পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম সংখ্যা । ] সাহিত্যের তাৎপৰ্য্য । లిys দুইটি জিনিষ মিশাইয় থাকে—চিত্র এবং সঙ্গীত । - কথার দ্বারা যাহা বলা চলে না, ছবির দ্বারা তাহ বলিতে হয়। সাহিত্যে এই ছবিআঁকার সীমা নাই। উপমা-তুলনা-রূপকের স্বারা ভাবগুলি প্রত্যক্ষ হইয়া উঠিতে চায় । “দেখিবারে আঁখি-পার্থী ধার” এই এক কথায় বলরামদাস কি না বলিয়াছেন ? ব্যাকুল দৃষ্টির ব্যাকুলতা কেবলমাত্র বর্ণনায় কেমন করিয়া ব্যক্ত হইবে ? দৃষ্টি পার্থীর মত উড়িয়া ছুটিয়াছে, এই ছবিটুকুতে প্রকাশ করিবার বহুতর ব্যাকুলত মুহূর্বে শাস্তিলাভ করিয়াছে । এ ছাড়া ছন্দে, শব্দে, বাক্যবিদ্যাসে, সাহিত্যকে সঙ্গীতের আশ্রয় ত গ্রহণ করিতেই হয়। যাহা কোনমতে বলিবার জো নাই, এই সঙ্গীত দিয়াই তাহা বলা চলে। অর্থবিশ্লেষ করিয়া দেখিলে যে কথাটা যৎসামান্ত, এই সঙ্গীতের দ্বারাই তাহ অসামান্ত হইয়া উঠে । কথার মধ্যে বেদন এই সঙ্গীতই সঞ্চার করিয়া দেয় । - অতএব চিত্র এবং সঙ্গীতই সাহিত্যের প্রধান উপকরণ । চিত্র ভাবকে আকার দেয় এবং সঙ্গীত ভাবকে গতিদান করে । চিত্র দেহ এবং সঙ্গীত প্রাণ । কিন্তু কেবল মামুষের হৃদয়ই যে সাহিত্যে ধরিয়া রাখিবার জিনিষ, তাহ নহে। মামুষের চরিত্রও এমন একটি স্বষ্টি, যাহা জড়স্বটির স্তায় আমাদের ইঞ্জিল্পের দ্বারা আয়ত্তগম্য নহে i তাহাকে দাড়াইতে বলিলে ীিক্ষাস্থ না । তাহ মাছুষের পক্ষে পরম ইংহক্যজনক, কিণ্ড তাছাকৈ পশুশালার পশুর মত বাধিয়া খাচার মধ্যে পুরিয়া ঠাহর করিয়া দেখিবার সহজ উপায় নাই । এই ধরাবাধীর অতীত বিচিত্র মানবচরিত্র—সাহিত্য ইহাকেও অন্তরলোক হইতে বাহিরে প্রতিষ্ঠিত করিতে চায়। অত্যন্ত দুরূহ কাজ। কারণ, মানবচরিত্র স্থির নহে, স্বসজত নহে—তাহার অনেক অংশ, অনেক স্তর—তাহার সদরে-আন্দরে অবারিত গতি- • বিধি সহজ নয় । তা ছাড়া, তার লীলা এত স্বক্ষ, এত অভাবনীয়, এত আকস্মিক ষে, তাহাকে পূর্ণ আকারে আমাদের হৃদয়গম্য করা অসাধারণ ক্ষমতার কাজ । ব্যাসবাল্মীকি-কালিদাসগণ এই কাজ করিয়া আসিয়াছেন । এইবার অামাদের সমস্ত আলোচ্য বিষয়কে এক কথায় বলিতে গেলে এই বলিতে হয়, সাহিত্যের বিষয় মানবহৃদয় এবং মানবচরিত্র । কিন্তু মানবচরিত্র, এটুকুও যেন বাহুল্য বলা হইল। বস্তুত বহিঃপ্রকৃতি এবং, মানবচরিত্র মানুষের হৃদয়ের মধ্যে অনুক্ষণ যে আকার ধারণ করিতেছে, যে সঙ্গীত ধবনিত করিয়া তুলিতেছে, সেই চিত্র এবং সেই গানই সাহিত্য । ভগবানের আনন্দ প্রকৃতির মধ্যে, মানবচরিত্রের মধ্যে আপনাকে আপনি স্থষ্টি করিতেছে । মামুষের হৃদয়ও সাহিত্যে আপনাকে স্বজন করিবার, ব্যক্ত করিবার চেষ্টা করিতেছে । এই চেষ্টার অন্ত নাই, ইহা বিচিত্ৰ । কবিগণ মানবহৃদয়ের এই চিরন্তন চেষ্টার উপলক্ষ্যমাজ ।