পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৪০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম সংখ্য । ] বাড়াইয়া দেখিল—রেলোয়ে কৰ্ম্মচারীর বাধা কাটাইয়। একজন লোক কোনক্রমে চলন্ত গাড়িতে উঠিয়াছে এবং টানাটানিতে তাহার চাদর কৰ্ম্মচারীর হাতেই রহিল্পী গেছে । চাদর লইবার জন্ত সে ব্যক্তি যখন জানলা হইতে ঝুকিয়া-পড়িয়া হাত বাড়াইল, তখন রমেশ স্পষ্ট চিলিতে পারিল, সে আর কেহ নয়, অক্ষয় । এই চাদর-কাড়াকড়ির দৃশ্যে অনেকক্ষণ পর্য্যস্ত কমলায় হাসি থামিতে চাহিল না । রমেশ কহিল—“সাড়ে দশটা বাজিয়া গেছে—গাড়ি ছাড়িয়াছে, এইবার তুমি ঘুমাও ।” বালিকা বিছানায় শুইয়া যতক্ষণ না ঘুম আসিল, মাঝে মাঝে খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । কিন্তু এই ব্যাপারে রমেশের বিশেষ কৌতুকবোধ হইল না । রমেশ জানিত, কোন পল্লিগ্রামের সহিত অক্ষয়ের কোন সম্বন্ধ ছিল না -- সে পুরুষাঙ্কক্রমে কলিকাতাবাসী আজ রাত্রে এমন উদ্ধশ্বাসে সে কলিকাতা ছাড়িয়া কোথায় যাইতেছে? রমেশ নিশ্চয় বুঝিল, অক্ষয় তাছারই অমুসরণে চলিয়াছে । অক্ষয় যদি তাহাদের গ্রামে গিল্প অমুসন্ধান আরম্ভ করে এবং সেখানে রমেশের থপক্ষবিপক্ষমণ্ডলীর মধ্যে এই কথা লইয়। একটা বঁটাঘাটি হইতে থাকে, তবে সমস্ত ব্যাপারটা কিরূপ জঘন্ত হইয়। উঠিবে, তাহাই কল্পনা করিয়া রমেশের হৃদয় অশান্ত হইয়া উঠিল তাহাদের পাড়ার কে কি বলিবে, কিরূপ বোট চলিবে, তাহ রমেশ যেন প্রত্যক্ষ ौकांख्ि లిసిసి বৎ দেখিতে লাগিল । কলিকাতার মত সহরে সকল অবস্থাতেই অন্তরাল খুজিয়া পাওয়া যায় —কিন্তু ক্ষুদ্র পল্লীর গভীরতা কম বলিয়াই অল্প আঘাতেই তাহার আন্দোলনের ঢেউ উত্তাল হইয়া উঠে । সেই কথা যতই চিত্ত। করিতে লাগিল, রমেশের মন ততই সঙ্কুচিত হইতে লাগিল । বারাকপুরে যখন গাড়ি থামিল, রমেশ মুখ বাড়াইয়া দেখিতে লাগিল, অক্ষয় নামিল না । নৈহাটিতে অনেক লোক উঠানামা করিতে লাগিল, তাহার মধ্যে অক্ষয়কে দেখা গেল না । একবার বৃথা আশায় বগুলাষ্টেশনেও রমেশ ব্যগ্র হইয়া মুখ বাড়াইল— অবরোহীদের মধ্যে অক্ষয়ের চিহ্ল নাই । তাহার পরের আর কোনো ষ্টেশনে অক্ষয়ের নামিবার কোন সম্ভাবনা সে কল্পনা করিতে পারিল না । অনেক রাত্রে শ্রান্ত হইয়। রমেশ ঘুমাইয়। পড়িল । পরদিন প্রাতে গোয়ালন্দে গাড়ি পৌছিলে রমেশ দেখিল, অক্ষয় মাথায়-মুখে চাদর জড়াইয়া একটা হাতব্যাগ লইয়া তাড়াতাড়ি ষ্টীমারের দিকে ছুটিয়া চলিয়াছে। যে ষ্টীমারে রমেশের উঠিবার কথা, সে ষ্টীমার ছাড়িবার এখনো বিলম্ব আছে । কিন্তু অন্ত ঘাটে আর একটা ষ্টীমার গমনোন্মুখ অবস্থায় ঘনঘন বঁাশী বাজাইতেছে । রমেশ জিজ্ঞাসা করিল, “এ ষ্টীমার কোথায় যাইবে ?” উত্তর পাইল, “পশ্চিমে ।” “কতদূর পর্য্যন্ত যাইবে ?” *জল না কমিলে কাশী পর্য্যত্ত বায় ।” শুনিয়া রমেশ তৎক্ষণাৎ সেহ ষ্টীমারে