পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৬২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২২ বগিয়াছেন। আর রসের রূপ কথাটা এই জন্যই আমি ব্যবহার করিয়াছি যে, রস জীবদেহে, সেই দেহের স্বায়ুমণ্ডলকে অবলম্বন করিয়া, তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পেশিসমুহের ভিতর দিয়া, ষে বাহ লক্ষণগুলি ফুটাইয়া তুলে, তাহা মুখ্যতঃ আমরা চক্ষু দ্বারাই দেখি। হাত দিয়া ধরিতে বা ছুইতে, নাসিক দ্বার আভ্রাণ করিতে, রসনা দ্বারা আস্বাদন করিতে পারি না । এইটকু বিচার করিয়া দেখিলে, এ ক্ষেত্রে রূপ শব্দের প্রয়োগ দুৰ্যনীয় বলিয়া হয় ত বোধ হইবে না । আর একটা কথা। অরূপ আর নিরাকার একই কথা নয় কি ? পরমতত্ত্ব সম্বন্ধে যে আমরা নিরাকার শব্দ ব্যবহার করিয়া থাকি, তাহা একটা বিশেষ ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হইয়া থাকে। এ স্থলে আমরা নিরাকার আর অতীন্দ্রিয় একই অর্থে ব্যবহার করি। ব্ৰহ্মবস্তু নিরাকার, অর্থ এই যে তাহা কোনও ইন্দ্রিয়ের দ্বার গ্রহণ করা যায় না। আমাদের দেশের শাস্ত্রে মনকেও ইন্দ্রিয় বলা হয়, এ কথাটাও এ স্থলে ভুলিলে চলিবে না। সুতরাং নিরাকার বস্তু কেবল ষে চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়ের গ্রাহ নহে, তাহাও নয়, সে বস্তু মন দিয়াও ধরিতে পারা যায় না। এই জন্যই শ্রুতি বলিয়াছেন—“যতো বাচ নিবৰ্ত্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহ”—ইত্যাদি । আর নিরাকায়ের সত্য অর্থ যদি এই হয়, তবে রস-বস্তুকে নিরাকার বলা যায় কি ? কারণ রস-বস্তু যে জাতীয়ই হউক না, তাহ যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ হউক আর নাই বঙ্গদর্শণ [ ১২শ বধ, মাঘ ১৩১৯ হউক, ইঞ্জিয়-জ্ঞানের সঙ্গে একরূপ অঙ্গাঙ্গী সম্বন্ধে আবদ্ধ এ কথাট| অস্বীকার করা অসাধ্য। আমরা যাহাকে রস বলি, ইংরেজিতে তাহাকে ইমোষণস (Emotions) বলিয়া থাকে। এই রস আমাদের বিষয়জ্ঞানের একটা মুখ্য অঙ্গ। ফলতঃ রস ব্যতীত জ্ঞান আপনি কিছুতেই পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। বস্তুপাক্ষাৎকার জ্ঞানের পূর্ববৃত্ত ব্যাপার বা ঘটনা বা কৰ্ম্ম । এই জন্য জ্ঞান মাত্রেই বস্তুতন্ত্র, বস্তুর অধীন। ইহা যেমন সাৰ্ব্বজনীন সত্য ; সেইরূপ এই জ্ঞানও যে নিয়তই জ্ঞাতার অন্তরে কোনও না কোনও রসের সঞ্চার করে, ইহাও সাৰ্ব্বজনীন সত্য। যেখানে বোধ মাত্র জন্মে, কিন্তু রসের সঞ্চার হয় না, সেখানে এই বোধটাকে অত্যন্ত ক্ষীণ, আছে কি না এমন মনে করিতে হইবে। বোধ যেখানেই পরিস্কট, সেখানেই তারই সঙ্গে সঙ্গে রদের সঞ্চারও অনিবাৰ্য্য। আর রস যেখানে ফুটে, সেখানে অবশুম্ভাবীরূপে কৰ্ম্মচেষ্টাও প্রকাশিত হইবেই হইবে। আর বোধ, রস, চেষ্টা এই ত্রিপাদে জ্ঞান পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। এই তিনের সঙ্গতি ও সামঞ্জস্ত যেখানে হয়— “অর্থাৎ বোধ যেখানে তার যথাবিহিত রসের সঞ্চার করে, এই রস যেখানে তার যথাযোগ্য চেষ্টাকে জাগাইয়া তুলে,--আর ইহার তিনে মিলিয়। যেখানে পরস্পরে পরস্পরের র্যাথার্থ সম্বন্ধে সাক্ষ্য দান করে, সেখানেই সত্যের প্রতিষ্ঠা হয়। এই কথাটা ভাৰিয়। দেখিলেও রসের সঙ্গে দেহীর পক্ষে একদিকে ইন্দ্ৰিয়বোধের ও অন্যদিকে কৰ্ম্মচেষ্টার সম্বন্ধ যে কত ঘনিষ্ঠ ও অঙ্গাঙ্গী, ইহা বুঝিতে বড়