পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

را را অনুমান করিবার কারণ নাই। শাক্যসিংহের পুৰ্ব্বে "শ্রমণ"শব্দ বা বৌদ্ধমত ভারতবর্ষে অপরিজ্ঞাত ছিল না। সে কথ। বৌদ্ধসাহিত্যেও স্বীকৃত । শাক্যসিংহই প্রথম বুদ্ধ,—তৎপুৰ্ব্বে আর কেহ “শ্রমণ” বা বুদ্ধ ছিলেন না, এরূপ কথা শাক্যশিষ্যগণ স্বীকার করেন না । পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণ শাক্যসিংহকে প্রথম বুদ্ধ কল্পনা করিয়া, ভারতীয় প্রাচীন সাহিত্যে বৌদ্ধমতবিজ্ঞাপক যৎকিঞ্চিৎ আভাস পাইবামাত্র, তাহাকে শাক্যোক্তর কালের গ্রন্থ বলিয়া সিদ্ধাস্ত করিয়া নানা ভ্রমপ্রমাদে পতিত হইয়াছেন । পাণিনিস্থত্রে, পতঞ্জলির মহাভাষ্যে, কাত্যায়ুনের বৃত্তিনিচয়ে যে সকল শব্দ ও উদাহরণ ব্যবহৃত হইয়াছে, তাহা বৈদিক জ্ঞান, কৰ্ম্ম ও আচারব্যবহারের প্রাধান্তের পরিচয় প্রদান করে । গৌড়ীয় হিন্দুসাম্রাজ্যে পাণিমির ব্যাকরণ পরম সমাদরে অধীত ও অধ্যাপিত হইত। কোন পুরাকালে এই শিক্ষাপ্রণালী প্রচলিত হইয়াছিল, তাহ নির্ণয় করা অসম্ভব হইলেও, শাক্যসিংহের আবির্ভাবের বহুপুৰ্ব্ব হইতেই গৌড়ীয় জনপদ বে বৈদিক মতে অনুরক্ত ছিল, তাহtয় অনেক প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়. অশোকের শাসনসময়ে মগধসাম্রাজ্যের অন্তান্ত স্থানের ন্তায় বঙ্গভূমিতেও নানাস্থানে বৌদ্ধচৈত্য নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল । তাহ খৃঃপূৰ্ব্ব সাদ্ধদ্বিশত বৎসরের কথা। তৎকালে পশ্চিমোত্তরে কাশ্মীর ও পূৰ্ব্বাঞ্চলে পেগুবৰ্দ্ধন ও উৎকল পৰ্য্যস্ত মগধরাজ্য বিস্তৃতিলাভ করিয়াছিল। কবি কল্পণ রাজতরঙ্গিণীর বঙ্গদর্শন। [ ?छाले । প্রথম তরঙ্গে অশোককে কাশ্মীরাধিপতি বলিয়াই বর্ণনা করিম গিয়াছেন!* অশোক বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হইয়া স্বরাষ্ট্রে সৰ্ব্বত্র বৌদ্ধমত প্রচারিত করিবার চেষ্টা করায়, শাক্যমত জলে-স্থলে পরিব্যাপ্ত হয়। পাটলিপুত্রের রাজধানী ও নালন্দার বৌদ্ধবিশ্ববিদ্যালয়ের ন্তায় আরও একটি স্থান বৌদ্ধমতবিস্তারের কেন্দ্র বলিয়া পরিচিত হইয়াছিল । তাহার নাম তাম্রলিপ্তি । বঙ্গদেশান্তর্গত সমুদ্রতটাবস্থিত তাম্রলিপ্তির নাম ইতিহাসে চিরবিথ্যাত হইয়া রহিয়াছে । তথায় বৌদ্ধবিদ্যালয় জ্ঞানভাণ্ডার উন্মুক্ত করিয়া রাখিয়াছিল ; বাণিজ্যভাণ্ডারের সঙ্গে তাহ সমুদ্রপথে দ্বীপোপদ্বীপে বাহিত হইয়া বৌদ্ধপ্রভাব দিগদিগন্তে সুবিস্তৃত করিয়াছিল। তাম্রলিপ্তি বৌদ্ধমতের অমুরক্ত হইলেও, অন্তান্ত স্থানে বৈদিকমতেরই সবিশেষ প্রাধান্ত ছিল । অশোকশাসনে সমগ্র আর্য্যাবৰ্ত্ত বৌদ্ধমতের সমাদর করার, গৌড়ীয় জনপদই বৈদিকমতের প্রধান আশ্রয়স্থান বলিয়া পরিচিত হইয়াছিল । কামরূপের প্রাচীন রাজ্যে বৌদ্ধমত কদাপি প্রতিষ্ঠালাভ করে নাই। ভাৰ্বতবর্ষের মধ্যে সকল জনপদ যখৰু বৌদ্ধমন্ত্রে দীক্ষিত, একমাত্র কামরূপ তখনও বৈদিকমতের অমু রক্ত। তৎকালে কামরূপেশ্বর বাহুবলে গৌড়জনপদের নানাস্থানে শাসনক্ষমতা পরিচালনা করিতেন। গৌড়েশ্বর ও কামরূপেশ্বরের রাজ্যসীমা করতোরাস্রোতে সুনির্দিষ্ট হইলেও, পরস্পরের রাজ্যাক্রমণ করা অনেকদিন পর্য্যন্ত প্রচলিত ছিল ।

  • রাজতরঙ্গিণী ॥ ১১০১ ।