পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রথম সংখ্যা । } মববর্ষ। 8S পাই, তাহারা ইতরভাব প্রাপ্ত হইয়। খ্ৰীশ্ৰষ্ট হয়। কারণ, কাজকে ছোট জানিয়া তাহ করিতে বাধ্য হইলে, মানুব নিজে ছোট হয় । " আমাদের লক্ষ্মীগণ যতই সেবার কৰ্ম্মে ব্রতী হন,--তুচ্ছ কৰ্ম্মসকলকে পুণ্যকৰ্ম্ম বলিয়া সম্পন্ন করেন,— অসামান্ত্যতাহীন স্বামীকে দেবতা বলিয়। ভক্তি করেন, ততই র্তাহার শ্রীসৌন্দর্য্যে-পবিত্রতায় মণ্ডিত হইয়। উঠেন—তাহাদের পুণ্যজ্যোতিতে চতুৰ্দ্দিকৃ হইতে ইতরত। অভিভূত হইয়া পলায়ন করে । যুরোপ এই কথা বলেন যে, সকল মামুখেরই সব হইবার অধিকার আছে—এই ধারণাতেই মানুষের গৌরব । কিন্তু বস্তুতই সকলের সব হইবার অধিকার নাই, এই অতি সত্য কথাটি সবিনয়ে গোড়াতেই মানিয়া লওয়া ভাল । বিনয়ের সহিত মানিয়া লইলে তাহার পরে আর কোন অগৌরব নাই। রামের বাড়ীতে শু্যামের কোন অধিকার নাই, এ কথা স্থিরনিশ্চিত বলিয়াই রামের বাড়ীতে কর্তৃত্ব করিতে না পারিলেও, শু্যামের তাহাতে লেশমাত্র লজ্জার বিষয় থাকে না। কিন্তু শুামের যদি এমন পাগলামি মাথায় ক্টোটে যে, সে মনে করে, রামের বাড়ীতে একাধিপত্য করাই তাহার উচিত—এবং সেই বৃথাচেষ্টায় সে বারংবার বিড়ম্বিত হইতে থাকে, তবেই তাহার প্রত্যহ অপমান ও দুঃখের সীমা থাকে না। আমাদের দেশে, স্বস্থানের নির্দিষ্ট গওঁীর মধ্যে সকলেই আপনার নিশ্চিত অধিকারটুকুর মৰ্য্যাদা ও শাস্তি লাভ করে বলিয়াই, ছোট সুযোগ পাইলেই বড়কে so খেদাইয়ু যায় না, এবং বড়ও ছোটকে সৰ্ব্বদা সৰ্ব্বপ্রযত্নে খেদাইয়া রাখে না। যুরোপ বলে, এই সন্তোষই, এই জিগীষার অভাবই, জাতির মৃত্যুর কারণ। তাহা যুরোপীয় সভ্যতার মৃত্যুর কারণ বটে, কিন্তু আমাদের সভ্যতার তাহাই ভিত্তি। যে লোক জাহাজে আছে, তাহার পক্ষে যে বিধান, যে লোক ঘরে আছে, তাহারও পক্ষে সেই বিধান নহে। যুরোপ যদি বলে, সভ্যতামাত্রেই সমান এবং সেই বৈচিত্র্যহীন সভ্যতার আদর্শ কেবল যুরোপেই আছে, তবে তাহার সেই স্পৰ্দ্ধাবাক্য শুনিয়াই তাড়াতাড়ি আমাদের ধনরত্নকে ভাঙা-কুল দিয়া পথের মধ্যে বাহির করিয়া ফেলা সঙ্গত হয় না । বস্তুত সন্তোবের বিকৃতি অাছে বলিয়াই অত্যাকাঙ্ক্ষার যে বিকৃতি নাই, এ কথা কে মানিবে ? সন্তোষে জড়ত্ব প্রাপ্ত হইলে যদি কাজে শৈথিল্য আনে, ইহা সত্য হয়, তবে অত্যাকাঙ্ক্ষার দম বাড়িয়া গেলে যে ভূরিভূরি অনাবস্তক ও নিদারুণ অকাজের সৃষ্টি হইতে থাকে, এ কথা কেন ভুলিব ? প্রথমটাতে যদি রোগে মৃত্যু ঘটে,তবে দ্বিতীয়টাতে অপঘাতে মৃত্যু ঘটিয়া থাকে। এ কথা মনে রাথী কর্তব্য, সন্তোষ এবং আকাঙ্ক্ষা ছয়েরই মাত্রা বাড়িয়া গেলে বিনাশের কারণ জন্মে। অতএব সে আলোচনা ছাড়িয়া দিয়া ইহা স্বীকার করিতেই হইবে, সস্তোব, সংযম, শাস্তি,ক্ষম,এ সমস্তই উচ্চতর সভ্যতার অঙ্গ। ইহাতে প্রতিযোগিতা-চকুমকির ঠোকাঠুকিশব ও ফুলিঙ্গবর্ষণ নাই, কিন্তু হীরকের স্নিগ্ধ নিঃশব জ্যোতি আছে। সেই শব্দ ও ফুলিঙ্গকে এই ধ্ৰুবজ্যোতির চেয়ে মূল্যবান