পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১ম সংখ্যা ] বিবর্তন-ইতিহাসেও এটা সৰ্ব্বদাই দেখা • গিয়াছে। ভগবান বুদ্ধদেবের সামসাময়িক আৰ্য্যগণ সকল্পেই বা অধিকাংশই তাহার শরণাপন্ন হন নাই। কেহ কেহ যেমন তাহাকে গ্রহণ করিয়াছিলেন, তেমনি কেহ কেহ আত্যস্তিক আগ্রহ সহকারে তাহার শিক্ষা ও সাধনার প্রতিরোধও করিয়াছিলেন । আর বহুসংখ্যক লোকই তাহার আনুগত্যও গ্রহণ করেন নাই, তাহার প্রতিপক্ষতাও করেন নাই, কেবল যাহা ছিল, তাহাকেই ধরিয়া রহিয়াছিলেন। মহাপ্রভুর সময়ে, আমাদের এই বাংলাদেশেও তাঁহাই দেখা গিয়াছে আর আমাদের এ কালেও যে যুগভাবপ্রবর্তক মহাজনের আবির্ভাব হয় নাই, ধুমনে! তো নয়। কিন্তু সকলেই কি র্তাহাদিগকে আশ্রয় করিয়াছেন, বা করিতে পারিয়াছেন ? • ফলতঃ এরূপ সৰ্ব্বদাই হইয়াছে ও সৰ্ব্বদাই হইবে। কারণ, সকল মানুষের প্রকৃতি সমান নয়। কারে প্রকৃতি বা তামসিক, কারে বা রাজসিক, আর কারো বা শুদ্ধ সাত্ত্বিক । যারা নিতান্ত তামসিক, তারা এ মহাজনপন্থী অবলম্বন করিতে পারেন না। র্তাদের অবিবেক, তাদের জড়ত, তাদের ভয়প্রমাদাদি এ পথে চলিবার একান্ত অন্তরায় হইরা রহে । সেইরূপ যারা নিতান্তই•সাত্ত্বিক, র্যাহাঁদের তর্ম ও রজঃ উভয়ই অস্তরস্থ সত্ত্বগুণের দ্বারা একান্ত অভিভূত হইয়াছে, সেই সকল সহজসিদ্ধ বা কৃপাসুিদ্ধ সাধু সজ্জনেরা, যুগ্মধৰ্ম্ম প্ৰবৰ্ত্তক মহাজনগণের প্রতি ভক্তিমুনি হইয়াও, প্রয়োজনীভাবে, প্রত্যক্ষরূপে তাহদের ঐকাস্তিক আনুগত্য গ্রহণ করিয়া, তাহীদের চরিত-চিত্র ১৩ কৰ্ম্মস্রোতে আপনাদিগকে ভাসাইয়া দেন না। যাহাদের অন্তঃপ্রকৃতি রজোপ্রধান, তাহারাই প্রত্যেক যুগসন্ধিস্থলে, সমাজের প্রবুদ্ধগতিশক্তিকে আশ্রয় করিয়া আপনাদের প্রকৃতির চরিতার্থতাঅন্বেষণ করেন। আর ইহীদের মধ্যে যাহাঁদের অন্তরস্থ রজোগুণ বদ্ধায়ুমান সত্ত্বের দ্বারা অভিভূত হইতে আরম্ভ করে, তাহারাই যুগপ্রবর্তক মহাজনগণকে একান্তভাবে অবঁলম্বন করিতে অগ্রসর হন, কারণ, যুর্গপ্রবর্তক মহাজনগণ আপনারা ত্রিগুণাতীত হইলেও, চতুঃপার্শ্বস্থ রজোগুণপ্রধান লোকদিগকে অবলম্বন করিয়াই স্ব স্ব আবির্ভাবের বিশেষ প্রয়োজন সিদ্ধি করিয়া থাকেন। যুগপ্রবর্তক মহাজনগণের প্রথম শিষ্যেরা সকলে না হউন, অনেকেই, রজোপ্রভাবে তাহীদের শরণাপন্ন হইয়া, প্রাচীন ও প্রচলিত সংস্কার ও পন্থীকে পরিহার করিয়া, নূতন সাধন ও শাসন গ্রহণ করেন। ক্রমে এই নূতন সাধন ও শাসনের ফলেই, তাহীদের আস্তরস্থ সত্ত্বগুণ বৃদ্ধি পাইয়া প্রথমে তাহাঁদের রজোগুণকে অভিভূত করে, পরে, ইহঁদের মধ্যে যাহার বিশেষ সুকৃতিসম্পন্ন, তাহারা ক্রমে ত্রিগুণাতীত হইয়া, ভাগবতী তনু লাভ করিয়া থাকেন। কিন্তু পরিণামে সৰ্বাধিক্য হইলেও, আদিতে, নূতন পন্থা অবলম্বন সময়ে, রজোগুণের অতিশয্য থাকা একান্তই আবণ্ঠক হয়। নতুবা সকলে যুগপ্রবর্তকমহাজনপন্থা অবলম্বন করিতে পারে না। আর এই কারণেই হিন্দুর যাবতীয় যুগাবতার ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভব। কেবল এক পরশুরামই, অবতারগণমধ্যে, ব্রাহ্মণ ছিলেন। কিন্তু তিনিও ব্রাহ্মণকুলে জন্মিয়াছিলেন মাত্র ; ব্রাহ্মণ্যধৰ্ম্ম অবলম্বন করেন