পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সপ্তম-সংখ্যা । ] আর কোন বহুমূল্য অলঙ্কার ক্রয় করিয়া দিতে হইবে । ক্রোধাগারের কথাটা তাহার স্মরণই ছিল না ! থাকিবার কথাও নয়। রাণী চন্দ্রাবতী বিবাহের দিন হইতে আজ পর্য্যন্ত কথন এ ঘরে প্রবেশ করেন নাই পূৰ্ব্বকালে কবে কোন রাণী মানাগারে প্রবেশ করিয়াছিলেন, কেহ তাহার সন্ধান রাথিত না । পূৰ্ব্ব পুরুষেরা কতকি রাখিয়া গিয়াছিলেন, কত সামগ্রী, কত গুহের ব্যবহার, কালে উঠিয়া গিয়াছিল । ঠাহীদের কালে এমনি কঠিন নিয়ম ছিল যে, গৃহবিপর্যয় ঘটবার সাধ্য ছিল না। “শয়নাগার,” “বিশ্রামাগার,” “ভোজনাগার”, “ক্রীড়াগার” প্রভৃতি চিহূিত গুহ ছিল । “মানাগার” আর বড় একটা কাহার ও মনে ছিল না । বিলাসপুর পাৰ্ব্বত্যপ্রদেশ, পূরে রাজগৃহে নরবলির প্রথা ছিল । সে কত কালের কথা, তাহা কাহার ও স্মরণ নাই। প্রাসাদ হইতে কিছু দূরে “বলিমূহ” ছিল, এখন ভাঙিয়া ভূমিসাং হইবার উপক্রম হইয়াছে । শয়ন গুহে শয়ন করিবার সময় ও ভোজনগৃহে ভোজন করিবার সময় রাজা প্রতাপসিংহের মনে কোনরূপ দ্বিধা উপস্থিত হইত না ; কিন্তু মানাগারে রাণী প্রবেশ করিয়াছেন শুনিয়া ভাবিলেন, ‘পূৰ্ব্ব পুরুষেরা এ গৃহের স্বষ্টি করিলেন কেন ?” পূৰ্ব্বপুরুষের তেমন কিছু অবিবেচনার কfঞ্জ করেন নাই, কারণ শয়ন-ভোজন যেমন নিত্যপ্রয়োজন, অভিমান সেরূপ ন হইলে ও অবগুম্ভাবী। স্বতন্ত্র স্থান না থাকিলে শয়নভোজন-রন্ধন-কথোপকথন প্রভৃতির স্থান মুক্তামালা ।

  • Rసిసి

মানে অভিমানে ভাসিয়া যাইত। সেইজন্ত পূৰ্ব্বপুরুষেরা, বুদ্ধি করিয়া, আহার-নিদ্রার মত ক্রোধ-অভিমানেরও একটা স্বতন্ত্র স্থান করিয়া দিয়াছিলেন । পুরুষানুক্রমে সেই গৃহে রাণীপরম্পরার ক্রোধাভিমান সঞ্চিত, পুঞ্জীকৃত হুইতেছিল । - সাত পাচ ভাবিয়া অবশেষে রাজা পুৰ্ব্বপুরুষদিগের সনাতন-নিয়মানুসারে ক্রোধাগারের অভিমুখে গমন করিলেন । ভঁাহাকে দেখিয়া দাসী প্রভৃতি সকলে সরিয়া গেল, কিন্তু অন্তরাল হইতে শ্রবণলোলুপ বহুতর রমণী উৎকর্ণ হইয়া রহিল। লজ্জায়, বিরক্তিতে, রাজার মুখ রক্তবর্ণ হইয়া উঠিয়াছিল। দ্বারের সম্মুখে আসিয়া দ্বারে অল্প অল্প করাঘাত করিলেন। অন্মুট, কম্পিত স্বরে কহিলেন, “রাণী, দ্বার মুক্ত কর ।” s সে দ্বারের পশ্চাতে যে অভিমানের অর্গল ছিল, তাহ করাঘাতে কেন, বজ্রাঘাতে ও খুলিবার নহে। কোন উত্তর না পাইয়া রাজা আর করাঘাত করিলেন না, কেবল কণ্ঠবলের উপর নির্ভর করিলেন । সে বল ও কোমলতায়, চীৎকারে নহে । রাজা বলিলেন, “রাণী, বাড়ীমদ্ধ লোক কি মনে করিবে ! আমার অপরাধ হইয়াছে, তুমি দুয়ার খোল, ষাহা চাও, আনিয়া দিব ।” রাণী ভিতর হইতে বলিলেন, “অধিকক্ষণ কেহ কিছু মনে করিবে না। রাত্রি হইলেই সব চুকিয়া যাইবে।” “কি চুকিয়া যাইবে ? “দড়ী দেখিলে যে সাধ হয়, তাহাই মিটাইব ! মুক্তার মালা গলার দিবার সাধ