে। শুধু যে তাহা আহার এবং উত্তাপের কাজে লাগে, তাহী নহে— তাহা হইতে সৌন্দর্য্য, ছায়া, স্বাস্থ্য বিকীর্ণ হইতে থাকে । সাহিত্যের মূল জিনিষটা সেইরূপ অত্যন্ত সাধারণ । লেখক তাহণকে প্রথমত নিজের করিয়া লন । সেই উপায়ে তাহণ মূৰ্ত্তিগ্রহণ করে, সৌন্দর্য্যলাভ করে, সহজে সৰ্ব্বসাধারণের গ্রহণযোগ্য হইয়। বিশেষ আকারে স্থায়িত্ব প্রাপ্ত হয় । স্বষ্টির সুল উপাদান অসংখ্য নহে । কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন আগধীরে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হইয়া অসীম বৈচিত্র্য রচনা করিতেছে । সাহিত্যেরও মূল উপাদান সীমাবদ্ধ। একই ভাব সহস্ৰ চিত্ত হইতে সহস্রভাবে প্রতিফলিত হইয়া মানুষের আনন্দলোককে নব নব বৈচিত্র্য দান করিতেছে । অতএব দেখা যাইতেছে, সাধারণের জিনিষকে বিশেষভাবে নিজের করিয়া সেই উপায়েই তাহাকে পুনশ্চ বিশেষভাবে সাধারণের করিয়া তোলা সাহিত্যের কাজ । তা যদি হয়, তবে জ্ঞানের জিনিষ সাহিত্য হইতে আপনি বাদ পড়িয়া যায় । কারণ, ইংরাজিতে যাহাকে টপ বলে এবং বাংলাতে যাহাকে আমরা সত্য নাম দিয়াছি অর্থাৎ যাহা আমাদের বুদ্ধির অধিগম্য বিষয়— তাহণকে ব্যক্তিবিশেষের নিজত্ববৰ্জ্জিত করিয়া তোলাই একান্ত দরকার । সত্য সৰ্ব্বাংশেই ব্যক্তিনিরপেক্ষ, শুভ্র-নিরঞ্জন । মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব অামার কাছে একরূপ, অন্তের কাছে অন্তরূপ নহে । তাহার উপরে বিচিত্র হৃদয়ের নুতন নুতন রঙের ছায়া পড়িবার জো নাই । যে সকল জিনিষ আন্তোর হৃদয়ে সঞ্চারিত হইবার জন্য প্রতিভাশালী হৃদয়ের কাছে স্বর, ং, ইঙ্গিত প্রার্থনা করে-- যাহা আমাদের হৃদয়ের দ্বার স্বল্প না হইয়া উঠিলে অভ্যন্ত হৃদয়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠালাভ করিতে পারে না, তাহণই সাহিত্যের সামগ্ৰী । তাহা আকারেপ্রকারে, ভাবে-ভাষায়, স্বরে-ছন্দে মিলিয়া তবেই বাচিতে পারে—তাহা মাজুষের একান্ত আপনার—তাহা আবিষ্কার নহে, অমুকরণ নহে, তাঙ্গ স্বষ্টি । সুতরাং তাহ একবার প্রকাশিত হইয়া উঠিলে তাহার রূপান্তর, অবস্থাস্তর করা চলে না—তাহার প্রত্যেক অংশের উপরে তাঙ্গর সমগ্রতা একান্তভাবে নির্ভর করে । যেখানে তাহার ব্যত্যয় দেখা যায়, সেখানে সাহিত্য-অংশে তাহী হেয় ।