পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বাদশ খণ্ড.djvu/৭৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২শ সংখ্যা ] সেই গোফার নিম্নদেশে এক বিষধর সর্প বাস করিত। অনেকে সেই গোফায় হরিদাসের দর্শন লাভার্থ গমন করিয়া সেই বিষধরের গাত্রনিঃস্থত তীব্র জ্বালা অনুভব করিত। কিন্তু কারণ অনুমান করিতে পারিত না । অবশেষে কয়েক জন বৈদ্য গোফা পর্য্যবেক্ষণ করতঃ প্রকৃত কারণ অবগত হইয়া হরিদাসকে সেই গোফা ত্যাগ করিতে অনুরোধ করিলেন । হরিদাস অনুরোধ শুনিয়া কহিলেন “অনেক দিন যাবত আমি এই গুহায় বাস করিতেছি, কিন্তু কোনও দিন কোন জ্বালা অনুভব করি নাই । তবে তোমরা যখন এখানে আসিতে পারিতেছ না, তখন এ গুহা ত্যাগ করাই কৰ্ত্তব্য। দেখি যদি মহানাগ এই গুহায় নিশ্চিতই থাকেন, তাহা হইলে আগামী কল্যই তিনি ইহা ত্যাগ করিয়া যাইবেন । যদি না যান তখন অন্যত্র যাইব ।” সেই দিন সন্ধ্যাকালে সকলে দেখিতে পাইল, এক ভীষণ সৰ্প গর্ত হইতে উঠয়া দেশাস্তরে চলিয়া গেল । “ডঙ্ক’ নামক এক শ্রেণীর নৰ্ত্তক সৰ্ব্বাঙ্গে অহিভূষণ ধারণ করিয়া নৃত্যগীত করিত, এবং জনসাধারণ তাহাদিগকে ভঁয় ও ভক্তি করিত। ফুলিয়া গ্রামে এক গৃহস্থের বাটিতে একদিন ডঙ্কের নৃত্য ও কালীয়দহে কৃষ্ণলীলাবিষয়ক সঙ্গীত হইতেছিল। হরিদাস নিমন্ত্রিত হইয়া তথায় গমন করিয়াছিলেন । কৃষ্ণবিষয়ক সঙ্গীত শ্রবণ করিয়া হরিদাস মূচ্ছিত হইয় পড়েন এবং মূর্চ্ছাভঙ্গে আনন্দে নৃত্যু করিতে থাকেন। নৃত্যপর ডঙ্ক ভাববিষ্ট হরিদাসকে দেখিয়া সসন্ত্রমে সভার একধারে দাড়াইয়াছিল। সেই সভায় এক নিৰ্ব্বোধ নিমাই-চরিত্র ব্রাহ্মণ ছিল। সে হরিদাসের প্রতি সকলের ভক্তি দেখিয়া মনে মনে ভাবিতে লাগিল "হরিনাম করিয়া নৃত্যু করিলেই ত সকলে ভক্তি করে। আমিও যদি হরিদাসের মত বিহ্বল ভাব দেখাইতে, পারি, আমাকেও সকলে ভক্তি করিবে।” এই ভাবিয়া সে ভবাবেশের ভাণ করিয়া স্কুলুষ্ঠিত হইল। কিন্তু এবার ডস্ক স্বীয় নৃত্যের প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করিয়া রুষ্ট হইয়া উঠিল এবং সেই নিৰ্ব্বোধ ব্রাহ্মণকে ধরিয়া নিদারুণ প্রচার করিতে লাগিল। প্রচারে জর্জরিত ব্রাহ্মণ “বাপ বাপ” বলিয়া পলায়ূন করিল। তখন সকলে ব্রাহ্মণকে প্ৰহারের কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, ডস্ক কহিলেন “ও লোকটী ভাবাবেশের ভাণ করিয়াছিল, তাই তাহাকে প্রগর করিলাম। উহার এত বড় স্পর্দ্ধা যে হরিদাসের সমান হইতে চায়। কৃষ্ণ র্যাহার সৃদয়ে নিরবধি ভক্তিডোরে আবদ্ধ, তিলদ্ধের জন্য র্যাঙ্গর সঙ্গ সুশ্রিয় করিয়া লোক কৃষ্ণপদ প্রাপ্ত হয়, মূৰ্খ ব্রাহ্মণ তাহার প্রাপ্য সন্মানে লোভ করে । জাতিকুল নিরর্থক সবে বুঝাইতে । জন্মিলেন নীচকুলে প্রভুর আজ্ঞাতে ॥ অধম কুলেতে যদি বিষ্ণুভক্ত হয়। তথাপি সেই সে পূজ্য সৰ্ব্বশাস্ত্রে কয়। উত্তম কুলেতে জন্মি শ্রীকৃষ্ণে না ভজে । কুলে তার কি করিবে, নরকেতে মজে। এ সকল বেদবাক্যের সাক্ষী দেখাইতে । জন্মিলেন হরিদাস অধম কুলেতে ॥” হরিদাস উচ্চকীৰ্ত্তন করিতেন। কীৰ্ত্তনদ্বেষিগণ র্তাহাকে নানারূপ পরিহাস করিত। এক দুমুখ ব্ৰাহ্মণ এক দিন তাহাকে কহিল “হরিদাস, মনে মনে কি হরিনাম জপ করা