পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় প্রথম খণ্ড.djvu/৩৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[অষ্টম-সংখ্যা] সংস্কৃত-ব্যাকরণের ইতিবৃত্ত।


শাকল্যের গ্রন্থ হইতে এই গ্রন্থের অনেক উপাদান সংগ্ৰহ করিয়াছেন। পাণিনি স্বীয় গ্রন্থে যে ৩/৪টি শাকল্যের সূত্র উদ্ধৃত করিয়াছেন, সেগুলি ঋকপ্রাতিশাখ্যে দেখিতে পাওয়া যায়। গোল্ডষ্টকর (Goldstucker) বলেন,ঋকপ্রাতিশাখ্য পাণিনির পরে বিরচিত হইয়াছিল।তাহার প্রধান যুক্তি এই যে, ইহার বর্ণনীয় বিষয় পাণিনি অপেক্ষা বিস্তৃত ও সম্পূর্ণ। কিন্তু উভয় পুস্তকের সাদৃশ্য অতি অল্পই দেখিতে পাওয়া যায় । “ন” কিরূপে “ণ”তে ও “স” কিরূপে “ষ”তে (ঋকৃ-প্রাe ৫ম অ• ) পরিবর্তিত হয়, এবং ‘অ’-‘ই’-‘উ-এর দীর্ঘ-উচ্চারণ বিধি, ( ঋকপ্রাতিশাখ্য_ ৭ম, ৮ম ও ৯ম অধ্যায়) পাণিনি ও প্রাতিশাখ্যকার একই নিয়মে সমাধান করিয়াছেন । তাহার মতে পাণিনির অসম্পূর্ণতা ঋগ্বেদ প্রাতিশাখ্যে সম্পূর্ণতা লাভ করিয়াছে । উল্লিখিত ণত্ব-ষত্ব ও হ্রস্ব-দীর্ঘ বিধান পাণিনিতে অসম্পূর্ণ থাকিলেও ঋকপ্রাতিশাখ্য কেবলমাত্র ঋগ্বেদের শাকলশাখার সহিত সম্বন্ধযুক্ত ; সুতরাং শুদ্ধ ঐ শাখার প্রয়োজনীয় বিবয় শৌনক পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিবৃত করিয়াছেন । পাণিনির ব্যাকরণ বেদের শাখাবিশেষ অথবা আধুনিক সংস্কৃত গ্রন্থবিশেষের জন্য নহে। লৌকিক সংস্কৃতভাষার সম্পূর্ণ একখানি ব্যাকরণ প্রণয়নই তাহার উদ্দেশ্য ছিল । বৈদিক ব্যাকরণ যে তিনি সংক্ষেপে সম্পন্ন করিয়াছেন, তাহার একমাত্র কারণ তাহার পূৰ্ব্ববৰ্ত্তিগণ এ বিষয় বিস্তৃতভাবে আলোচনা করিয়া গিয়াছেন এবং শৌনক সেই পুৰ্ব্ববৰ্ত্তিগণের অন্যতম। ঋকপ্রাতিশাখ্যের দুইপ্রকার টীকা বর্তমান। তন্মধ্যে উবটভট্টের "পার্ষদ-ব্যাখ্যাই” প্রসিদ্ধ। উবটভট্টের নিবাস আনন্দপুরে ( বারাণসী ? ) ছিল। ঋকপ্রাতিশাখ্য আশ্বলায়ন-সূত্র অপেক্ষাও প্রাচীনতর। আশ্বলায়ন শৌনকেরই ছাত্র ছিলেন । ইহা তিন কাণ্ড ও প্রত্যেক কাণ্ড ছয় পটলে বিভক্ত। এই প্রাতিশাখ্যখানি যে বৈদিক যুগ হইতে অপরিবর্তিত ও অপরিবদ্ধিত হইয়া আসিয়াছে,তাহা অনেকেই মনে করেন না ।

কৃষ্ণযজুৰ্ব্বেদের তৈত্তিরীয় প্রাতিশাখ্যে তত মৌলিকতা দৃষ্ট হয় না। অধ্যাপক হুইট্‌নী (Whitney) মনে করেন যে, ইহার অধিকাংশই প্রক্ষিপ্ত । ঋকপ্রাতিশাখ্যের ন্যায় সূত্রগুলি সরল নহে। পারিভাষিক শব্দের প্রয়োগ অতি বহুল। ইহার টীকাকারের নাম উল্লিখিত নাই। তিনি না-কি বররুচি, আত্ৰেয় ও মাহিষেয় নামক এই প্রাতিশাখ্যের টীকাকারগণের টীকা হইতে তাঁহার ভাষ্য সংগ্ৰহ করিয়াছেন। এই টীকায় চতুর্দশ শতাব্দীতে বিরচিত সায়ণাচার্য্যের কালনির্ণয়নামক পুস্তকের উল্লেখ আছে। শুক্লযজুৰ্ব্বেদের বাজসনেয় প্রাতিশাখ্যও পরবত্তী কালের পরিবর্তন-পরিবদ্ধনের হাত হইতে রক্ষা পায় নাই ।কাত্যায়ন ইহার প্রণেতা বলিয়া ইহাকে কাত্যায়নপ্রাতিশাখ্য বলে । ইহার প্রথম অধ্যায়ে সংজ্ঞা ও পরিভাষা, দ্বিতীয় অধ্যায়ে শব্দসকলের উচ্চারণের নিয়ম, তৃতীয়, ও পঞ্চম অধ্যায়ে সংস্কার অর্থাৎ সন্ধির নিয়মামুসারে অক্ষরের ক্ষয়, বৃদ্ধি, পরিবর্তন ও স্বাতন্ত্র্য, ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে বাক্যের অন্তর্গত ক্রিয়া