পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা | স্বাধীনতা সম্প্রসারণের ও প্রজাতন্ত্রপ্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী ছিলেন, অন্যদিকে সেইরূপ যুরোপের স্বেচ্ছাতন্ত্রের একমাত্র অধিনায়ক, রুশিয়ার জারেরও ( Czar ) পক্ষ সমর্থন করিতেন। লোকে এ অসঙ্গতির অর্থও বুঝিতে পারে নাই। এই জন্য তাহারা অনেক সময়ে ষ্টেডের সাধুত সম্বন্ধেও সন্দিহান হইয়াছে। কেবল বাহির হইতে ষ্ট্রেডের কার্য্যাকার্য্যের বিচার করিলে এ অসঙ্গতির রহস্য ভেদ করা সস্তব হয় না । সিসিল রেড সকে এবং “জারকে" সাধারণ লোকে দূর হইতে এবং বাহির হইতেই সৰ্ব্বদা দেখিয়াছে। তাহীদের নিকটে যাইয় তাহদের প্রাণের অন্তঃপুরে কখনো প্রবেশাধিকার পায় নাই । ষ্টেড, এই দুই জনকেই অতি ঘনিষ্ঠভাবে জানিবার ও বুঝিবার সুযোগ পাইয়াছিলেন। বন্ধুর নিকট বন্ধু যেমন প্রাণের সকল পর্দা খুলিয়া দিয়া নিঃসঙ্কোচে দাড়ায়, রোডস এবং “জার" দু’জনেই সেইরূপ একদিন ষ্টেডের নিকটে আত্মপ্রকাশ করিয়াছিলেন । ষ্টেডের প্রকৃতিগত অকপটতার সংস্পর্শে জারের জরিত্বের বহিরাবরণ আপন হইতেই সরিয়া গিয়াছিল। ষ্টেডের অনাবৃত ম্যুত্বের সম্মুখে "জার” জাররূপে নহে, কিন্তু শুদ্ধ মাকুযরূপে একদিন দাড়াইয়াছিলেন। “জারের” ভিতরে যে মনুষত্ববস্তু আছে, তাহারই দ্বারা ষ্টেড সৰ্ব্বদা জারের বাহিরের কার্যাকাৰ্য্যের বিচার করিতেন। এই জন্য রুশীয় গভর্ণমেণ্টের অত্যাচার অবিচারে জারের প্রতি ষ্টেডের স্বাভাবিক শ্রদ্ধা ও প্রীতির কোনো ব্যাঘাত উৎপাদন চরিত-চিত্র X8X করিতে পারে নাই । রুশীয় গভর্ণমেণ্ট কেবল জারকে লইয়া নহে। সে গভর্ণমেণ্টের কাৰ্য্যাকার্য্যের জন্য জার কতটা দায়ী এবং প্রকৃতপক্ষে তার কোনো দায়িত্ব আছে কি না এ কথা বল। কঠিন। রুশের বিশাল ও জটিল শাসনযন্ত্রে জার একট সামান্ত অঙ্গ মাত্র ; রুশিয়ার রাজশক্তি ও প্রজা-প্রকৃতির অনাদিকু ৩ কৰ্ম্মবশে রুশের স্বেচ্ছাতন্ত্র গড়িয়া উঠিয়াছে, কেবল রাজার ইচ্ছায় বা আভিজাতবর্গের চেষ্টায় ইহা গড়িয়া উঠে নাই। এখন যে স্বেচ্ছাতন্ত্র কেবল রুশরাজের উদার অভিপ্রায়ের বলে ভাঙিয়া চুরিয়! আবার নূতন করিয়া গড়িয়া উঠিতে পারে না। রাজা ও প্রজা উভয়ের কৰ্ম্মক্ষয় ন হইলে, কখনই রাজ্যের এ সংস্কার সাধিত হইবার নহে। গুপ্তহত্যায় কৰ্ম্মবোঝ বাড়িয়াই যায়, ক্ষয় হয় না। এ পথ স্বাধীনতার পথ নহে । সাধারণ প্রকৃতিপুঞ্জ যে দিন আপনার কৰ্ম্মক্ষয় করিতে পরিবে, তাহদের পুরুষ পরম্পরাগত তমঃ নষ্ট হইয়া যে দিন তাহীদের আত্মচৈতন্তের উদয় হইবে, সে দিন গুপ্তহত্যারও প্রয়োজন থাকিবে না, বিদেহেরও প্রয়োজন অনাবশ্যক হইবে ; কিন্তু আপন হইতেই রাজাপ্রজার পরস্পরের অধিকারের মধ্যে সঙ্গতি ও সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠিত হইয়া সকল সমস্যার মীমাংসা হইয়া যাইবে । এই মীমাংসার পথে রুশের বর্তমান জার প্রকৃতপক্ষে কোনই অন্তরায় নহেন। ইহার প্রধান অন্তরায় বিপ্লবপন্থিগণ । বিপ্লবপন্থিগণ যতদিন গুপ্তহত্য প্রভৃতি আহি তাচর হইতে প্রতিনিবৃত্ত না হইতেছেন, ততদিন পর্য্যন্ত