পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম সংখ্যা । ] চোখের বালি । ৩৬১ মহেন্দ্র। তবে, এখন তুমি কি করিতে চাও ? আশা । আগে বিহারি-ঠাকুরপো আসিয়া একবার দেখিয়া যান--তিনি বেরূপ পরামর্শ দিবেন, তাহাই করিব । বলিতে বলিতে বিহারী আসিয়া পড়িল । আশা তাহাকে ডাকিয়া পাঠাইয়াছিল , বিহারী। বোঠা’ণ, ডাকিয়াছ ? মা ভাল আছেন ত ? আশা বিহারীকে দেখিয়া যেন নির্ভর পাইল । কছিল, “তুমি যাওয়ার পর হইতে মা যন আরো চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছেন । প্রথমদিন তোমাকে না দেখিয়া আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘বিহারী কোথায় গেল ?’ আমি বলিলাম, ‘তিনি বিশেষ কাজে গেছেন, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ফিরিবার কথা আছে।’ তাহার পর হইতে তিনি থাকিয়াথাকিয় চমকিয়া উঠিতেছেন। মণে কিছুই বলেন না, কিন্তু ভিতরে-ভেতরে যেন কাহার অপেক্ষা করিতেছেন । কাল তোমার টেলিগ্রাম পাইরা জানাইলাম, আজ তুমি আসিবে গুনিয়া তিনি আজ তোমার জন্ত বিশেষ করিয়া খাবার আয়োজন করিতে বলিয়াছেন । তুমি যাহা যাহা ভালবাস, সমস্ত আনিতে দিয়াছেন, সম্মুখের বারান্দায় রাধিবার আয়োজন করাইয়াছেন, তিনি ঘরে হইতে দেখাইয়া দিবেন। ডাক্তারের নিষেধ কিছুতেই শুনিলেন না। আমাকে এই খানিকক্ষণ হইল ডাকিয়া বলিয়া দিলেন, ‘বেীম,তুমি লিঞ্জের হাতে সমস্ত রণধিবে,— আমি আজ সামনে বসাইয়। বিহারীকে খাওয়াইব ।” t শুনিয়া রিহারীর চোখ ছলছল করিয়া আসিল । জিজ্ঞাসা করিল—“মা আছেন কেমন ?” আশা কহিল, “তুমি একবার নিজে দেখিবে এস—আমার ত বোধ হয়, ব্যামে। আরো বাড়িয়াছে।” তখন বিহারী ঘরে প্রবেশ করিল। মহেন্দ্র বাহিরে দাড়াইয়। অশ্চির্য্য হইয়। গেল। আশা বাড়ীর কর্তৃত্ব অনায়াসে গ্রহণ করিয়াছে—সে মহেন্দ্রকে কেমন সহজে ঘরে ঢুকিতে নিষেধ করিল ! না করিল সঙ্কোচ, না করিল অভিমান ! মহেন্দ্রের বল আজ কতখানি কমিয়া গেছে ! সে অপরাধী, সে বাহিরে চুপ করিয়া দাড়াইয়া রহিল— মার ঘরেও ঢুকিতে পারিল না। তাহার পরে ইহাও আশ্চৰ্য্য—বিহারীর সঙ্গে আশা কেমন অকুষ্ঠিতভাবে কথাবার্তা কহিল । সমস্ত পরামর্শ তাঁহারই সঙ্গে ! সেই আজ সংসারের একমাত্র রক্ষক, সকলের সুহৃৎ । তাহার গতিবিধি সৰ্ব্বত্র, তাহার উপদেশেই সমস্ত চলিতেছে। মহেন্দ্র কিছুদিনের জন্ত যে জায়গাটি ছাড়িয়া চলিয়া গেছে, ফিরিয়া আসিয়া দেথিল, সে জায়গা ঠিক আর তেমনটি নাই ! বিহারী ঘরে ঢুকিতেই রাজলক্ষ্মী জুহার করুণচক্ষু তাছার মুখের দিকে রাখিয়া কহিলেন, “বিহারি, ফিরিয়াছিস্ ?” বিহারী কহিল—“হঁ। মা, ফিরিয়া আসি ठनाम ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “তোর কাজ শেষ হইয়া গেছে”—বলিয়া তাহার মুখের দিকে একাগ্ৰদূষ্টিতে চাহিলেন।