বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/১৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় সংখ্যা। ] শিক্ষাসমস্ত । Ꮌ©Ꮼ খাহীকে ইস্কুলের শিক্ষক করি, তাহাকে এমন করিয়া ব্যবহার করি, যাহাতে তাহার হৃদয়মনের অতি অল্প অংশই কাজে খাটে-ফোনোগ্রাফযন্ত্রের সঙ্গে একখানা বেত এবং কতকটাপরিমাণ মগজ জুড়িয়া দিলেই ইস্কুলের শিক্ষক তৈরি কৰু যাইতে পারে। কিন্তু এই শিক্ষককেই যদি গুরুর আসনে বসাইরা দাও, তবে স্বভাবতই তাহার হৃদয়মনের শক্তি সমগ্রভাবে শিষ্যের প্রতি ধাবিত হইবে । অবশু, তাছার যাহা সাধ্য, তাহার চেয়ে বৈশি তিনি দিতে পরিবেন না, কিন্তু তাহার চেয়ে কম দেওয়াও তাহার পক্ষে লজ্জাকর হইবে। একপক্ষ হইতে যথার্থভাবে দাবী না উথাপিত হইলে অন্তপক্ষে সম্পূর্ণ শক্তির উদ্বোধন হয় না । আজ ইস্কুলের শিক্ষকরূপে, দেশের যেটুকু শক্তি কাজ করিতেছে, দেশ যদি অন্তরের সঙ্গে প্রার্থনা করে, তবে গুরুরূপে তাহার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি খাটিতে থাকিবে । আজকাল প্রয়োজনের নিয়মে শিক্ষকের গরজ ছাত্রের কাছে আসা, কিন্তু স্বভাবের নিয়মে শিষ্যের গরজ গুরুকে লাভ কুর । শিক্ষক দোকানদার, বিদ্যাদান তাহার ব্যবসায় । তিনি খরিদদারের সন্ধানে ফেরেন" ব্যবসাদারের কাছে লোকে বস্তু কিনিতে পারে, কিন্তু তাহার ঋণ্যতালিকার মধ্যে স্নেহ, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠ প্রভৃতি হৃদয়ের সামগ্রী থাকিবে, এমন কেহ প্রত্যাশা করিতে পারে না। এই প্রত্যাশা অনুসারেই শিক্ষক বেতন গ্রহণ করেন ও বিস্তাবস্তু বিক্রয় করেন—এইখানেই ছাত্রের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ । এইরূপ প্রতিকুল অবস্থাতেও অনেক শিক্ষক দেন পাওনার সম্বন্ধ ছাড়াইয় উঠেন—সে র্তাহীদের বিশেষ মহাস্থ্যগুণ। এই শিক্ষকই দি’ জানেন যে, তিনি গুরুর আসনে বসিয়াছেন ; যদি তাহীর জীবনের দ্বারা ছাত্রের মধ্যে জীবনসঞ্চার করিতে হয়, তাহার জ্ঞানের দ্বারা তাহার জ্ঞানের বাতি জালিতে হয়, তাহার স্নেহের দ্বারা তাহার কল্যাণসাধন করিতে হয়, তবেই তিনি গৌরবলাভ করিতে পারেন— তবে তিনি এমন জিনিষ দান করিতে বসেন, যাহা পণ্যদ্রব্য নহে, যাহা মূল্যের অতীত, সুতরাং ছাত্রের নিকট হইতে শাসনের দ্বারা নহে, ধর্শের বিধানে, স্বভাবের নিয়মে তিনি ভক্তিগ্রহণের যোগ্য হইতে পারেন । তিনি জীবিকার অনুরোধে বেতন লুইলেও তাহার চেয়ে অনেক বেশি দিয়া অাপন কৰ্ত্তব্যকে মহিমান্বিত করেন। এবারে বাংলাদেশের বিদ্যালয়গুলির পরে রাজচক্রের শনির দৃষ্টি পড়িবামাত্র কত প্রবীণ এবং নবীন শিক্ষক জীবিকালুদ্ধ শিক্ষকবৃত্তির কলঙ্ককালিম নির্লজ্জভাবে সমস্ত দেশের সম্মুখে. প্রকাশ করিয়াছেন, তাহ কাহারে অগোচর নাই । তাহারা যদি গুরুর আসনে থাকিতেন, তবে পদগৌরবের খাতিরে এবং হৃদয়ের অভ্যাসবশতই ছোট-ছোট ছেলেদের উপরে কন্‌ষ্টেবলি করিয়া নিজের ব্যবসায়কে এরূপ ঘৃণা করিয়া তুলিতে পারিতেন না। এই শিক্ষা-দোকানদারির নীচতা হইতে দেশের শিক্ষককে ও ছাত্রগণকে.কি আমরা রক্ষা করিব না ? কিন্তু এ সকল বিভারিত আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া বোধ করি বৃথা হইতেছে । বোধ হয়, গোড়ার কথাতেই অনেকের