৯ম সংখ্যা স্বায়ুমণ্ডলে তার সাড়া পড়িয়া যায়। এই রস ক্রমে বৃদ্ধি পাইয়। গাঢ়তা লাভ করিলে, আমাদের শরীরের পেশিকে আসয় দখল করে, এবং যে পেশির মঙ্গে যে রসবিশেষের সম্বন্ধ ঘনিষ্ঠ ও অঙ্গাঙ্গী, সেই পেশিগুলির ভিতর দিয়া, তাহদের ক্রিয়াবিশেষকে আশ্রয় করিয়া, আপনার নিজস্ব রূপটীকে ফুটাইয়। তোলে। ভিন্ন ভিন্ন রসের তাড়নায় আমাদের স্বায়ুমণ্ডলে প্রথমে এবং ক্রমে আমাদের শরীবের বিভিন্ন পেশিসমূহের সাহায্যে বিবিধ অঙ্গ প্রত্যয়ে যে বিশেষ বিশেষ ক্রিয়া প্রকাশিত হয়, এবং এই সকল স্বায়বীয় ও পৈশি চু ক্রিয় নিবন্ধন আমাদের চক্ষে মুপে যে সকল ছবি ফুটয় উঠে, তাহাই এই সকল রসের রূপ । এই সকলকে লক্ষ্য করিয়াই আমাদের প্রাচীন রসশাস্ত্র প্রণেতা গণ রসের মূৰ্ত্তি কথা বলিয়াছেন। আজি কালি য়ুরোপীয়রাও শারীর তত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানের যে সকল অভিনব সত্যের আবিষ্কার করিতেছেন, তাহার প্রতি দৃষ্ট রাখিয়াও, এ সকল রসমূৰ্ত্ত পুরাণোল্লিখিত বলিয়া বাস্তবিকই যে একেবারেই কেবল উদ্ধামকল্পনাসভূত, এমন কথা বলা কতকটা অসমসাহসিকতা হইবে বলিয়াই মনে হয় । এই সকল রস-মূৰ্ত্তির প্রকাশ যে অত্যন্ত বিরল তাহাও নহে। ইহাদিগকে লক্ষ্য করাও যে 'একান্তই কঠিন, এমনও বলিতে পারি না। প্রায় সৰ্ব্বদাই এ সকল রসমূৰ্ত্তি আমাদের সংসারের দৈনন্দিন ঘটনাদির ভিতর দিয়া, আমাদিগের চারিদিকে ফুটিয়৷ উঠে। আমাদের রসাম্বভূতি প্রখর নহে রসের রূপ ¢ሳ> বলিয়া, সকল সময় আমরা এ গুলিকে দেখিয়াও দেখি না। সন্তানবতী রমণী যখন আপনার সুকুমার শিশুকে কোলে লইয়l, তাহার মুখ দেখিতে দেখিতে, সেই অসহায় সন্তানের মধ্যে আপনাকে একান্ত ভাবে ডুবাইয়া দেন, তখন তাহাকে কোন গৃহস্থ না দেখিয়াছে ? কিন্তু ক্টার এই রূপের ভিতবু দিয়াই যে বাৎসল্যরসের নিত্য মূৰ্ত্তিী ফুটিয়া উঠে, ইহা অল্প লোকেই জানে। এই রূপকেই জগতের শ্রেষ্ঠ তম চিত্রকর ও ভাস্করগণ যুরোপের ম্যাডোনা (Madonna) বা আমাদের গণেশ-জননীরূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। প্রাকৃত জনে হয় ত ভাবে যে সন্তান কোলে ধরিয়াই ম্যাডোনা ম্যাডোনা এবং গণেশজননী গণেশ্বজননী হইয়াছেন । সন্তান কোলে করিয়া না বসিলে, তাহাদের মাতৃত্বের রূপট বুঝি বা ভাল করিয়া ফুটিয়া উঠত না । কিন্তু প্রকৃত কথা তাহা নহে। সন্তানকে কোলে করিয়া যখন জননী তাহার সেই সন্তানের মধ্যে আত্মহারা হইয়া যান, তখনই তার মধ্যে বাৎসল্যের সমগ্র রসটী মূৰ্ত্তিমন্ত হইয় উঠে, সত্য ; কিন্তু সে রসের রূপটা সন্তানের মধ্যে নহে ; কিন্তু তাহার আপনার দেহেতেই আত্ম প্রকাশ করিয়া থাকে। এই জন্য সন্তানের মুখ ধ্যান করিতে করিতে ক্রমে বৎসল্যে বিতোর হইয়। যে জননীর বাস্থচেতনা লোপ পাইয়া যায়, তার ক্রোড় হইতে সে অবস্থায় ঘুমন্ত শিশুটীকে ধীরে ধীরে সরাইয়া নিলেও, তার দেহঘষ্টিকে আশ্রয় করিয়া বাৎসল্যের যে রূপট প্রকট হইয়াছিল, তাহা আমনি অপ্রকট হইবে না। পুত্ৰশোকাতুর জননী
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৫৭৬
অবয়ব