পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্য। ] নামক এক ব্রাহ্মণ ছিলেন। তিনি হরিদাসের কথায় ক্রুদ্ধ হইয়া বলির উঠলেন “আপনার এই ভাবুকের সিদ্ধান্ত গ্রাহ্য করিবেন না। কোটজন্মে ব্ৰহ্মজ্ঞানে যে মুক্তিলাভ হয়, এই ব্যক্তি বলিতেছে, নামাভাসে সেই মুক্তি হয়, এও কি কখন সম্ভব ?” হরিদাস কহিলেন “শাস্ত্রেই ত আছে নামাভাস মাত্রে মুক্তি হয় । ভক্তি-সুখের নিকট মুক্তি অতি তুচ্ছ বলিয়াই ভক্তগণ মুক্তি প্রার্থন করেন না।' গোপাল তখন বলিয়া উঠিল, নামাভাসে যদি মুক্তি হয়, তবে আমার নাক কাটিব।” হরিদাসও দৃঢ়স্বরে বলিয়া উঠিলেন “যদি না হয় তবে আমার নাক কাটিব ।” সভাসদ সকলে গোপাল চক্রবর্তীকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন। গোপাল জমিদারের অরিন্দাগিরি করিত। সে তৎক্ষণাৎ কৰ্ম্মচু্যত হইল। কিন্তু গরিদাস কহিলেন “আমার এ ব্যক্তির উপর বিন্দুমাত্রও ক্রোধ নাই ; তর্কনিষ্ঠ ব্যক্তিগণ নামের মহিমা বুঝিতে পারে না।” ইহার কিছুকাল পরে গোপাল কৃষ্ঠব্যাধিগ্রস্ত হইয়াছিল । কিছুকাল চাদপুরে অবস্থান করিয়া হরিদাস কুনিয়া গ্রামে গমন করিলেন এবং অল্পকালের মধ্যেই স্থানীয় সকলেরই শ্রদ্ধা ও ভক্তি • প্রাপ্ত হইলেন। কিন্তু তথাকার মুসলমান কাজী তাহাকে নানাপ্রকারে উৎ পীড়িত করিতে লাগিল এবং অবশেষে বাদশাহের নিকট র্তাহার নামে এই বলিয়া অভিযোগ' করিল যে, তিনি মুসলমানধৰ্ম্মত্যাগ করিয়া হিন্দুধৰ্ম্ম গ্রহণ করিয়াছেন। বাদশাহ লোক পঠাইয়া হরিদাসকে ধরিয়া লইয়া গেলেন। “কৃষ্ণ কৃষ্ণ” বলিতে বলিতে নিমাই-চরিত্র ԳՖԳ হরিদাস বাদশাহের দরবারে উপস্থিত হইলেন । হরিদাস বন্দিশালায় প্রেরিত হইলেন। তথায় অনেক বড় বড় লোক আবদ্ধ ছিলেন, তাহার সাধু দেখিয়া প্রণাম করিলে, হরিদাস কহিলেন “যেরূপ আছ তেমনি থাক।” বন্দিগণ আশীৰ্ব্বাদচ্ছলে এই অভিসম্পাত শুনিয়া বিষঃ হুইলেন। তখন হরিদাস গ্লুঙ্গিলেন “আমি আশীৰ্ব্বাদই করিয়াছি । এই বন্দিশালায়— হিংসা নাই, প্রজার পীড়ন নাই, এখানে আছে কেবল বিপন্নের শরণ শ্রীকৃষ্ণের আশ্রয়ভিক্ষ । আমি আশাব্বাদ করিয়াছি এই বন্দি-অবস্থায় তোমরা যেরূপ একান্ত মনে শ্রীকৃষ্ণের আশ্রয় গ্ৰহণ করিয়াছ—বন্ধনমুক্ত হইয়াও তোমরা তদ্রুপই একাগ্র ভাবে হরি গুণ ভজনা কর।” পর দিন হরিদাস বাদশাহ-দরবারে নীত হইল—বাদশাহ প্রথমতঃ তাহাকে সমৃন্মানে অভ্যর্থনা করিলেন, এবং অতি মিষ্ট্র বচনে তাহাকে হিন্দুয়ানী ত্যাগ করিয়া ইসলাম ধৰ্ম্মের গৌরব রক্ষা করিবার জন্ত উদ্বুদ্ধ করিতে লাগিলেন । কিন্তু হরিদাস বাদশাহের বচন শুনিয়া হাসিতে হাসিতে বলিয়া উঠিলেন “আহে। বিষ্ণুমায়।” অনন্তর হিন্দু ও মুসলমানের যে একই ঈশ্বর, এবং সেই ঈশ্বরের প্রেরণাতে যে তিনি হরিনাম গ্রহণ করিয়াছেন, বাদশাহকে তাহা বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন। বাদশাহ হরিদাসের কথা শুনিয়া প্রথমে কতকটা শান্ত হইলেন বটে – কিন্তু ধৰ্ম্মান্ধ কাজীর প্ররোচনায় অবশেষে হরিদাসকে কহিলেন, ইস্লামামুমোদিত আচরণ অবলম্বন - না করিলে তিনি তাহার শাস্তি বিধান করিবেন ; হরিদাস নিৰ্ভীক