পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় তৃতীয় খণ্ড.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

હ૭ বঙ্গদর্শন । [ ৩য় বর্ষ, জ্যৈষ্ঠ । তখন রমেশ তাহার সমস্ত ভার লইল । যাহাতে যথাসময়ে তাহার স্নানাহার হয়, বসনভূষণের কোন অভাব না ঘটে, রমেশ তাহার বিশেষ ব্যবস্থা করিয়া দিল। প্রতিবেশীদের মধ্যে : এমন ঘর ছিল না, যে ঘরে রমেশের বিবাহ উপলক্ষ্যে শোকের কারণ না ঘটিয়াছে । সেইজন্ত পাড়া হইতে বধুর সঙ্গিনী কেহ জুটিল না। রমেশের বিশেষ অনুনয়ে বাড়ীর বৃদ্ধ ঝি বালিকার কাজকৰ্ম্ম করিয়া দিত, কিন্তু নববধূই যে এই পরিবারটিকে ধবংস করিয়া দিল, এই বিশ্বাস সে সৰ্ব্বদাই তাহার সম্মুখ এবং পশ্চাতে স্পষ্টভাষায় ব্যক্ত করিয়া হৃদয়ভার লঘু করিবার চেষ্টা করিতে লাগিল। বলা বাহুল্য, তাহার সান্তনালাভের এই উপায়টি নববধুর পক্ষে শাস্তিজনক হয় নাই । এ বাড়ীতে তাহার খাওয়া, শোওয়া, বস অভিশাপের কণ্টকে আকীর্ণ হইয়া উঠিল । রমেশ যেখানে যত ইংরাজি ছবির বই ও বাংলা গল্পের বই সংগ্ৰহ করিতে পারিল, সমস্ত তাহাকে আনিয়া দিল । বালিকার এ বয়সে সমবয়স্ক-মানুষ-সঙ্গের অভাব বইয়ে মিটাইতে পারে না । কিন্তু অগত্যা শোকাচ্ছন্ন সুদীর্ঘ দিন তাহাকে বইয়ের পাতা উণ্টাইয় কাটাইতে হইত। o: শ্রাদ্ধশান্তি শেষ হইবার পরেই রমেশ বধুকে লইয়। অন্যত্র যাইবে স্থির করিয়াছিল— কিন্তু পৈতৃক বিষয়সম্পত্তির ব্যবস্থা ন৷ করিয়া তাহার শীঘ্র নড়িবার জো ছিল ন। * পরিবারের শোকাতুর স্ত্রীলোক-গণ তীর্থবাসের জন্ত তাহাকে ধরিয়া পড়িয়াছে, তাহারও রিধান করিতে হইবে । | এই সকল কাজকৰ্ম্মের অবকাশকালে রমেশ প্রণয়চর্চায় অমনোযোগী ছিল না। বালিকণর সহিত কেমন করিয়া যে প্রণয় হইতে পারে, এই বি-এ-পাস্কর ছেলেটি তাহার কোন পুথির মধ্যে সে উপদেশ প্রাপ্ত হয় নাই । সে চিরকাল ইহা অসম্ভব এবং অসঙ্গত বলিয়াই জানিত । কিন্তু তবু কোন বই-পড়া অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিছুমাত্র না মিলিলেও, আশ্চৰ্য্য এই যে, তাহার উচ্চশিক্ষিত মন ভিতরে-ভিতরে একটি অপরূপ রসে পরিপূর্ণ হইয়। এই ছোট মেয়েটির দিকে অবনত হইয়া পড়িয়াছিল। বিলাতি লভেলে । যাহাকে প্রেম বলিয়া বর্ণনা করে, এই ভাবটি ঠিক তাই কি না, সে কথা বলা শক্ত । কিন্তু ইহাকে যে নামই দেওয়া যাক, ইহাও মনকে অপুৰ্ব্ব, মাধুর্য্যে অভিষিক্ত করিতে পারে। রমেশ ইহাকে ধিক্কার দিবার কোন কারণ খুজিয়া পাইল না । এই সুকুমারী তরুণ-মেয়েটি ষে তাহারি বধূ, এ ষে তাহারি ঘরের লক্ষ্মীপদ গ্রহণ করিতে আসিয়াছে, ইহার এই সরল নরীন জীবনটি ধীরে ধীরে প্রতিদিন বৰ্দ্ধিত হইয়া তাহার সমস্ত পরিবারকে, তাহার সমস্ত সুখঃখকে পল্লবে-পুষ্পে কল্যাণে-মাধুৰ্য্যে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিবে, এই ক্ষুদ্রটির মধ্যে নেই বিস্তৃত ভবিষ্যতের প্রীতিরসসিক্ত মঙ্গলইতিহাস অনুধাবন করিয়া রমেশের হৃদয় সহসা আষাঢ়ের নবান্ধুমেন্থর প্রথম মেঘাগমের মত আপনার সমস্ত সরসতা লইয়া ইহার উপরে ব্যাপ্ত হইয়া গেল। . রমেশ আজকাল আপনার পূর্বকৃত প্রতিজ্ঞাগুলি সহজে স্মরণ করিতে চায় না। স্মরণে পড়িলেও সে এখন