পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/২৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२२७ করিয়াছে, তাহা কখনই লাভ করিতে পারিত না । ফলতঃ সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা অতিশয় অলোকসামান্ত, কিম্বা তাহার পাণ্ডিত্যের গভীরতা বা প্রসার যে খুবই বেশী, তাহা নহে। তাহার অপেক্ষা শ্রেষ্ট মনীষী র্তার পূর্বেও অনেকে এই বাংলাদেশে জন্মিয়াছেন ; তার জীবনকালেও অনেকে ছিলেন এবং আছেন । কৃষ্ণদাসের মত রাষ্ট্রীয় বুদ্ধি কিম্বা রাজেন্দ্রলালুের মত পাণ্ডিত্য সুরেন্দ্রনাথের কখনই ছিল না । এমন কি কোনো কোনো দিক্ দিয়া শিশিরকুমারের প্রতিভাও সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা অপেক্ষা শ্রেষ্ট ছিল বলিয়াই মনে হয়। অথচ সুরেন্দ্রনাথ আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে অক্ষয় কীৰ্ত্তি অর্জন করিয়াছেন, ইহঁাদের কেহই সে কীৰ্ত্তি অর্জন করিতে সক্ষম হন নাই। ইহার প্রধান কারণ এই যে স্বরেন্দ্রনাথের প্রতিভা ও পুরুষকারের সঙ্গে দৈবের যে অনুকূল যোগাযোগ স্থাপিত হইয়াছে, এ দেশের তার সমসাময়িক কিম্বা অব্যবহিত পূৰ্ব্ববর্তী অন্য কোনো লোকনায়কগণের ভাগ্যে তাহ ঘটে নাই। কৃষ্ণদাস, রাজেন্দ্রলাল,শিশিরকুমার আপন আপন শক্তি অনুসারে সকলেই স্বদেশের সেবা করিয়া গিয়াছেন। ইহঁাদেরসাধনবলে বাংলার আধুনিক রাষ্ট্রীয়জীবন অনেক পরিপুষ্টিলাভ করিয়াছে। কিন্তু সত্য কথাবলিতে গেলে ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাসে ইহঁদের কাহারে নাম থাকিবে কি না সন্দেহ। পণ্ডিতসমাজে অসাধারণ প্রতিভাশালী প্রত্নতত্ববিদ বলিয়া অনেক দিন রাজেন্দ্রলালের খ্যাতি থাকিবে । বাংলার আধুনিক রাষ্ট্রীয়জীবনের ক্রমবিকাশের ইতি হাসে কৃষ্ণদাসের এবং শিশিরকুমারের নামও বঙ্গদর্শন [ ১২শ বৰ্ষ, শ্রাবণ, ১৩১৯ কতকটা থাকিবারই কথা। উনবিংশ শতাব্দীর ভারতের দেশীয় সংবাদপত্রের ইতিহাসেও এই দুই বাংলাসংবাদপত্র সম্পাদকের নাম কতকটা থাকিয়া যাইবে। কারণ “হিন্দু-প্যাটিয়ট” ও “অমৃত-বাজার”কে উপেক্ষা করিয়া এদেশের আধুনিক সংবাদপত্রের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নহে। কিন্তু আধুনিক ভারতের ইংরাজী-শিক্ষাপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের জীবনে ও চরিত্রে সুরেন্দ্রনাথের প্রতিভা ও পুরুষকার যে শক্তিসঞ্চার করিয়াছে, কৃষ্ণদাস কিম্বা রাজেন্দ্রলাল কিম্বা শিশিরকুমার হইতে তাহ হয় নাই। সুরেন্দ্রনাথের অসাধারণ বাগিতা-শক্তি ইহার একটা প্রধান কারণ বটে ; কিন্তু কেবল এই বাগ্মিতাপ্রভাবেই সুরেন্দ্রনাথ এই কৃতিত্ব লাভ করিতে পারিতেন না। সুরেন্দ্রনাথের বাগ্মিতা-শক্তি সত্য বলিতে কি, স্বরেন্দ্রনাথের বাগ্মিতাশক্তিও যে অত্যন্ত উচ্চ-অঙ্গের এমন কথাও বলা যায় কি না সন্দেহ । সুরেন্দ্রনাথের ইংরেজী-বক্তৃতার শব্দ-সম্পদ অতি অদ্ভুত, ইহা অস্বীকার করা যায় না। ভারতবর্ষের বক্তাদের ত কথাই নাই, ইংরেজবাগিগণের বক্তৃতাতেও এরূপ অসাধারণ শব্দসম্পত্তি অতি অল্পই দৃষ্ট হয়। কিন্তু সুললিত শব্দযোজনায় সুরেন্দ্রনাথের বাগ্মিতা যে অনন্তসাধারণ দক্ষতালাভ করিয়াছে, চিন্তার গভীরতায় কিম্ব ভাবের মৌলিকতায় অথবা যুক্তিপরম্পর-প্রয়োগেকোনোসিদ্ধান্তবিশেষের প্রতিষ্ঠার নিপুণতায় সেরূপ শ্রেষ্টত্ব লাভ করে নাই। সুরেন্দ্রনাথের বাগিতা বহুল পরিমাণেই ধ্বন্যাত্মক। সঙ্গীতের শক্তিও