পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টম সংখ্যা । ] তৈলবট । 8३ॐ ঘাটে মহারাজার প্রকাও বজরা বাধা রহিয়াছে। বজরার বর্ণনা যাহারা জানিতে ইচ্ছা করেন, তাহাদিগকে “দেবী চৌধুরাণীর" বজরার বর্ণনা পাঠ করিতে অনুরোধ করি । রাজার বজরার উপর ৩৪জন সশস্ত্র সিপাহী বন্দুক ঘাড়ে করিয়া চিত্রিত পুত্তলিকার লুtয় দণ্ডায়মান রহিরাছে । বজরার ভিতরের সকল কক্ষই উজ্জল আহ্লোকে আলোকিত । তাহারই একটি কক্ষের মধ্যে বহুমূল্য বিছানার উপর মহারাজা ও ইন্দ্রনারায়ণ সমাসীন রহিয়াছেন। কক্ষমধ্যে আর কেহ নাই । অতি মৃদুস্বরে উভয়ের কথাবাৰ্ত্ত হইতেছে। রাজার নিকট একটি সুবর্ণনিৰ্ম্মিত মস্তাধার ও সুবর্ণমণ্ডিত হংসপুচ্ছলেখনী পড়িয়৷ আছে । তখন ইংরাজ বণিকৃগণ এ দেশে খাগড়া ও কঞ্চির পরিবর্তে হংসপুচ্ছলেখনীর ব্যবহার প্রচার করিয়াছেন। ২/৩দও কথাবাৰ্ত্তার পর মহারাজ একখণ্ড কাগজ লষ্টয় তাহাতে লিখিলেন ঃ– শ্রীশ্রীyজগদ্ধাত্রী মাতা সহায় ।— yধৰ্ম্ম ইসাদি।-- স্বধৰ্ম্মবৎসূল ধাৰ্ম্মিকবর অশেযগুণিগণগণনাগ্রগণ্য স্বনামখ্যাত পুরুষবর শ্ৰীলশ্ৰযুক্ত ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ফরাসী কোম্পানী বাহাদুরের সদর দেওয়ান মহাত্মা মহাশয় স্বচরিতেষু – নবাব নাজিম সাহেবের দপ্তরখানায় বর্তমান শকের রাজস্ববাবদ আমি আপনকার নিকট সাড়েসাতলক্ষ তত্ত্বা কঙ্গ লইয়। এই খৎ লিখিয়া দিলাম। বৎসরের মধ্যে ইহা মায়ু মুদ পরিশোধ করিব, ইহাতে অদ্যথা হইবে না । ইহার কারণ ধৰ্ম্ম সাক্ষী ইতি।-- রায় রাজশ্ৰীকৃষ্ণচন্দ্ৰ শৰ্ম্মণ: " থৎ লিখিয়া রাজ যথারীতি স্বীয় নামাঙ্কিত মোহর অঙ্কিত করিয়া ২।৩বার ভাল করিয়া পড়িয়া চৌধুরী মহাশয়ের হন্তে সমর্পণ করিলেন । চৌধুরী মহাশয় সসন্মানে উহ! গ্রহণ করিয়া একবার পাঠ করিলেন এবং ললাটে স্পর্শ করাইয়া সঘত্বে উত্তরীয়প্রাস্তে বাধিয়া রাখিলেন । এমন-সময় ফরাসীদুর্গ “দে অল্যা” হইতে কামানের শব্দ হইল। রাজা ঈষৎ চমকিত হইয়। উঠিলেন, চৌধুরী মহাশয় বলিলেন, “রাত্রি এক প্রহর অতীত হইল।” পরে উভয়ে বজরা হইতে কুলে অবতরণ করিয়া হামশম্পাচ্ছাদিত ভূমিখণ্ডে বিচরণ করিতে লাগিলেন। ২জন সিপাহি নিঃশব্দে তাহাদের অমুসরণ করিতে লাগিল । জ্যোৎস্নাময়ী রজনীতে গঙ্গার তীরে নবদুৰ্ব্বামণ্ডিত ক্ষেত্রে তাহারা নিঃশব্দে পাদচারণা করিতে লাগিলেন । নানাকথার পর মহারাজা বলিলেন—“চৌধুরী মহাশয়, আজকাল আপনাকে প্রায় বিমর্ষ দেখি কেন ? কোন প্রকার শারীরিক বা মানুসিক পীড়াগ্রস্ত হইয়াছেন কি ?” দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া ইন্দ্রনারারণ বলিলেন, “মহারাজ, আপনার জনকজননীর শ্ৰীচরণাশীৰ্ব্বাদে শারীরিক কোনও পীড়া নাই, কিন্তু সম্প্রতি একটা সামাজিক কলঙ্কে কলঙ্কিত হইয়া বড় ক্ষুন্ন হইয়াছি।”