পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৬ বঙ্গদর্শন । [ বৈশাখ । শোভা সহসা তাহাতে ঈষৎ লোহিতাভ হইয়া উঠিল । দেখিয়া জলপানরত হরিণের লাফাইয়া লাফাইয়া তীরে উঠিল এবং সবেগে পাহাড়ের দিকে ছুটিয়া চলিল । সুহৃদ সিং পশ্চাতে চাহিয়া দেখিলেন, কেহ র্তাহার বন্দুক লইয়া আসিতেছে না । র্তাহার অস্ত্রের মধ্যে সম্বল—সুদৰ্শন একখণ্ড যষ্টিমাত্র । তথাপি স্থান-কাল বিস্তুত হইয়া তিনি পলায়নপর মৃগযুথের অণুসরণ করিয়া চলিলেন। মৃগয়ার মাদকতা এবং তন্ময়তা র্তাহাকে সৰ্ব্বতোভাবে অধিকৃত করিতেছিল । গোধূলির তরল ছায়া অপসারিত করিয়া ত্রয়োদশীর চন্দ্রকিরণ ক্রমশ ফুটিয়া উঠিতেছিল। হরিণের দল দৃষ্টিরেখা অতিক্রম করিয়া পাহাড়ের অন্তরালে লুকায়িত হইল, তথাপি অণুসরণকারীর চৈতন্ত নাই। ক্রমে তিনি এক নিবিড় শালবনের প্রান্তে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পদচিহ্লাঙ্কিত স্বল্পায়তন গ্রাম্যপথ বনমধ্যে তিৰ্য্যগ - গতিতে অন্তৰ্হিত হইয়াছে, জ্যোৎস্নালোক দেখিয়া কখন-কখন শ্বেতসৰ্প বলিয়া ভ্রম জন্মে। বনফুলের মধুর গন্ধে পুলকিত হইয়া সুহৃদ সিং সেই পথে অগ্রসর হইতেছিলেন। বাহির হইতে বন যেরূপ নিবিড় মনে হয়, ভিতরে তাহার কিছুই নহে। ছোট-বড় শালতরু শ্রেণী-সম্বদ্ধ হইয়া দণ্ডায়মান আছে, তাহীদের কোমল কিসলয়ে চন্দ্ররশ্মি প্রতিভাত হইয়া ঘন ছায়ান্ধকার পৰ্য্যন্ত উজ্জ্বল করিয়া তুলিয়াছে। একটিমাত্র পাপিয়া থাকিয়া-থাকিয়া স্বরলহরীতে সমগ্র বনানী প্রতিধ্বনিত করিতেছে। কিছুদূর গিয়া সুহৃদ সিং বুঝিতে পারি লেন,গ্ৰাম অদূরে এবং গ্রামবাসীরা বসন্তোৎসবে মাতিয়াছে। বৃক্ষ এবং গুল্ম ছায়ায় আত্মগোপন করিয়া বালক এবং যুবকেরা বিকৃতকণ্ঠে গৃহপ্রাঙ্গণে উপবিষ্ট বালিকা এবং যুবতীদের উদ্দেশে বিদ্রুপ ও গালি বর্ষণ করিতেছিল, এবং কেই তাহাদিগকে ধরিয়া লাঞ্ছিত করিতে অগ্রসর হইলে ছুটিয়া পলাইতেছিল। যুগপৎ অনেকগুলি কণ্ঠ হইতে একই প্রকারের বিকৃত স্বর ও ভাষা ধ্বনিত হওয়ায় স্পষ্ট বুঝা যাইতেছিল, দুৰ্ম্মথের क%" রোধপূৰ্ব্বক মদনপূজার আবাহন করিতেছে। শালের জঙ্গল উৰ্ত্তীর্ণ হইয়া সুহৃদ সিং লোকালয়ে আসিয়া পৌছিলেন, তাহাকে দেখিবামাত্র সে বিকট কণ্ঠস্বর সহসা মিলাইয়া গেল এবং “ছোড়ার” দলকে দ্রুত পলাইতে দেখিয়া যুবতীরা সমস্বরে টিটুকারি দিয়া উঠিল। 變 সুহৃদ সিং বুঝিলেন, তিনি ভুইয়াদের বস্তিতে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন। জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলেন, গ্রামের নাম তিলকপুর এবং জমীদারের আবাসগৃহ অদূরবর্তী। চিরশত্রুর অধিকারযুধ্যে অকস্মাৎ আসিয়া পড়িয়াছেন ভাবিয়া কিছুক্ষণের জন্ত তিনি চিস্তাযুক্ত হহলেন । কিন্তু সে নিমেষের জন্ত । কোথাকার বাবুসাহেব আসিয়াছেন দেখিয়া যুবতীদের একজন তাহার জন্ত এক খাটিয়া অনিয়া বিছাইয়া দিল, এবং অন্তের রাসরচনাপূৰ্ব্বক তাহার সম্মুখে নৃত্যগীতের আয়োজন করিল। সকলে সমস্বরে ধরিল— ১ । “এ গুম হেরি খেলপ এ তোমারি সাথ, আবে ন ছোড়ল গায়ব বুরা বাত।