পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা। ] , চোখের বালি । ১২১ রাজলক্ষ্মী বিশ্বাস করিলেন না। এ কি কখনো সম্ভব হয় ? fr জিজ্ঞাসা করিলেন, “কাল মহীন কখন্‌ গেল ?” আশা সঙ্কুচিত হইয়া কহিল—“জানি না ।” e রাজলক্ষ্মী অত্যন্ত রাগিয়া উঠিয়া কহিলেন, “তুমি কিছুই জান না! কচি খুকী ! তোমার সমস্ত চালাকি !” আশারই আচরণে ও স্বভাবদোষেই যে মহেন্দ্র গৃহত্যাগী হইয়াছে, এমতও রাজলক্ষ্মী তীব্রস্বরে ঘোষণা করিয়া দিলেন । আশা নতমস্তকে সেই ভৎসনা বহন করিয়া নিজের ঘরে গিয়া কঁাদিতে লাগিল । সে মনে মনে ভাবিল--"কেন যে আমাকে আমার স্বামী একদিন তাল বাসিয়াছিলেন, তাহা আমি জানি না এবং কেমন করিয়া যে তাহার ভালবাসা ফিরিয়া পাইব, তাহাও আমি বলিতে পারি না।” মে লোক ভালবাসে, তাহাকে কেমন করিয়া খুসি করিতে হয়, তাহা হৃদয় আপনি বলিয়া দেয় ; কিন্তু যে ভালবাসে না, তাহার মন কি করিয়া পাইতে হয়, আশা তাহার কি জানে! যে লোক অন্তকে ভালবাসে, তাছার নিকট ংহইতে সোহাগ লইতে যাওয়ার মত এমন নিরতিশয় লজ্জাকর চেষ্টা সে কেমন করিয়া করিবে ? সন্ধ্যাকালে বাড়ীর দৈবজ্ঞঠাকুর এবং তাহার ভগিনী আচাৰ্য্যঠাকরুণ আসিয়াছেন। ছেলের গ্রহশাস্তির জন্ত রাজলক্ষ্মী ইহাদিগকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিলেন। রাজলক্ষ্মী একবার বোমার কোষ্ঠী এবং হাত দেখিবার জন্য দৈবজ্ঞকে অনুরোধ করিলেন এবং সেই উপলক্ষ্যে আশাকে উপস্থিত করিলেন । পরের কাছে নিজের দুর্ভাগ্য-আলোচনার সঙ্কোচে একান্ত কুষ্ঠিত হইয়া অাশা কোনমতে তাহার হাত বাহির করিয়া বসিয়াছে, এমন-সময় রাজলক্ষ্মী তাহার ঘরের পাশ্বস্থ দীপহীন বারন্দা দিয়া মৃদু জুতার শব্দ পাইলেন---কে যেন গোপনে চলিয়া যাইবার চেষ্টা করিতেছে । রাজলক্ষ্মী ডাকিলেন— “কে ও ?” প্রথমে সাড়া পাইলেন না। . তাহার পর আবার ডাকিলেন—“কে যায় গে৷ ” তখন নিরুত্তরে মহেন্দ্র ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিল। আশা খুসি হইবে কি, মহেন্দ্রের লজ্জা দেখিয়া লজ্জায় তাহার হৃদয় ভরিয়া গেল । মহেন্দ্রকে এখন নিজের বাড়ীতেও চোরের মত প্রবেশ করিতে হয় ! দৈবজ্ঞ এবং আচাৰ্য্যঠাকরুণ বসিয়া আছেন বলিয়া তাহার আরও লজ্জা হইল । সমস্ত পৃথিবীর কাছে নিজের স্বামীর জন্ত যে লজ্জা, ইহাই আশার দুঃখের চেয়েও যেন বেশি হইয়া উঠিয়াছে। রাজলক্ষ্মী যখন মৃদুস্বরে বেীকে বলিলেন, বেীমা, পাৰ্ব্বতীকে বলিয়া দাও, মহিনের খাবার গুছাইয়া আনে,” তখন আশা কহিল, “মা, আমিই আনিতেছি।” বাড়ীর দাসদাসীদের দৃষ্টি হইতেও সে মহেন্দ্রকে ঢাকিয়া রাখিতে চায়। এদিকে আচাৰ্য্য ও তাহার ভগিনীকে দেখিয়া মহেন্দ্র মনে মনে অত্যন্ত রাগ করিল। তাহার মাতা ও স্ত্রী দৈবসহায়ে তাহাকে বশ করিবার জন্ত এই অশিক্ষিত