পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/১৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

×8 সভ্যতা ও সাধনা যাতে আমি অবলম্বন করি, তার সিদ্ধান্ত সকলকে যা”তে আমি সত্য বলিয়৷ আলিঙ্গন করি, তার জন্য তিনি একান্ত ব্যগ্র হইয় উঠেন। আমি যেমনটা আছি, তেমনটা থাকিয় যাইব, ইহাতে তার প্রীতির ব্যাঘাত জন্মিয় থাকে। যেখানে প্রীতির একান্ত ব্যাঘাত নাও জন্মে, সেখানেও প্রীতি আর প্রীতি থাকে না, কিন্তু নিরতিশয় স্নিগ্ধ অন্তকম্পীর আকার ধারণ করে।. মৰ্যাদা, সন্মান, ভক্তি, ইহাই সত্য প্রীতির প্রাণ। প্রীতি যেখানে এই মৰ্য্যাদা-জ্ঞান রক্ষা করিতে পারে না, সেখানে তাহার প্রীতিত্ব নষ্ট হইয়া, তাহ অনুকম্পাতে পরিণত হয়। পাদ্রিজন-সুলভ প্রীতি তাই প্রকৃত পক্ষে প্রীতি নহে, কিন্তু অনুকম্পমাত্র। হিন্দুর সাধনায় মানুষকে প্রীতি কৱিবার পন্থ আছে, র্তাহাকে ভক্তি. দিবীর বিধান আছে, কিন্তু এই পাদ্রিজন-সুলভ অনুকম্প করিবার স্থান নাই । যে যাকে অনুকম্প করে, সে নিজকে তার ওনুকম্পর পাত্র অপেক্ষী শ্রেষ্ঠ বলিয়া ভাবিবেই ভাবিবে। মুখে স্বীকার না করিলেও, এই শ্রেষ্ঠত্বাভিমান অন্তঃসলিলার মত, তাহার প্রাণের ভিতরে লুকাইয়া থাকিবেই থাকবে। এই শ্রেষ্ঠত্বাভিমান যে স্থত্রে ও যে আকারেই মানুষের প্রাণে প্রবেশ করুক না কেন, ইহা যে ধৰ্ম্মসাধনের আ ত্যন্তিক শক্র, হিন্দু ইঙ্গ জানেন । সুতরাং তিনি লোককে ভক্তি দিতেই চাহেন, তাঙ্গকে অনুকম্প করিবার জন্য কদাপি ইচ্ছা করেন না। আর যে যা’কে ভক্তি করে, সে তার গুণভাগেরই প্রতি লক্ষ্য করিয়া চলে, দোষভাগকে তন্ন তল্ল করিয়া অন্বেষণ করে না। তা’কে ভক্তি দিতেই সে চাচ্ছে, তাকে উদ্ধার করিবার জন্য বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, আষাঢ়, ১৩১৯ ব্যাকুল হইয় উঠে না িজগতের প্রচারকধৰ্ম্ম সকলে দুনিয়ার লোককে উদ্ধার করিবার বাসনাটাই অত্যন্ত প্রবল। হিন্দুর এ বাসন নাই বলিয়া, হিন্দুর ধৰ্ম্ম প্রচারক-ধৰ্ম্ম নহে। আর ধৰ্ম্মবস্তুকে মানুষের মূল প্রকৃতির অন্তঃস্থলে প্রতিষ্ঠিত করিয়াই, হিন্দুর ধৰ্ম্ম প্রচারক-ধৰ্ম্ম হইতে পারে নাই । কারণ, মামুযের ভিতরকার প্রকৃতি তইতেই যখন তার ধৰ্ম্ম ফুটিয়া উঠে, তখন ভিন্ন ভিন্ন মানুষের অন্তঃপ্রকৃতির বিভিন্নত নিবন্ধন, তাহীদের ধৰ্ম্মও নিশ্চয়ই ভিন্ন ভিন্ন আকার ধারণ করিবে ; আর এই তত্ত্বটী অতি দৃঢ় ভাবে ধরিয়াছিলেন বলিরাই হিন্দুর ধৰ্ম্ম যেমন একদিকে পৃষ্ঠস্থান, মুসলমান প্রভৃতি মতবদ্ধ ধৰ্ম্মের ন্তায় দুনিয়ার লোককে আপনার ভিতরে টানিয়া আনিবার চেষ্টা করেন নাই; সেইরূপ নিজের ভিতরেও অশেষ প্রকারের বিচিত্রতার সমাবেশ করিতে পারিয়াছেন। যেভাবে ও যে অর্থে খৃষ্টীয়ান ধৰ্ম্ম বা মুসলমান ধৰ্ম্মকে একটা ধৰ্ম্ম বলা যাইতে পারে, হিন্দুর ধৰ্ম্মকে সেই ভাবে ও সেই অর্থে একটা ধৰ্ম্ম বলা যায় না । বিশাল হিন্দুর ধৰ্ম্মের আশ্রয়ে এমন অনেক লোক আছেন, যাঙ্গাদিগকে মোটামুটি জড়োপাসক বল নিতান্ত অসঙ্গত হইবে না । ইহার যে কাষ্ঠলোঁষ্ট্রের পূজা করেন, তাহা নহে। জগতের অতিশয় নিম্নস্তরের সাধনাতেওঁ জড় বলিরা জড়ের উপাসনা নাই। কিন্তু এই সকল জড়োপাসক জড় তাধারে অজড়ের অধ্যাস করিয়াই, ঠাহীর পূজা করেন। এই অধ্যাসজনিত উপাসনাকে ৰেদান্তে প্রতীকোপাসন বলেন। হিন্দুর ধৰ্ম্মে যেমন এই নিম্নতম