পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২০২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা ] ধন্যবাদ-ভাজন হইয়াছেন। কতিপয় মুসলমান যুবকের মধুর কবিতা পাঠ করিলে কাহার সদয়ে স্বদেশানুরাগ উদ্দীপিত না হয় ? মীর মুশরেফ হোসেনের অগাধ বিষাদ্ৰব “বিষাদসিন্ধু” পাঠ করিলে কাহার চক্ষে জল না আইসে,কোন পাষাণদ্রবীভূত নাহয় ? মুসলমান সম্পাদকের স্বপরিচালিত, মুসলমান পুরুষ ও রমণীর সুচিন্তিত প্রবন্ধ-মালায় সমলঙ্কত “ কোহিনূর” ষেরূপ উন্নতমস্তকে পদবিক্ষেপ করিয়া বাঙ্গালীর সাময়িক-সাহিত্য-সমাজে চলিতেছে, তাহাতে কাহার হৃদয় আশার আনন্দে উৎফুল্ল না হয় ? আবার সহৃদয়, মুলেখক, শান্তস্বভাব, মিষ্টভাষী ও সুন্দরচরিত্র, দরিদ্র মুলী তালিমুদ্দীন সরকারের ষ্ঠায় কত উৎসাহী মুসলমান বন-জাত কুসুমের মত লোক-নয়নের অন্তরালে থাকিয়া কেবল জীবন-যুদ্ধেই জীবনান্ত হইতেছেন, আপনার অস্তিত্বের নিদর্শন স্বরূপ একটুকু হাস্য, এক বিন্দু অশ্র, কিম্ব একটি দীর্ঘ নিশ্বাসও স্বদেশের সাহিত্য-ভাণ্ডারে রাখিয়া যাইতে পারিতেছেন না, তাহার গণনা কে করিবে ? কোন কোন মুসলমানের সাধ, বঙ্গ-ভাষার আসনে উর্দু ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাহার বঙ্গ-ভাষাকে মাতৃভাষা বলিতে চাহেন না, ঠাঙ্গদের অভিধানে বাঙ্গালী-শব্দটি হিন্দুশদের প্রতিশব্দমাত্র। কিছুদিন পূৰ্ব্বে কোন কোন উৰ্দুও মনে করিতেন, সংস্কৃতই আমাদের পঠিভাষী, কেবল সংস্কৃত সাহিত্যই পাঠের Rাগ্য ; বঙ্গ-ভাষা কেবল অশিক্ষিত নিয়শ্রেণী এবং স্ত্রীলোকের ভাষা, কেবল নিত্য-ব্যবহার্য্য ধীরেচিত ভাষা । কিন্তু এখন আর সে দিন "াই ; এখন মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতরাজ সভাপতির অভিভাষণ )నa শ্ৰীযুক্ত যাদবেখর তর্করস্ট্রের ন্যায় দেশ পূজা পণ্ডিতও বঙ্গ-ভাষাকে অবলম্বন করিয়া আপনার অগাধ পণ্ডিত্য এবং অসাধারণ বাগিাত্বের পরিচয় দিতে কষ্ট, লজ্জা বা অপমান বোধ করেন না । সৌভাগ্যের বিষয়, এই অস্বাভাবিক সংস্কৃতগ্ৰীতি বা উর্দুপ্রীতি এই প্রান্ত প্রদেশে প্রবেশ করে নাই –এই সুদূর নিভৃত উপত্যকটি অনেক কুরাতাস হইতেই রক্ষা পাইয়া আসিতেছে ; ভরসা করি, ভবিষ্যতেও অনেক কুবাতাসই ইতাকে স্পর্শ করিতে পরিবুে না । ংস্কৃত এবং উৰ্দু, আমাদের পরম আদরের জিনিস বটে ; সংস্কৃত না শিখিয়া হিন্দু, বা উর্দু না শিথিয়া মুসলমান শিক্ষিত হইয়াছেন বলিয়া মনে করিতে পারেন না, সত্য ; কিন্তু সুপুত্র যেমন যেখানে যাহ। উপার্জন করেন, জননীর হস্তে তাঙ্গ সমর্পণ করিয়া কৃতাৰ্থ হন, সেইরূপ দেশের যিনি সুসস্তান, তিনি যে ভাষাই অধ্যয়ন করুন, আর হিন্দু বা মুসলমান যে জাতিই হউন, তিনি যেখানে যে সম্পদটুকু পাইবেন, তাঙ্গাই যত্ন করিয়া জননী জন্মভূমির সাহিত্য-ভাণ্ডারে সঞ্চয় করিবেন, তাহাই দিয়া মাতৃভাষার সৌন্দর্য্য, ঐশ্বৰ্য্য এবং গৌরব বৰ্দ্ধিত করবেন, আমাদের জননী জন্মভূমি এই প্রত্যাশষ্ট করেন । ধনবনের সাহিত্য-সেব! লক্ষ্মী এবং সরস্বতীর বিরোধ চির-প্রসিদ্ধ ! এ বিরোধ কেবল এ দেশে নহে, সৰ্ব্বত্র । লক্ষ্মী এবং সরস্বতী যদি পরম্পর পরম্পরের সপত্নী না হইতেন, তাঙ্গ হইলেও এ বিরোধ