পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুর্থ সংখ্যা । ] চোখের বালি । Sసి গঙ্গার ধাৰুে একটি বাগান লইয়াছেন— সেখানে এককালে পাঁচজনকে আশ্রয় দিবার বন্দোবস্ত হইয়াছে, ইত্যাদি । ৰিনোদিনী এই খবরটা পড়িয়াছে ! পড়িয় তাহার কিরূপ ভাব হইল ? নিশ্চয় তাহার মনটা সেইদিকে পালাই-পালাই করিতেছে। শুধু সেজন্ত নহে, মহেন্দ্রের মন এই কারণে আরও ছট্‌ফট্‌ করিতে লাগিল যে,বিহারীর এই সঙ্কল্পে তাহায় প্রতি বিনোদিনীর ভক্তি আরো বাড়িয়া উঠিবে। বিহারীকে মহেন্দ্ৰ মনে মনে “হাৰাগ’ বলিল, বিহারীর এই কাজটাকে “হুজুগ” বলিয়। অভিহিত করিল—কহিল, “লোকের হিতকারী হইয়া উঠিবার হুজুগ বিহারীর ছেলেবেলা হইতেই আছে ;”—মহেন্দ্র নিজেকে বিহারীর তুলনায় একান্ত অকপট অকৃত্রিম বলিয়া বাহবা দিবার চেষ্টা করিল – কহিল, “ঔদার্ষ্য ও আত্মত্যাগের ভড়ঙে মূঢ়লোক ভুলাইবার চেষ্টাকে আমি ঘ্নণা করি।” কিন্তু হায়, এই পরম নিশ্চেষ্ট অকৃত্রিমতার মাহাত্ম্য লোকে অর্থাৎ বিশেষ কোন একটি লোক হয় ত বুঝিবে না। মহেন্দ্রের মনে হইতে লাগিল, বিহারী যেন তাহার উপরে এ-ও একটা চাল চালিয়াছে । বিনোদিনীর পদশব্দ গুনিয়া মহেন্দ্র তাড়াতাড়ি কাগজখানা মুড়িয়া তাহার উপর চাপিম্বা বসিল । স্নাত বিনোদিনী ঘরে প্রবেশ করিলে, মহেন্দ্র তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বিন্মিত হইয়া উঠিল । তাহার কি এক অপরূপ পরিবর্তন হইয়াছে। সে যেন এই কদিন আগুন জালিয়া তপস্তা করিতেছিল। তাছার শরীর ক্লশ হইয়া গেছে— এবং সেই কৃশতা ভেদ করিয়া তাহার পাণ্ডুবৰ্ণ মুখে একটি দীপ্তি বাহির হইতেছে। , বিনোদিনী বিহারীর পত্রের আশা ত্যাগ করিয়াছে। নিজের প্রতি বিহারীর নিরতিশয় অবজ্ঞা কল্পনা করিয়া সে আছোরাত্রি নিঃশব্দে দগ্ধ হইতেছিল। এই দাহ হইতে নিস্কৃতি পাইবার কোন পথ তাহার কাছে ছিল না । বিহারী যেন তাহাকেই তিরস্কার করিয়া পশ্চিমে চলিয়া গেছে—তাহার নাগাল পাইবার কোন উপায় বিনোদিনীর হাতে নাই। কৰ্ম্মপরায়ণা নিরলসা বিনোদিনী কৰ্ম্মের অভাবে এই ক্ষুদ্র বাসার মধ্যে ষেন রুদ্ধশ্বাস হইয়া উঠিতেছিল—তাহায় সমস্ত উদ্যম তাহার নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করিয়া আঘাত করিতেছিল। তাহার সমস্ত ভাবী জীবনকে এই "প্রেমহীন, কৰ্ম্মহীন, আনন্দহীন বাসার মধ্যে,এই রুদ্ধ গলির মধ্যে চিরকালের জন্ত আবদ্ধ কল্পনা করিয়া তাহার বিদ্রোহী প্রকৃতি আয়ত্তাতীত অদৃষ্টের বিরুদ্ধে যেন আকাশে মাথা ঠুকিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিতেছিল। যে মূঢ় মহেন্দ্র বিনোদিনীর সমস্ত মুক্তির পথ চারিদিক্ হইতে রুদ্ধ করিয়া তাহার জীবনকে এমন সঙ্কীর্ণ করিয়া তুলিয়াছে, তাহার প্রতি বিনোদনীর ঘৃণা ও বিদ্বেষের সীমা ছিল না । বিনুেদিনী বুঝিতে পারিয়াছিল, সেই মহেন্দ্রকে সে কিছুতেই আর দূরে ঠেলিয়া রাখিতে পরিবে না। এই ক্ষুদ্র বাসায় মহেন্দ্র তাহার কাছে ঘেষিয়া সম্মুখে আসিয়া বসিবে—প্রতিদিন অলক্ষ্য আকর্ষণে তিলে তিলে তাহার দিকে অধিকতর অগ্রসর হইতে থাকিবে,—এই অন্ধকূপে, এই সমাজ