পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্য। ] করিলেও ঠাহাকে সময় সময় প্রজাগণের অসগোষ উৎপাদনকারী মাণ্ডারিনগণকে জনসাধারণের অভিপ্রায়ানুসারে বরখাস্ত করিতে বাধ্য হইতে হয়। চীন জাতির স্বায়ত্ব-শাসনের আর একটা আশ্চর্ঘ্য দৃষ্টান্ত তাহদের গুপ্তসমিতি সকলের গঠনপ্রণালী। সমস্ত চীনদেশে যত ক্ষুদ্র বা বৃহৎ ও প্রসিদ্ধ সমিতি আছে তাহাদের সভ্য-সংখ্যা নুনিকল্পে ৬০ লক্ষ হইবে। বৰ্ত্তমান রাষ্ট্রবিপ্লবের প্রধান যন্ত্রই এই গুপ্তসমিতি সকল । গত তিন চারি বৎসর মধ্যে এই সকল সমিতির অন্ততম সত্য ডাঃ মুন-ইমেট-সেন ইহীর সভ্য-সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে এবং নানা দেশ হইতে অর্থ সংগ্ৰহ করিতে প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছিলেন। এই সকল গুপ্তসমিতির দ্বারা এত সত্বর এই প্রকাণ্ড দুরূহ ব্যাপার সাধিত হইয়াছে যে পশ্চিম জগতের একেবারে তাকু লাগিয়া গিয়াছে। এই সকল গুপ্তসমিতির লোকে মাধু সম্রাটের সিংহাসনের নিম্নে যেন ডিনামাইট পুতিয়া রাখিয়াছিল, কেবল একটু অগ্নিসংযোগ সাপেক্ষ ছিল। 總 চীন জাতির আর এক আশ্চর্য্য ক্ষমতাঁ— তাহাদের সামাজিক Guild বা ব্যবসায়িক সমিতি। পরম্পরের সাহায্যের জন্ত প্রত্যেক সহরে এই সকল সমিতি আছে। কোন সভ্য বসায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হইলে, দেউলিয়৷ হইয়া পড়িলে বা,অন্য কোন কারণে বিপদগ্রস্ত হইলে অপর, মেম্বরগণ তাহাকে সাহায্য করিয়া বিপদ হইতে উদ্ধার করিয়া দেয় । এই গিল্ড (Guild) সমিতির জন্যই ইহাদের চীনে প্রজাতন্ত্র be A ব্যবসায়ে এত সমৃদ্ধি ও ইহার এত কার্যতৎপর। বর্তমান ডাকবিভাগ ও ব্যাঙ্কের স্বাক্টর বহু পূৰ্ব্ব হইতেই চীনাদের ব্যাঙ্ক ও হুণ্ডির কার্য্য চলিয়া আলিতেছে। এই প্রকার বাণিজ্য, ব্যবসায় ও স্বায়ৱশাসনপ্রণালীতে যুাহার * অভ্যস্ত, তাহারা কেন আমেরিকার প্রণালীতে . রাজ্যশাসন করিতে পরিবে না ? ૨ চীন-শাসননীতির ইহাই উজ্জ্বল অংশ। রাষ্ট্রবিপ্লবকারী সর্দারগণের সম্মুখে অধুনা কি বিষম সমস্ত উপস্থিত, তাহ একবার বিচার করিয়া দেখা যাউক । এখন প্রশ্ন এই যে রাজকীয় শাসনপ্রণালীর নীতি ও ভাব এককালে লোকের অন্তঃকরণ হইতে সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত করিয়া একদমে প্রজাতন্ত্র-শাসন-প্রণালী লোকের হৃদয় অধিকার করিতে পারিবে কি মা ? সহস্ৰ সহস্ৰ শতাব্দী হইতে চীন রাজতন্ত্রপ্রণালী দ্বারা শাসিত হইয়। আসিতেছে। এ কথা সত্য যে, এদেশের শাসন-প্রণালী প্রজাতন্ত্রের নিয়মানুসারে কতকটা হইলেই প্রজাগণ রাজাকে পবিত্রতাবে দেথিত । •এখন তাহারা সেই রাজার পরিবর্তে একজন প্রেসিডেন্টকে সেই ভাবে কখনই ধারণ করিতে পারবে না। চীন সম্রাট পবিত্র, স্বৰ্গজাত এবং স্বৰ্গীয় দেবতার প্রতিনিধি রূপে রাজ্য শাসন করিতেন। তিনি জনসাধারণের পিতা ও সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু-পুরোহিত রূপে অবস্থিত ছিলেন। প্রকৃত পক্ষে সম্রাট একাধারে সমাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি ও ধর্মনীতির কেন্দ্রস্থল ছিলেন।