পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা । ] শকুন্তলা । さbrs ভন, তাহাও কবি সংবরণ করিয়াছেন— তাহার কাব্যলক্ষ্মী তাহাকে নিষেধ করিয়া বলিয়াছে— g ন খলু ন গলু বাণঃ সন্নিপাত্যেteয়মস্মিন মৃদুনি মুগশরীরে পুষ্পরাশবিবাগ্নিঃ ! দুষ্যস্ত যখন কাব্যের মধ্যে বিপুল বিক্ষেণভের কারণ লইয়া মত্ত হইয়া প্রবেশ করিলেন, তখন তাহার অস্তরের মধ্যে এই ধ্বনি উঠিল— মৰ্ত্তে বিঘ্নস্তপস ইল নে ভিন্নসারঙ্গসূথে ধৰ্ম্মারণা প্রবিশন্তি গজঃ সান্দন লোকভীত । তপস্তার মূৰ্ত্তিমান বিয়ের স্থায় গজরাজ ধৰ্ম্মারণ্যে প্রবেশ করিয়াছে । এইবার বুঝি কাব্যের শাস্তিভঙ্গ হয়—কালিদাস তখনই ধৰ্ম্মারণ্যের, কাব্যকাননের, এই মূৰ্ত্তিমান বিঘ্নকে শাপের বন্ধনে সংযত করিলেন— ইহাকে দিয়। তাহার পদ্মবনের পঙ্ক আলোড়িত করিয়৷ তুলিতে দিলেন না। যুরোপীয় কবি হইলে এইখানে সাংসারিক সত্যের নকল করিতেন-–সংসারে ঠিক যেমন, নাটকে তাহাই ঘটাইতেন । শাপ বা অলৌকিক ব্যাপারের দ্বারা কিছুই আবৃত করিতেন না । যেন তাহাদের পরে সমস্ত দাবী কেবল সংসারের, কাব্যের কোন দাবী নাই । কালিদাস সংসারকে কাব্যের চেয়ে বেশি খাতির করেন নাই—পথে-ঘাটে যাহা ঘটিয়া থাকে,তাহাকে নকল করিতেই হইবে, এমন দাসখৎ তিনি কাহাকেও লিখিয়া দেন নাই—কিন্তু কাব্যের শাসন কবিকে মানিতেই হইবে। কাব্যের প্রত্যেক ঘটনাটিকে সমস্ত কাব্যের সহিত র্তাহাকে খাওয়াইয়া লইতেই হইবে। তিনি সত্যের আভ্য স্তরিক মূৰ্ত্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখিয়া সত্যের বাহমূৰ্ত্তিকে তাহার কাব্যসৌন্দর্য্যের সহিত সঙ্গত করিয়া লইয়াছেন। তিনি অনুতাপ ও তপস্তাকে সমুজ্জল করিয়া দেখাইয়াছেন,কিন্তু পাপকে তিরস্করিণীর দ্বারা কিঞ্চিৎ প্রচ্ছন্ন করিয়াছেন । শকুন্তলা প্রথম হইতে শেষ পৰ্য্যস্ত যে একটি শান্তি, সৌন্দর্য্য ও সংযমের দ্বারা পরিবেষ্টিত, এরূপ না করিলে তাহ। বিপর্য্যস্ত হইয়া যাইত । সংসারের নকল ঠিক হঠত, কিন্তু কাব্যলক্ষ্মী সুকঠোর আধা ত পাচতেন । কবি কালিদাসের করুণনিপুণ লেখনীর দ্বারা তাঙ্ক। কখনই সম্ভবপর হইত না । কবি এইরূপে বাহিরের শান্তি ও সৌন্দর্য্যকে কোথা ও অতিমাত্র ক্ষুব্ধ ন করিয়া তাহার কাব্যের আভ্যন্তরিক শক্তিকে নিস্তব্ধতার মধ্যে সৰ্ব্বদা সক্রিয় ও সবল করিয়া রাখিয়াছেন । এমন কি, র্তাহার তপোবনের বহিঃপ্রকৃতি ও সৰ্ব্বত্র অস্তরের কাজেই যোগ দিয়াছে। কখনো বা তাহা শকুন্তলার যৌবনলীলায় আপনার লীলামাধুর্য্য অর্পণ করিয়াছে, কখনো বা মঙ্গলআশাব্বাদের সহিত আপনার কল্যাণমন্মর মিশ্রিত করিয়াছে, কখনো বা বিচ্ছেদকালীন ব্যাকুলতার সহিত আপনার মূক বিদায়বাক্যের করুণ জড়িত করিয়া দিয়াছে এবং অপরূপ মন্ত্রবলে শকুন্তলার চরিত্রের মধ্যে একটি পবিত্ৰ নিৰ্ম্মলতা—একটি স্নিগ্ধ মাধুর্য্যের রশ্মি নিয়ত বিকীর্ণ করিয়া রাখিয়াছে । এই শকুন্তলাকাব্যে নিস্তব্ধতা যথেষ্ট আছে, কিন্তু সকলের চেয়ে নিস্তব্ধভাবে অথচ ব্যাপকভাবে কবির তপোবন এই কাব্যের মধ্যে