পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8১৬ বছমান্তাস্পদ ব৷ অতিশয় প্রীতিভাজন অতিথি-অভ্যাগত বাড়ীতে অধিলে, বাড়ীর আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই যেমন র্তার সেবার আয়োজনে নিযুক্ত হয় ; হিন্দুর দুর্গোৎসব প্রভৃতি বিশেষ বিশেষ পৰ্ব্বাহে, বড় বড় পূজার সময়, যজমানের বাড়ীর ও আত্মীয়কুটুম্বদিগের সকল লোকে সেইরূপ কোনও না কোনও বিষয়ে, দেবতার অর্চনার আয়োজন করিয়া থাকেন। আর এই যে সকলে মিলিয়া পূজার ব্যবস্থা করিতে হয়, ইহাতে পূজার ফলাফলের ভাগীও সকলেই হইয়া থাকে। এই পূজার ভিতর দিয়া যতটা ধৰ্ম্মানুশীলন হইতে পারে, তাহা স্বল্পবিস্তর পরিমাণে, সকলেই লাভ করিয়৷ থাকেন। তার পর দুর্গোৎসবের আর একটা অতি বড় দিকৃ আছে—সেটা সামাজিক লোকলৌকিকতার दैि ! আধুনিক সভ্যতার চাপে এদিকূট। ক্রমে লোপ পাইবার উপক্রম হইয়াছে। কিন্তু আমি যে দুর্গাপূজার কথা সাক্ষাৎসম্বন্ধে জানি, তাঙ্গতে এদিকটা খুবই ফুটিয়াছিল। একদিকে প্রাতঃকালে দেবতার পূজার যেমন ঘটা ; অন্যদিকে অপরাহ হইতে আরম্ভ করিয়া রাত্রি দ্বিপ্রহরের পর পৰ্য্যন্ত সেইরূপ লোকজনকে খাওয়াইবার ভিড়। আর সে কি খাওয়ান! পূজার আয়োজনে যেমন শ্রদ্ধা, বিনয়, ভক্তি জাগিয়া থাকিত, অতিথি-অভ্যাগতের অভ্যর্থনাতেও বঙ্গদশন [ ১২শ পর্ষ, কাৰ্ত্তিক, ১৩১৯ তেমনি ছিল। সেখানেও গৃহস্বামী গলধন্থ হইয়া, আমন্ত্রিতদিগের সম্মুখে নগ্নপদে দাড়াইয়া থাকিতেন। এ ক্ষেত্রে জাত-বর্ণের বিচার ছিন্ন না। ভিন্ন ভিন্ন জাতির অতিথির ভিন্ন ভিন্ন স্থানে, আপন আপন পংক্তিতে ভোজন করিতেন বটে ; কিন্তু গৃহকর্তা ও তার প্রতিনিধিগণ সকলেরই নিকট সমভাবে গগলগ্নীকৃতবস্ত্রে দাড়াইয়া সকলের সেবার তত্ত্বাবধান করিতেন। বরং যারা গরিব, যার নীচ জাতের, ধারা ভিন্ন ধৰ্ম্মের, তাদের নিকটে এই বিনয় সোঁজঙ্গ যেন বেশি করিয়াই ফুটিয়া উঠিত। ইহাও পূজার একটা প্রধান অঙ্গ ছিল। একটু বড় হইলে পূজার আমন্ত্রিত দিগের পরিচর্য্যার ভার আমার উপরেই অনেকটা আসিয়া পড়ে। আর এইরূপ লোকলৌকিকতার যে উন্নত উদার শিক্ষা দুর্গোৎসবের সময় পাইতাম, পরজীবনে আর কোথাও তাহ পাই নাই। এইরূপে দুর্গাপূজা শৈশবে ও বালো আমার ক্ষুদ্র জীবনের এতটা-স্থান এমনভাবে অধিকার করিয়া বসিত বলিয়া, আজও পর্যন্ত তাহার প্রভাব ও পুণ্যস্মৃতি এ প্রাণ হইতে বিন্দু পরিমাণেও মুছিয়া যায় নাই। " তাই আজও পূজার বাদ্যে প্রাণের ভিতরের শত প্রাচীন তন্ত্রী ধ্বনিত হইয় উঠে এবং দুর্গাকে মানি আর না মানি, তার এই পূজার আনন্দস্রোতের বাহিরে থাকিতে বাস্তবিকই প্রাণে ক্লেশ পাইয়া থাকি । ঐবিপিনচন্দ্র পাল ।