পাতা:বঙ্গদর্শন নবপর্যায় ষষ্ঠ খণ্ড.djvu/৩২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষষ্ঠ সংখ্যা। ] হত্যাপাপলব্ধ সিংহাসনে যে কলঙ্ককালিম লেপন করিলেন, উত্তরকালে বঙ্গোপসাগরের সমগ্র বারিরাশি জাহ্লবীপথে পলাশীক্ষেত্র পর্য্যস্ত উদ্বেল হইয়া তাহার কিয়দংশমাত্র ক্ষালন করিয়াছে। যে সকল কমনীয় গুণ যুগযুগান্তর ধরিয়া হিন্দুস্থানে অনুশীলিত ও ধৰ্ম্মের অঙ্গীভূত হইয়াছে, কৃতজ্ঞতা তাহার অন্যতম। আলীবদ্দীখ। তাহার মূলে কুঠারাঘাত করিয়া মুসলমানরাজধর্মের দৃঢ় ভিত্তি শিথিল করিম দিলেন। তিনি যে আগুন জালিয়া গিয়াছিলেন, তাহ তদীয় স্নেহপুত্তলিকে ভস্মীভূত করিয়া কোথায় নিৰ্ব্বাপিত হইয়াছিল, ইতিহাস তাহার সাক্ষ্য দিতেছে । এইজন্তই বৰ্গীর হাঙ্গামা প্রথমে জয়যুক্ত হইয়াছিল। শিবা প্রসন্ন দাসের মত যে সকল ক্ষমতাশালী হিন্দু তাহার সহায়তায় প্রতিশ্রুত হইয়াছিলেন, নূতন নবাবের বিশ্বাসঘাতকতার সমগ্র বঙ্গ-বিহার-উড়িষ্যা সংক্ষুব্ধ হইয়া না উঠিলে তাহ সম্ভবপর হইত না। স্বাদশ পরিচ্ছেদ । পদাঙ্কনারায়ণ যে শব্দ শুনিয়া বাহিরে আসিল, তাহা মহারাষ্ট্রসেনার সমবেত অশ্বপদধ্বনি নহে। অপরাহ্ল হইতে সেদিন মেলার লোকে যাহা আশঙ্কা করিয়াছিল শেষে তাহাই ফলিয়া গেল। সহসা সুবর্ণরেখানদীতে ভীষণ ಶ আসিল, তাহার গর্জন দিকে দিকে প্রতিধ্বনিত হইতে লাগিল। বর্গীসেন যে সময়ে নদীপার হইয়াছিল, তখন বরাবর চলিয়া গেলে সন্ধ্যার প্রাক্কালে তাহারা উমাপুরে পৌছিতে পারিত। কিন্তু রাইবনীছুর্গ। \ー)〉為 নিদারুণ গ্রীষ্মমধ্যাহ্লে দীর্ঘপথ অতিক্রম করিয়া তাহদের অনেকে শ্রাস্তফ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছিল। সুবর্ণরেখার স্বচ্ছশীতল বরিস্রোতে একবার হাতমুখ ধুইবার লোভ মনেকের পক্ষে অসংবরণীয় হইয়া উঠিল। বিশেষত সৈন্যমধ্যে যাহারা জাতিতে ব্ৰাহ্মণ, সন্ধ্যবন্দনার এমন সুযোগ তাহারা উপেক্ষা করিতে পারিল না। এদিকে শিবপ্রসন্ন ও ভাস্করপণ্ডিত অশ্বরোহণে সুবর্ণরেখার বিশাল সৈকতভূমি পীর হইতেছিলেন। ক্ষীণ চন্দ্রালোকে উভয়ে দেখিতে পাইলেন, এক ব্যক্তি “দণ্ডী দিতে দিতে” মহাদেবস্থানের দিকে অগ্রসর হইতেছে। তখনও অগ্নিবং উত্তপ্ত বালুকারাশির উপর সাষ্টাঙ্গ প্রণত হইতে হইতে উপবাসক্ষীণ ভক্ত প্রাণপণে অভীষ্টস্থানে চলিয়াছে দেখিয়া দুজনে অশ্বরশ্মি সংযত করিলেন। ভাস্করপণ্ডিত বলিলেন, “এমন দৃপ্ত দাক্ষিণাতো আমরা বড় দেখিতে পাই না। কিন্তু ভক্তের ७झे বীরত্বের কাছে সৈনিকের শৌর্যবীৰ্য কি তুচ্ছ!” শিবাপ্রসন্ন কোন উত্তর দিলেন ন, তিনি উন্মুখ হইয় অন্যমনস্ক হইতেছিলেন। তার পর স্বৰূরশ্ৰত বন্যগর্জন বুঝিতে পারিয়া তিনি পণ্ডিতজীকে অবিলম্বে নদীপার হইয়া যাইতে অনুরোধ করিলেন। বলিলেন, “আমি নিজে এই বিপন্ন ভক্তকে এভাবে ছাড়িয়া যাইতে পারি না। কিন্তু এরূপ বিপদে সৰ্ব্বদ আমি অভ্যস্ত, আমার জন্য আশঙ্কা নাই!” পণ্ডিত তথাপি দাসমহাশয়কে নির্বন্ধতিশয়ে বারংবার উপরোধ করিয়া অপেক্ষা করিতেছিলেন, কিন্তু শেষে, তাহার সঙ্কল্প অটল বুঝিয়া যথাসম্ভব বেগে অশ্বচালনা করিলেন।