পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©b~ লেখক বলেন, পরিশ্রম বাচাইবার কল তৈরি করিতে তোমরা যে বুদ্ধি খাটাইতেছ, তাহাতে সমাজের কল্যাণ হইতেছে না । তাছাতে ধনবৃদ্ধি হইতেছে সন্দেহ নাই, কিন্তু সেটা যে মঙ্গলই, আমার মতে, এমন কথা মনে করিবার হেতু নাই। ধন কিরূপে ভাগ হয় এবং সেই ধনে জাতির চরিত্রের উপরে কি ফল হয়, তাছাই চিন্তার বিষয়। সেইটে যখন চিন্তা করি, তখন বিলাতি পদ্ধতি চীনে ঢুকাইবার প্রস্তাবে মন বিগড়িয়া যায়। এই তোমরা যতদিন ধরিয়া যন্ত্রতন্ত্রের শ্ৰীবৃদ্ধিসাধনে লাগিয়াছ, ততদিনে, তোমাদের শ্রমজীবীদিগকে সঙ্কটে ফেলিয়। তাহা হইতে উদ্ধারের কোন একটা ভাল উপায় বাহির কর নাই। ইহা আশ্চর্য্যের বিষয় নছে ; কারণ টাকা করা তোমাদের প্রধান লক্ষা, জীবনের আর সমস্ত লক্ষ্য তাহার নীচে । চীনেম্যানের কাছে এটা কিছুতেই উৎসাহজনক ঠেকে না। বিলাতি কারবারের প্রণালী যদি চীনদেশে ফালাও করিরা তোলা যায়, তবে তাহার চল্লিশকোটি অধিবাসীর মধ্যে যে নিশ্চিত বিশৃঙ্খল জাগিয়া উঠিবে—অন্তত আমি ত তাহাকে অত্যন্ত আশঙ্কার চক্ষে দেখি ! তোমরা বলিবে, সে বিশৃঙ্খল৷ সাময়িক, আমি ত দেখিতেছি, তোমাদের দেশে তাহ চিরস্থায়ী। আচ্ছা সে কথাও যাক, তাহাতে আমাদের লাভটা কি ? আমরা ত তোমাদেরই মত হইরা যাইব । সে সম্ভাবনা কি অবিচলিতচিত্ত্বে কল্পনা করা যায় ? তোমাদের লোকেরা না হয় আমাদের চেয়ে আরামে থায় বেশি, পান করে বেশি, নিদ্রা যায় বেশি–কিন্তু তাহার বঙ্গদর্শন । [২য় বর্ষ, আষাঢ় । প্রফুল্ল নয়, সন্তুষ্ট নয়, শ্রমামুরাগী নয়, ৬াহারা আইন মানে না। তাহীদের কৰ্ম্ম শরীরমনের পক্ষে অস্বাস্থ্যকর,—তাহারা প্রকৃতি হইতে বিচুত হইয়া, ভূমিখণ্ডের অধিকার হইতে বঞ্চিত হইয়া সহরে এবং কারখানার মধ্যে ঠাসাঠাসি করিয়া থাকে। আমাদের কবিগণ –লেখকগণ ধনের মধ্যে, ক্ষমতার মধ্যে, নানাপ্রকার উদ্যোগের মধ্যে,কল্যাণ অনুসন্ধান করিতে উপদেশ দেন নাই, কিন্তু মানবজীবনের অত্যন্ত সরল ও বিশ্বব্যাপী সম্বন্ধগুলির সংযত, মুনিৰ্ব্বাচিত, সুমার্জিত রসাস্বাদনের পথে আমাদের মনকে তাহারা প্রবৰ্ত্তিত করিয়াছেন । এই জিনিষটা আমাদের আছে—এটা তোমরা আমাদিগকে দিতে পার না, কিন্তু এটা তোমরা অনায়াসে অপহরণ করিতে পার। তোমাদের কলের গর্জনের মধ্যে ইহার স্বর শোনা যায় না, তোমাদের কারখানার কালে ধোয়ার মধ্যে ইহাকে দেখিতে পাওয়া যায় ন,—তোমাদের বিলাতি জীবনযাত্রার ঘূর্ণ এবং ঘর্ষণের মধ্যে ইহা মরিয়া যায় । যে কেজো লোকদিগকে তোমরা অত্যন্ত খাতির করিয়া থাক, যখন দেখি তাহারা ঘণ্টার পর ঘণ্টায়, দিনের পর দিনে, বৎসরের পর বৎসরে তাহাদের জাতীর মধ্যে আনন্দহীন অগত্য-প্রেরিত খাটুনিতে নিযুক্ত, যখন দেখি তাহাদের দিনের উৎকণ্ঠীকে তাহারা স্বল্পাবশিষ্ট অবকাশের মধ্যে টানিয়া আনিতেছে, এবং পরিশ্রমের দ্বারা ততটা নহে, যতটা শুষ্ক সঙ্কীর্ণ দুশ্চিস্তা" দ্বারা আপনাকে জীর্ণ করিরা ফেলিতেছে, তখন—এ কথা স্বীকার করিতেই হইবে যে, আমাদের