পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२९ প্যারীচাঁদ মিত্রের লেখা সম্বন্ধে বঙ্কিমবাবু বলিয়াছেন,— “যে ভাষা সকল বাঙ্গালির বোধগম্য এবং সকল বাঙ্গালি কর্তৃক ব্যবহৃত প্রথমে তিনিই তাহা গ্রন্থ প্রণয়নে ব্যবহার করিলেন। এবং তিনিই প্রথমে ইংরাজি ও সংস্কৃতের ভাণ্ডার পূৰ্ব্বগামী লেখকদিগের উচ্ছিষ্টাবশেষ অনুসন্ধান না করিয়া স্বভাবের অনন্ত ভাণ্ডার হইতে আপনার বরণীয় উপদান সংগ্ৰহ করিলেন । এবং “আলালের ঘরের দুলাল’ নামক গ্রন্থে এই উভয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল। আলালের ঘরের দুলাল’ বঙ্গভাষায় চিরস্থায়ী ও চিরস্মরণীয় হইবে। আলালের ঘরের দুলাল দ্বারা বাঙ্গল সাহিত্যের যে উপকার হইয়াছে, অন্ত কোন বাঙ্গল গ্রন্থের দ্বারা সেরূপ হয় নাই, এবং ভবিষ্যতে হইবে কি না সন্দেহ । “উহাতেই প্রথম এই বাঙ্গলা দেশে প্রচারিত হইল যে, বাঙ্গল সৰ্ব্বজনমধ্যে কথিত এবং প্রচলিত, তাহাতে গ্রন্থ রচনা করা যায়, সে রচনা সুন্দরও হয় এবং যে সৰ্ব্বজন-হৃদয়গ্রাহিতা সংস্কৃতানুযায়িনী ভাষার পক্ষে দুলভ, এ ভাষার তাহ সহজ গুণ । আর র্তাহার দ্বিতীয় অক্ষয় কীৰ্ত্তি এই যে, তিনিই প্রথমে দেখাইয়াছিলেন যে, সাহিত্যের প্রকৃত উপাদান আমাদের ঘরেই আছে ; তাহার জন্য ইংরাজি বা সংস্কৃতের কাছে ভিক্ষা চাহিতে হয় না। তিনিই প্রথম দেখাইলেন যে, যেমন জীবনে তেমনই সাহিত্যে ঘুরের সামগ্ৰী যত মুন্দর, পরের সামগ্ৰী তত সুন্দর হয় না। তিনিই প্রথমে দেখাইলেন যে, যদি সাহিত্যের দ্বারা দেশকে উন্নত করা বায়, তবে বাঙ্গলা 来源 亲 亲 বঙ্গদর্শন [ ১২শ বর্ষ, চৈত্র, ১৩১৯ দেশের কথা লইয়াই সাহিত্য গড়িতে হইবে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের জাতীয় সাহিত্যের আদি আলালের ঘরের দুলাল। প্যারীচঁাদ মিত্রের এই দ্বিতীয় অক্ষয় কীৰ্ত্তি। অতএব বাঙ্গলা সাহিত্যে প্যারীচাদের স্থান অতি উচ্চ ” বিশুদ্ধ সহজ বাঙ্গলায় সুন্দর গদ্য হয়, প্যারীচাঁদ হইতে ইহা শিথিয়াছিলাম। র্তাহার সঙ্গে কালীপ্রসন্ন সিংহের নাম করিতেই হইবে। বঙ্কিমবাবু মিত্রজার গ্রন্থ দেখাইয়৷ “রত্নোদ্ধার” করিতেছিলেন, তখন র্তাহার কালীপ্রসন্নের কথা বলিবার প্রয়োজন হয় নাই, —আমাদিগকে এখন বলিতে হইবে। আমরা যখন নিতান্ত বালক, তখন “হুতোম প্যাচার নক্সা” প্রকাশিত হইল। তাহার ভাষার ভঙ্গিতে, রচনার রঙ্গেতে একেবারে মোহিত হইয়াছিলাম। তখন হইতে বুঝিয়াছি, আমাদের সহজ মাতৃভাষায় বাজি খেলান যায়, তুবড়ি ফুটান যায়, ফুল কাটান যায়, ফুয়ারা ছোঁটান যায়। আমাদের মাতৃভাষা সৰ্ব্বাঙ্গে রঙ্গময়ী । তাহার পরের যুগের প্রবর্তক, প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক-সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র। তিনি কালী প্রসার, প্যারীচাঁদের গ্রাম্যতাদোষ পরিহার পূৰ্ব্বক ভাষাকে একটু বিশুদ্ধ করিয়া তাহার প্রবাহ বৃদ্ধি করিলেন । সেই পথে যে বাঙ্গল৷ ভাষা এখনও চলিতেছে এবং সেই পন্থা যে বাঙ্গলার সমগ্র সাহিত্য-সেবীর অনুমোদিত, তাহার জলন্ত প্রমাণ–এই সভায় সমবেত সাহিতা-সেবিগণ কর্তৃক আমার মত অকৃতি লেখককে সভাপতিত্বে নিয়োগ। " প্যারীচাদের গ্রন্থ-সমালোচনা অবসরে বঙ্কিমবাবু যাহা বলিয়াছেন, সেই কথাগুলি