১২৮ অলিন্দ প্রসারিত –তলদেশে শুভ্র বিশাল ছাদ ; সেই জমির উপর, তুষারগুত্র একটা চাদর পাতা। রক্ষিপুরুষ কেহ নাই, আসবাবুআদিও নাই। অন্তরীক্ষবৎ এই বিমল নিস্তব্ধতার মধ্যে – দুইটিমাত্র সোনালি-গিলুটি-করা একইরুষের কেদার পাশাপাশি স্থাপিত। যিনি একাকী দণ্ডায়মান হইয় হস্ত প্রসারিত করিয়া আছেন, তাহাকে দেখিয়াই চিনিলাম ; —তিনি সেই অশ্বারোহী পুরুষ, যাহার উদ্দেশে সেদিন সারাহ্লে, বনের সন্ন্যাসিক্রয়, স্বকীয় মুখরাগ সম্পাদন করিতেছিল। ইহার পরিচ্ছদ শুভ্র ও সাদাসিধা ; কণ্ঠে নীলমণির হার । এক্ষণে সেই গিলটিকর হালকা চৌকির উপর আমরা উপবেশন করিলাম। দস্তুরমত আদবকায়দার সহিত একজন দোভাষী নিঃশব্দে আমাদের পশ্চাতে আসিয়া দাড়াইল । যায়, এইজন্য যখনইসে কথা কহিতেছে, অম্নি একটা শাদ রেশমের রুমাল নিজের মুখের সম্মুখে ধারণ করিতেছে। এই সতর্কতার কোন প্রয়োজন দেখি না; কেন না, তাহার দন্তপংক্তি বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও তাহার নিশ্বাস বেশ বিশুদ্ধ । মহারাজা স্বল্পভাৰী ; সহজে কেহ ইহার দর্শন পায় না , ; থাপি, ইহাতে কেমনএকটু “মোহিনী" আছে—কেমন-একটি লালিত্য আছে ;—অতীব মার্জিত শিষ্টতার সহিত কেমন-একৃটা সঙ্কোচের ভাব মিশ্রিত— “যাহা বড় বড় লাটদিগের মধ্যেই প্রায় দেখা যায় প্রথমেই তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, র্তাহার দেশে আসিয়া আমি যথোচিত আদরযত্ন পাইয়াছি কি না ;— যে গাড়িঘোড়া তিনি বজাগণ । [ ৬ষ্ঠ ৰখ, আষাঢ় । আমার জন্য পাঠাইয়াছেন, তাহ আমার মনোমত হইয়াছে কি না । এইরূপ নিতান্ত সাধারণধরণের সাদামাট কথা দিয়া আমাদের কথোপকথন আরম্ভ হইল ;-মাঝে-মাঝে থামিয়া যাইতে লাগিল—বাধিয়া যাইতে লাগিল। কেন না, আমাদের উভয়ের স্বাভাবিক ও কৌলিক সংস্কারের মধ্যে আকাশপাতাল প্রভেদ । কিন্তু তাহার পর, যথন যুরোপের কথা উপস্থিত হইল, যে দেশ হইতে আমি আসিয়াছি তাহার কথা উপস্থিত হইল, যে দেশে আমি শীঘ্রই যাইব সেই পারস্তদেশের কথা উপস্থিত হইল,—তখন আমি দেখিতে পাইলাম—যদি আমাদের মধ্যে এই সমস্ত বাধা না থাকিত, তাহা হইলে আমাদের পরস্পরের মধ্যে কত কৌতুহলজনক নূতন নূতন কথার বিনিময় হইতে পারিত।... এই সময়ে একজন আসিয়া মহারাজকে জানাইল,- যেখানে তিন সন্ন্যাসীর বাস, সেই রমণীয় বনে সান্ধ্যভ্রমণার্থ অশ্বারোহণে বাহির হইবার সময় হইয়াছে। আজ সরোবর প্রদক্ষিণ করিয়া, যেখানে হরিণের আসিয়া জড় হয়, সেই বাড়ী পর্য্যন্ত যাইবার কথা । এই ছাদের উপর যে-সকল ভূত্য বড়-বড় প্রাচ্যধরণের বৃহৎ ছত্র মহারাজার মাথার উপর ধরিয়াছিল, তাহার নীচে গিয়াও সেই সব ছত্র ধরিয়া মহারাজকে , ছায়ায়-ছায়ায় রাখিতে লাগিল। নীচে অশ্বারোহী অনুচরবর্গ মহারাজার সহিত যাইবার জন্য প্রস্তুত । আমাকে বিদায় দিবার পূৰ্বেই, তিনি যে নূতন প্রাসাদটি নির্মাণ করাইতেছেন এবং বাহ এথনো শেষ হয় নাই, তাহা আমাকে দেখাইবার জন্ত র্তাহার লোকজনকে আদেশ করি
পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৩৫
অবয়ব