পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8& বঙ্গদশন । [ বৈশাখ । মনে করা বৰ্ব্বরতামাত্র। যুরোপীয় সভ্যতার বিদ্যালয় হইতেও যদি সে বৰ্ব্বরতা প্রস্বত হয়, তবু তাহা বৰ্ব্বরতা । আমাদের প্রকৃতির নিভৃততম কক্ষে যে অমর ভারতবর্ষ বিরাজ করিতেছেন, আজি নববর্ষের দিনে তাহাকে প্রণাম করিয়া আসি লাম। দেখিলাম, তিনি ফললোলুপ কৰ্ম্মের অনন্ত তাড়ন হইতে মুক্ত হইয়া শান্তির ধ্যানাসনে বিরাজমান, অবিরাম জনতার জড়পেষণ হইতে মুক্ত হইয়া আপন একাকিত্বের মধ্যে আসীন, এবং প্রতিযোগিতার নিবিড় সংঘর্ষ ও ঈর্ষাকালিমা হইতে মুক্ত হইয়া তিনি আপন অবিচলিত মর্য্যাদার মধ্যে পরিবেষ্টিত । এই যে কৰ্ম্মের বাসনা, জনসংঘের সংঘাত ও জিগীষার উত্তেজনা হইতে মুক্তি, ইহাই সমস্ত ভারতবর্ষকে ব্রহ্মের পথে, ভয়হীন শোকহীন মৃত্যুহীন পরম মুক্তির পথে স্থাপিত করিয়াছে। য়ুরোপ যাহাকে “ফ্রীডাম্বলে সে মুক্তি ইহার কাছে নিতান্তই ক্ষীণ । সে মুক্তি চঞ্চল, দুৰ্ব্বল, ভীরু, তাহা স্পৰ্দ্ধিত, তাহ নিষ্ঠুর,—তাহ পরের প্রতি অন্ধ, তাহ ধৰ্ম্মকেও নিজের সমতুল্য মনে করে না, এবং সত্যকে ও নিজের দাসত্বে বিকৃত করিতে চাহে ! তাহা কেবলি অন্তকে আঘাত করে, এইজন্য অন্তের আঘাতের ভয়ে রাত্রিদিন বৰ্ম্মে-চৰ্ম্মে, অস্ত্রে-শস্ত্রে কণ্টকিত হইয়া বসিয়া থাকে-তাহা আত্মরক্ষার জন্ত স্বপক্ষের অধিকাংশ লোককেই দাসত্বনিগড়ে বদ্ধ করিয়া রাখে—তাহার অসংখ্য সৈন্ত মমুয্যত্বভ্রষ্ট ভীষণ যন্ত্রমাত্র। এই দানবীয় "ফ্রীডাম্‌” কোনকালে ভারতবর্ষের তপস্তার চরম বিষয় ছিল না—কারণ আমাদের জনসাধারণ অন্তসকল দেশের চেয়ে যথার্থভাবে স্বাধীনতর ছিল" এখনো আধুনিক-কালের ধিক্কারসত্ত্বেও এই"ফ্রীডাম্‌” আমাদের সর্বসাধারণের চেষ্টার চরমতম লক্ষ্য হইবে না। না-ই হইল— এই ফ্রীডtমের চেয়ে উন্নততর-বিশালতর যে মহত্ত্ব— যে মুক্তি ভারতবর্ষেপ্ত তপস্তার ধন, তাহ। যদি পুনরায় সমাজের মধ্যে আমরা আবাহন করিয়া আনি,—অন্তরের মধ্যে আমরা লাভ করি, তবে ভারতবর্ষের নগ্নচরণের ধূলিপাতে পৃথিবীর বড়-বড় রাজমুকুট পবিত্র হইবে। এইখানেই নববর্ষের চিন্ত আমি সমাপ্ত করিলাম। আজ পুরাতনের মধ্যে প্রবেশ করিয়াছিলাম, কারণ, পুরাভনই চিরনবীনতার অক্ষয় ভাণ্ডার । আজ যে নবকিসলয়ে বনলক্ষ্মী উৎসববস্ত্র পরিয়াছেন, এ বস্ত্রখানি আজিকার নহে-যে ঋষিকবিরা ত্ৰিষ্টভছন্দে তরুণী উষার বন্দনা করিয়াছেন, র্তাহারাও এই মন্থণ-চিকুণ পীতহরিৎ বসনখানিতে বনশ্ৰীকে অকস্মাৎ সাজিতে দেখিয়াছেন— উজ্জয়িনীর পুরোস্তানে কালিদাসের মুগ্ধদৃষ্টির সম্মুখে এই সমীরকম্পিত কুমুমগন্ধি অঞ্চলপ্রান্তটি নবস্থৰ্য্যকরে ঝলমল করিয়াছে। নূতনত্বের মধ্যে চিরপুরাতনকে অনুভব করিলে তবেই অমেয় যৌবনসমুদ্রে আমাদের জীর্ণ জীবন স্নান করিতে পায় । আজিকার এই নববর্ষের মধ্যে ভারতের বহুসহস্র পুরাতন বর্ষকে উপলব্ধি করিতে পারিলে, তবেই আমাদের দুর্বলতা, আমাদের লজ্জা,আমাদের লাঞ্ছনা, আমাদের দ্বিধা দূর হইয়া যাইবে ধার করা ফুলে-পাতায় গাছকে সাজাইলে তাহা আজি থাকে, কাল থাকে না । সেই